Ajker Patrika

আল আকসায় ইসরায়েলকে থামাবে কে?

ড. আদনান আবু আমির
আল আকসায় ইসরায়েলকে থামাবে কে?

৫ এপ্রিল অধিকৃত পূর্ব জেরুজালেমের আল আকসা মসজিদে ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনীর নির্দয়ভাবে ফিলিস্তিনি মুসল্লিদের পেটানোর এক ভিডিও ফুটেজ প্রকাশিত
হয়েছে। নৃশংস এই সহিংসতায় ইসলামের তৃতীয় পবিত্রতম স্থানে কমপক্ষে ১২ জন ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন। আর এ ঘটনা ফিলিস্তিনি জনগণের ক্ষোভকে আরও উসকে দিয়েছে।

এ ধরনের সহিংসতা আর যাতে না হয়, সে জন্য গাজা এবং লেবানন থেকে ইসরায়েলে রকেট নিক্ষেপ করা হয়েছিল, কিন্তু ইসরায়েল তা আমলে নেয়নি। পরের দিন আল হারাম আল শরিফে যেখানে আল আকসা মসজিদ অবস্থিত, সেখানে ফের সহিংসতা ঘটায় এবং গাজা ও লেবাননে বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল।

এখন এটা স্পষ্ট যে ফিলিস্তিনে আরেকটি উত্তেজনাকর পরিস্থিতি ঠেকাতে যুক্তরাষ্ট্রের চেষ্টা ব্যর্থ হচ্ছে এবং ফিলিস্তিনিরা কোনোভাবেই এ জন্য দায়ী নয়। উত্তেজনা প্রশমনে ওয়াশিংটন আগ্রহী হলেও ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার মরিয়া চেষ্টার কাছে তা সফল হচ্ছে না। আর এ কারণেই অধিকৃত পূর্ব জেরুজালেমের বাইরেও সহিংসতা ছড়িয়েছে এবং অস্থিতিশীলতা তৈরি হয়েছে।

মার্কিন কূটনীতি ব্যর্থ
এক বছরের বেশি সময় ধরে অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে উত্তেজনা বিরাজ করছে। ইসরায়েলের নিরাপত্তা বাহিনী যখন ফিলিস্তিনের শহর ও গ্রামগুলোতে অবিরাম সহিংস অভিযান চালিয়েছে; তখন সশস্ত্র ফিলিস্তিনিরা প্রতিরোধে সক্রিয় হয়েছে, বিশেষ করে জেনিন ও নাবলুসে। 
জাতিসংঘ ২০২২ সালকে ১৬ বছরের মধ্যে অধিকৃত পশ্চিম তীরের জন্য সবচেয়ে ভয়াবহ বছর বলে অভিহিত করেছে। কারণ ওই বছর ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর হামলায় ৩০ শিশুসহ কমপক্ষে ১৭০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে আরও ৯ হাজার মানুষ। ২০০০ সালের পর এই বছরের প্রথম দুই মাসে সবচেয়ে বেশি সহিংসতা হয়েছে। ইসরায়েলি হামলায় ১৩ শিশুসহ ৬৫ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।

এ বছর মুসলমানদের পবিত্র রমজান মাস ইহুদিদের পাসওভারের ছুটির সঙ্গে মিলে যায়। সুতরাং এটি স্পষ্ট ছিল যে বছরের এই সময়ে সহিংসতার জন্য আরেকটি সম্ভাব্য ফ্ল্যাশপয়েন্ট হবে। ইউক্রেনের যুদ্ধ থেকে মনোযোগ সরিয়ে আনবে এমন বড় সহিংসতা এড়ানোর আশায়, পরিস্থিতি শান্ত করার উপায় নিয়ে আলোচনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের তত্ত্বাবধানে দুটি আঞ্চলিক বৈঠক হয়।

গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ফিলিস্তিনি, ইসরায়েলি, জর্ডানীয়, মিসরীয় ও মার্কিন কর্মকর্তারা জর্ডানের বন্দরনগরী আকাবায় আলোচনায় বসেন। বৈঠকের পর জারি করা যৌথ বিবৃতিতে ‘ফের সহিংসতা প্রতিরোধে ফিলিস্তিনের ভূখণ্ডে হামলা হ্রাস করার প্রতিশ্রুতি’ এবং ছয় মাসের জন্য ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে নতুন অবৈধ বসতি স্থাপনের অনুমোদন বন্ধ করার জন্য ইসরায়েলি অঙ্গীকারের ওপর জোর দেওয়া হয়।

গত ১৯ মার্চ মিসরের শারম আল শেখে আরেকটি বৈঠক হয়, যেখানে ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলি কর্মকর্তারা জেরুজালেমের পবিত্র স্থানগুলোর স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে প্রতিশ্রুতি দেয় ‘কথায় এবং বাস্তবে উভয়ই’ এবং আসন্ন পবিত্র রমজান মাসে এসব স্থানের পবিত্রতা নষ্ট হয়, এমন কোনো কর্মকাণ্ড না করতে। কিন্তু নেতানিয়াহুর সরকার এসব স্থানের স্থিতিশীলতা না কথায় না কাজে বজায় রেখেছে। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী দূর-ডান এবং অতি-ধর্মীয় শক্তির সঙ্গে জোট করেছেন, যাঁরা কিনা প্রকাশ্যে বলেছেন, জর্ডানের অভিভাবকত্বে পবিত্র স্থানগুলোর ইসরায়েলি স্বীকৃতি ছিল একটি ঐতিহাসিক ভুল, যা তাঁরা সংশোধন করতে বাধ্য।
প্রকৃতপক্ষে, ২০২৩ সালটি শুরু হয়েছে চরম ডানপন্থী হিসেবে পরিচিত ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন-গভিরের আল হারাম আল শরিফে প্রবেশের মধ্য দিয়ে, যা কিনা ফিলিস্তিনজুড়ে জনগণের ক্ষোভকে উসকে দেয়। তাঁর নজরদারিতে, ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনীর তত্ত্বাবধানে মুসলিমদের পবিত্র স্থানে ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের অভিযান আরও জোরদার হয়েছে।

সরকারের বন্ধু বেন-গভির ও অন্যান্য চরমপন্থী নেতারা এখন নেতানিয়াহুর ক্ষমতায় থাকার এবং দুর্নীতির জন্য জেলে যাওয়া এড়ানোর একমাত্র সহায়ক। তাঁরা তা জানেন এবং এর সুযোগ ভালোমতো নিয়ে পশ্চিম তীরের অধিকৃত এলাকায় যেকোনো মূল্যে সহিংসতা ছড়িয়ে ফিলিস্তিনিদের উৎখাত করে যাতে ইহুদি বসতি স্থাপনকারীদের জায়গা নিশ্চিত করা যায়। এসব সহিংসতা নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে সরকারবিরোধীদের বিক্ষোভ থেকে জনগণের মনোযোগ সরিয়ে দিতে কার্যকর ভূমিকা রাখছে। 

‘একটি ধর্মযুদ্ধ’
এটা বেশ স্পষ্ট যে এই যুদ্ধ ইসরায়েলের স্বার্থে নয়। ইসরায়েল বর্তমানে পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ নিয়ে ব্যস্ত। এই অঞ্চলে ইরানের সামরিক উপস্থিতি এবং কূটনৈতিক সাফল্য নিয়ে দেশটি চিন্তিত। তারা ইরানের প্রভাব রোধ করতে এবং লেবাননের সীমান্তের কাছে সাম্প্রতিক রাস্তার ধারে বোমা বিস্ফোরণে হিজবুল্লাহর ভূমিকা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে সিরিয়ায় নিয়মিত হামলা করছে।

নেতানিয়াহু ইসরায়েলি নিরাপত্তা সংস্থার কথা শুনবেন কি না, সেটা অন্য প্রশ্ন। অন্যদিকে, গাজার হামাস গোষ্ঠী ইসরায়েলি এসব সহিংসতার প্রতিক্রিয়া জানানোর চেষ্টা করেছে। এটি আল আকসায় আরও অভিযানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলকে সতর্ক করেছে। হামাস সহিংসতা বাড়তে দিতে চায় না। কারণ এটি পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ থেকে মনোযোগ সরিয়ে নিতে পারে, যা তারা ইসরায়েলের সঙ্গে সংঘর্ষের প্রধান ক্ষেত্র হিসেবে দেখে। অধিকৃত অঞ্চলে সশস্ত্র হামলা ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষকে গাজার সঙ্গে সংঘর্ষের চেয়ে অনেক বেশি উদ্বিগ্ন 
করে তোলে।

হামাসের কৌশল এখন পশ্চিম তীর, জেরুজালেম ও ইসরায়েলে একটি জনপ্রিয় ফিলিস্তিনি সংঘবদ্ধকরণকে উৎসাহিত করা, যাতে আল আকসা মসজিদে আরও হামলার বাধা হিসেবে কাজ করা যায়।

ফিলিস্তিনি মুসল্লিদের বিরুদ্ধে যদি ইসরায়েলের নৃশংস সহিংসতা অব্যাহত থাকে, তাহলে হামাসও সিদ্ধান্ত নিয়ে সে কাজ করার জন্য চাপের মুখে পড়তে পারে। ফিলিস্তিনি জনগণ ইতিমধ্যে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের জারি করা দুর্বল নিন্দা এবং নিষ্ক্রিয়তায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। হামাস নেতৃত্ব নিজেদের নিষ্ক্রিয় হিসেবে বিবেচনা করতে চাইবে না এবং জনপ্রিয় দাবি মেনে চলতে তারা কঠোর অবস্থান নেওয়ার জন্য ইসরায়েলে রকেট হামলা জোরদার করতে পারে। এভাবে গাজায় ২০২১ সালের মতো যুদ্ধের পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে, যা আল আকসা মসজিদে ইসরায়েলের অভিযানের কারণেই শুরু হয়েছিল।

জেরুজালেমের ধর্মীয় স্থানগুলোর স্থিতাবস্থা পরিবর্তনে ইসরায়েলি চেষ্টা আঞ্চলিক দ্বন্দ্বের সূত্রপাত ঘটাতে পারে। পবিত্র স্থানগুলোতে ইসরায়েলের হামলার কারণে ‘ধর্মীয় যুদ্ধ’ শুরু হতে পারে বলে অনেকে সতর্ক করেছেন। গত জানুয়ারি মাসে ইসরায়েলে নিযুক্ত জর্ডানের রাষ্ট্রদূত মাহমুদ দাইফাল্লাহ হামুদ জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে বলেছেন, আল হারাম আল শরিফের ওপর ইসরায়েলি হামলা প্রায় ২০০ কোটি মুসলমানের অনুভূতিতে আঘাত হেনেছে এবং এতে করে একটি ‘ধর্মীয় সংঘাতের’ সৃষ্টি হতে পারে।

আল আকসায় ইসরায়েলের আগ্রাসী কর্মকাণ্ডে এমন উদ্বেগও বাড়ছে যে নেতানিয়াহুর সরকার পবিত্র স্থানে ফিলিস্তিনিদের প্রবেশাধিকারের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করতে চাইছে, যেমনটি হেবরনের ইব্রাহিমি মসজিদে করা হয়েছিল। ১৯৯৪ সালে একজন ইহুদি বসতি স্থাপনকারী ইব্রাহিমি মসজিদে মুসলিম মুসল্লিদের ওপর গুলি চালালে ২৯ জন নিহত হয়। এরপর ওই মসজিদকে দুটি অংশে ভাগ করা হয়। একটি অংশ মুসলমানদের জন্য এবং অপর অংশ ইহুদিদের জন্য। আল আকসা প্রাঙ্গণে এই ব্যবস্থাগুলো আরোপ করা হলে তা হবে স্থিতাবস্থার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন, যার অধীনে অমুসলিমদের শুধু নির্দিষ্ট সময়ের জন্য মসজিদে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে এবং ভেতরে প্রার্থনা করার অনুমতি থাকবে না।

এখন পর্যন্ত আরব রাষ্ট্রগুলো, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলি হামলার নিন্দা করেছে। আরব এবং পশ্চিমা রাজধানীগুলো যা বোঝে না তা হলো, এখন ইসরায়েলি পদক্ষেপের কঠোর প্রতিক্রিয়া না পাওয়া পর্যন্ত, নেতানিয়াহুর অতি-ডান মিত্ররা মুসলিম এবং খ্রিষ্টানদের পবিত্র স্থানগুলো দখল করার এবং বসতি স্থাপনের চেষ্টায় আরও এগিয়ে যেতে সাহসী হবে। আল হারাম আল শরিফে ইসরায়েলের এই আগ্রাসন ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডকে একটি বিস্ফোরকে পরিণত করছে, যা শিগগিরই পুরো অঞ্চলকে উড়িয়ে দেবে।

লেখক: বিভাগীয় প্রধান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, উম্মাহ ইউনিভার্সিটি, গাজা 

(আল জাজিরার অনলাইনে প্রকাশিত লেখাটি ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন সাংবাদিক ও কলাম লেখক রোকেয়া রহমান)

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে খুন: বোরকা পরে ঢুকে স্কুলড্রেসে বেরিয়ে যান একজন, গৃহকর্মী বলে সন্দেহ

দল বিলুপ্ত করে বিএনপিতে বাংলাদেশ এলডিপির সেলিম, প্রার্থী হবেন ধানের শীষের

হাতকড়া ও শিকল পরিয়ে আরও ৩১ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠাল যুক্তরাষ্ট্র

‘নারীশাসিত পুরুষ’: সাহস থাকলে সামনে এসে কথা বল—আসিফকে ওমর সানীর চ্যালেঞ্জ

২০০ আসনে জিতলেও জাতীয় সরকার গঠন করবে জামায়াত: শফিকুর রহমান

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে খুন: বোরকা পরে ঢুকে স্কুলড্রেসে বেরিয়ে যান একজন, গৃহকর্মী বলে সন্দেহ

দল বিলুপ্ত করে বিএনপিতে বাংলাদেশ এলডিপির সেলিম, প্রার্থী হবেন ধানের শীষের

হাতকড়া ও শিকল পরিয়ে আরও ৩১ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠাল যুক্তরাষ্ট্র

‘নারীশাসিত পুরুষ’: সাহস থাকলে সামনে এসে কথা বল—আসিফকে ওমর সানীর চ্যালেঞ্জ

২০০ আসনে জিতলেও জাতীয় সরকার গঠন করবে জামায়াত: শফিকুর রহমান

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে খুন: বোরকা পরে ঢুকে স্কুলড্রেসে বেরিয়ে যান একজন, গৃহকর্মী বলে সন্দেহ

দল বিলুপ্ত করে বিএনপিতে বাংলাদেশ এলডিপির সেলিম, প্রার্থী হবেন ধানের শীষের

হাতকড়া ও শিকল পরিয়ে আরও ৩১ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠাল যুক্তরাষ্ট্র

‘নারীশাসিত পুরুষ’: সাহস থাকলে সামনে এসে কথা বল—আসিফকে ওমর সানীর চ্যালেঞ্জ

২০০ আসনে জিতলেও জাতীয় সরকার গঠন করবে জামায়াত: শফিকুর রহমান

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে খুন: বোরকা পরে ঢুকে স্কুলড্রেসে বেরিয়ে যান একজন, গৃহকর্মী বলে সন্দেহ

দল বিলুপ্ত করে বিএনপিতে বাংলাদেশ এলডিপির সেলিম, প্রার্থী হবেন ধানের শীষের

হাতকড়া ও শিকল পরিয়ে আরও ৩১ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠাল যুক্তরাষ্ট্র

‘নারীশাসিত পুরুষ’: সাহস থাকলে সামনে এসে কথা বল—আসিফকে ওমর সানীর চ্যালেঞ্জ

২০০ আসনে জিতলেও জাতীয় সরকার গঠন করবে জামায়াত: শফিকুর রহমান

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে খুন: বোরকা পরে ঢুকে স্কুলড্রেসে বেরিয়ে যান একজন, গৃহকর্মী বলে সন্দেহ

দল বিলুপ্ত করে বিএনপিতে বাংলাদেশ এলডিপির সেলিম, প্রার্থী হবেন ধানের শীষের

হাতকড়া ও শিকল পরিয়ে আরও ৩১ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠাল যুক্তরাষ্ট্র

‘নারীশাসিত পুরুষ’: সাহস থাকলে সামনে এসে কথা বল—আসিফকে ওমর সানীর চ্যালেঞ্জ

২০০ আসনে জিতলেও জাতীয় সরকার গঠন করবে জামায়াত: শফিকুর রহমান

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত