Ajker Patrika

‘মোর নির্দোষ স্বামীটাক কায় মারি ফেলাইল’

রংপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ১৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৬: ৩৩
‘মোর নির্দোষ স্বামীটাক কায় মারি ফেলাইল’

সকালের খাওয়া শেষে রিকশা নিয়ে বাড়ি থেকে বের হওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন হযরত আলী (২৫)। এ সময় তাঁর সঙ্গে যাওয়ার জন্য পথ আটকায় শিশু সাহাবুল (আড়াই বছর)। সন্তানকে কোলে নিয়ে আশ্বাস দেন ফেরার পথে মজা (খাবার) নিয়ে আসবেন। এই কথা বলে রিকশা নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। কিন্তু ওই দিন আর বাড়ি ফেরেননি। এরপর থেকে নিখোঁজ ছিলেন তিনি। 

নিখোঁজের তিন দিন পর আজ রোববার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তারাগঞ্জের তিস্তা সেচ ক্যানেলে স্লুইচ গেট শেরমস্ত শেরপুর এলাকায় একটি পুকুর থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করা হয়। পুলিশ বলছে, ধারণা করা হচ্ছে, তাঁকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। 

রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার সয়ার ইউনিয়নের মণ্ডলপাড়া গ্রামের বাসিন্দা তিনি। হযরত আলী পেশায় রিকশাচালক। তাঁর একার আয়ে স্ত্রী, সন্তানসহ পাঁচ সদস্যের সংসার চলে। 

স্বামীর মরদেহ উদ্ধারে সময় হযরত আলী স্ত্রী শেউলি বেগম বিলাপ করে বলছিলেন, ‘দিন করি দিন খাই, হামার তো শত্রু নাই। মোর নির্দোষ স্বামীটাক কায় মারি ফেলাইল। বাবা, সাহাবুলরে তোক কায় অ্যালা মজা আনি দিবে।’

পুলিশ ও স্বজনদের সূত্রে জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার সকালে খাওয়া শেষে বাড়ি থেকে ভাড়ার উদ্দেশ্যে বের হন হযরত আলী। এ সময় তাঁর ছেলে সাহাবুল ইসলাম খাবার কেনার জন্য সঙ্গে যাওয়ার বায়না ধরেন। সাহাবুলকে বুঝিয়ে আসার সময় খাবার নিয়ে আসার আশ্বাস দিয়ে বেরিয়ে পড়েন হযরত আলী। 

পুকুর পাড়ে এলাকাবাসীর ভিড়। ছবি: আজকের পত্রিকাওই দিন রাতে বাড়িতে না ফেরায় পর দিন পরিবারের লোকজন তাঁকে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। গত শুক্রবার সকালে খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে হযরত আলীর রিকশাটি শেরমস্ত শেরপুর তিস্তা সেচ ক্যানেল এলাকায় পাওয়া যায়। কিন্তু সেখানে হযরত আলীকে পাওয়া যায়নি। এরপর পরিবারের লোকজন ওই দিনই তারাগঞ্জ থানা-পুলিশকে জানান। পুলিশ ও পরিবারের লোকজন তাঁকে খুঁজতে শুরু করেন। আজ দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শেরমস্ত শেরপুর তিস্তা সেচ ক্যানেলের স্লুইচ গেটের পাশে একটি পুকুর থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করে। 

তারাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ছিদ্দিকুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, হযরত আলীর নিখোঁজের বিষয়টি তাঁর পরিবার থানায় জানানোর সঙ্গেই পুলিশ তাঁকে উদ্ধারে তৎপর ছিল। আশপাশের পুকুরে গতকালও সার্চ করা হয়েছে। কুর্শা ইউনিয়নের শেরমস্ত শেরপুর মৌজার তিস্তা সেচ ক্যানেলের পাশের একটি পুকুরে তাঁর লাশ ভেসে উঠে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, তাঁকে শ্বাসরোধে হত্যা করে পুকুরে ফেলা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত