Ajker Patrika

শ্রমিক বাঁচেন নামমাত্র মজুরিতে

  • শ্রম আইনের বাইরে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাত।
  • যুক্তরাষ্ট্রে ঘণ্টাপ্রতি শ্রমিক পান ৮ ডলার।
  • দেশে সারা দিনেও মেলে না৫ ডলার।
শাহ আলম খান, ঢাকা 
শ্রমিকের মৌলিক চাহিদা পূরণ কি বিদ্যমান ব্যবস্থাধীনে সম্ভব? ফাইল ছবি
শ্রমিকের মৌলিক চাহিদা পূরণ কি বিদ্যমান ব্যবস্থাধীনে সম্ভব? ফাইল ছবি

রাজধানীর অলিগলিতে প্রতিদিনের চেনা দৃশ্য—রোদে ঝলসে গেলেও থামে না শ্রমিকের কাজ। কেউ ড্রেন খুঁড়ছেন, কেউ টানছেন ইট-বালু। কোটি কোটি টাকার ঠিকাদারি প্রকল্পে সড়ক আর ভবন গড়ে উঠলেও সেই সব নির্মাণের ভিত গাঁথা শ্রমিকদের মজুরি থাকে বড্ড কম। কাজের ভার আর দক্ষতার ভিত্তিতে নয়—তাঁদের ঘামের দাম ঠিক হয় মালিকের মর্জিমাফিক।

মজুরি নির্ধারণেও রয়েছে স্পষ্ট বৈষম্য—পুরুষ আর নারী শ্রমিকের পারিশ্রমিক এক নয়, কাজ এক হলেও। বিভিন্ন নির্মাণসাইট ঘুরে দেখা গেছে, যেখানে পুরুষ শ্রমিকেরা পান দিনে ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা, সেখানে নারী শ্রমিকেরা একই কাজ করে পাচ্ছেন ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা। অথচ অনেকের বিশ্বাস, কাজের ধরন ও কষ্ট বিবেচনায় সবার ন্যায্য মজুরি হওয়া উচিত ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা। এমন বৈষম্য রাজধানীতেই নয়, ছড়িয়ে আছে দেশের আনাচকানাচে।

হাতিরঝিলে একটি হোটেলে কাজ করেন কাইয়ুম। আট বছর ধরে কাজ করেও তাঁর বেতন মাত্র সাত হাজার টাকা। সকাল থেকে রাত অবধি কাজ করলেও তেমন ছুটি বা বাড়তি সুবিধা নেই।

ওয়ার্কশপে কাজ করেন সুজন ও রবীন্দ্র। তাঁরা শুধু কায়িক শ্রমই দেন না, মেশিন চালানো বা মেরামতের মতো জটিল কাজও করেন। তারপরও তাঁদের মাসিক আয় ১০-১২ হাজার টাকার বেশি নয়। থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থাও তাঁদের নিজের খরচে।

এভাবে তাঁত, টেইলার্স, ইটভাটা কিংবা হোটেল-রেস্তোরাঁ—শত খাতে শ্রমিকেরা দিনরাত খেটে গেলেও হাতে আসে না ন্যায্য মজুরি। অথচ সেই ঘামে ভেজা শ্রমেই গড়ে উঠছে দেশের বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্প, সড়ক-মহাসড়ক আর শিল্প অবকাঠামো। শ্রমিকের সরবরাহ করা পরিশ্রমেই চলমান বন্দর, পরিবহন থেকে শুরু করে কৃষি খাত পর্যন্ত—সব জায়গাতেই মালপত্র ওঠানো-নামানো, বণ্টন ও বিপণন। এই পরিশ্রমেই ঘোরে অর্থনীতির চাকা।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, দেশের ৮৫ শতাংশ শ্রমিক কাজ করছেন অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে। কৃষিতে এ সংখ্যা ৯৫ শতাংশ, শিল্পে ৯০ শতাংশ। এসব খাতে শ্রমিকদের নেই চাকরির চুক্তিপত্র, নেই স্বাস্থ্যসেবা, ছুটি বা সুরক্ষা।

নারী শ্রমিকেরা এখনো সমান পারিশ্রমিক পাচ্ছেন না। তাঁরা পুরুষদের মতো পরিশ্রম করলেও মজুরি কম। এতে পরিবার চালানো কঠিন হয়ে পড়ে।

আইন অনুযায়ী ন্যূনতম মজুরি নির্ধারিত থাকলেও বাস্তবে তা মানা হয় না। মালিকেরা ইচ্ছেমতো কম বেতন দেন। সরকারি নজরদারি কম বলেই এই সমস্যা চলছে।

শ্রম অধিদপ্তর বলছে, ৬৩টি খাতে শ্রমিক কাজ করছেন। কিন্তু অনেক খাতেই সরকার নির্ধারিত মজুরি কার্যকর নয়। বিলসের মতে, ৫৪টি খাতে মজুরি নির্ধারণ করা গেলেও তাতে বাস্তবায়নের অভাব আছে।

আন্তর্জাতিক তুলনায় বাংলাদেশের শ্রমিকদের মজুরি খুব কম। যুক্তরাষ্ট্রে ঘণ্টাপ্রতি শ্রমিক পান ৮ ডলার, বাংলাদেশে অনেক সময় সারা দিন কাজ করেও পাওয়া যায় না ৫ ডলার।

অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, উৎপাদন বাড়াতে হলে শ্রমিকের মজুরি ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও অন্তর্বর্তী সরকারের পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়ন ছাড়া উন্নয়ন টেকসই হবে না। অন্তর্বর্তী সরকার বিষয়টি গভীরভাবে অনুধাবন করেছে বলেই শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নে শ্রম কমিশন গঠন করে করণীয় নির্ধারণের সুপারিশ গ্রহণ করেছে। যার বাস্তবায়ন ধাপে ধাপে শুরু হবে।

বিআইডিএসের সাবেক মহাপরিচালক ড. মোস্তফা কে মুজেরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতেই দেশের মূল শ্রমিকেরা কাজ করছেন। কিন্তু তাঁরা শ্রম আইনের বাইরে, ফলে তাঁরা নিরাপত্তা পাচ্ছেন না।

সরকার বলছে, কিছু খাতে মজুরি কার্যকর হয়েছে। তবে মালিকদের মানসিকতার পরিবর্তন ও শ্রমিকদের দক্ষতা বাড়ানো না হলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে না।

সবশেষে যত দিন শ্রমিকের ঘাম দিয়ে তৈরি উন্নয়নের প্রকল্পে তাঁদের সঠিক মজুরি নিশ্চিত না হবে, তত দিন সেই উন্নয়ন অসম্পূর্ণই থেকে যাবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পেহেলগাম হামলা: ধরা খেয়ে গেল মোদির কাশ্মীর ন্যারেটিভ

বিবাহিতদের পুলিশ ক্যাডারে সুপারিশ না করার প্রস্তাব

ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা: বিমানবাহিনীকে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিতে বললেন প্রধান উপদেষ্টা

সারজিসের সামনেই বগুড়ায় এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধীদের মধ্যে হাতাহাতি-সংঘর্ষ

‘ঘুষের জন্য’ ৯১টি ফাইল আটকে রাখেন মাউশির ডিডি: দুদক

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত