Ajker Patrika

ফ্রান্সপ্রবাসী বিদেশে বসেই দেশে চালান দুর্ধর্ষ চোরের দল

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৯: ০৪
Thumbnail image

রাজধানীর কচুক্ষেতের রজনীগন্ধা মার্কেটের রাঙাপরি জুয়েলার্সে ডাকাতির ঘটনায় দুর্ধর্ষ একটি ডাকাত চক্রের সন্ধান পেয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ ডিবি। ওই দলের মূল হোতা একজন প্রবাসী। তিনি ফ্রান্সে বসেই দল পরিচালনা ও দলের অর্থায়ন করেন। সম্প্রতি ওই দলের সদস্য মঞ্জুরুল হাসান শামীমকে (৩৩) গ্রেপ্তারের পর এসব তথ্য জানা গেছে। 

আজ রোববার দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার এসব তথ্য জানিয়েছেন। 

গোয়েন্দা পুলিশ বলছে, রাঙাপরি জুয়েলার্সে ডাকাতিতে জড়িত চক্রটির মূল হোতা নাসির (৫০) নামের এক ফ্রান্সপ্রবাসী। নাসিরের হয়ে দেশে কার্যক্রম পরিচালনা করেন শামীম। তাঁকে গ্রেপ্তারের পর এই চক্রের বিষয়ে তথ্য পায় ডিবি। গাজীপুরের কড্ডা ও মুন্সিগঞ্জের বজ্রযোগিনী এলাকায় অভিযান চালিয়ে শামীমকে গ্রেপ্তার এবং স্বর্ণ বিক্রির সাড়ে ৯ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়। 

অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার হাফিজ আক্তার বলেন, ‘মিরপুরের ভাষানটেক থানার কচুক্ষেত এলাকার রজনীগন্ধা টাওয়ারের নিচতলার রাঙাপরি জুয়েলার্সে ৫ ফেব্রুয়ারি ৩০০ ভরি স্বর্ণ, ইমিটেশনের গয়না ও টাকা চুরি করে পালিয়ে যায়।’ 

হাফিজ জানান, চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে দোকানটিতে চুরির উদ্দেশ্যে কৌশল ঠিক করে। তারই অংশ হিসেবে চক্রের সদস্য মাসুদ ও ইলিয়াস মিথ্যা নাম-পরিচয় ব্যবহার করে মার্কেটের সিকিউরিটি গার্ড ও সুইপারের চাকরি নেন। চাকরিরত অবস্থায় তাঁরা এই দোকানে চুরির পরিকল্পনা বাস্তবায়নে চক্রের অন্য সদস্যদের সঙ্গে নিয়মিত তথ্য আদান-প্রদান করতে থাকেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘটনার আগের দিন চক্রের সদস্য শাহীন মাস্টার একই মার্কেটে একটি দোকান ভাড়া নেন। সেই দোকানে মালামাল তোলার নামে তালা ভাঙার সরঞ্জাম মার্কেটে নিয়ে যান। ঘটনার দিন ৫ ফেব্রুয়ারি রাত ১টার দিকে চক্রের দুই সদস্য শ্রীকান্ত ও তালা ভাঙার মিস্ত্রি রাজা মিয়া মার্কেটে প্রবেশ করেন। আগে থেকে মার্কেটে কাজ করা মাসুদ, ইলিয়াসসহ চারজনে মিলে ভোর ৫টার দিকে চুরি শেষে বের হয়ে কেরানীগঞ্জ থানার হাসনাবাদ এলাকার একটি বাসায় যান। ওই বাসায় আগে থেকেই অপেক্ষা করছিলেন শাহীন মাস্টার ও গ্রেপ্তার মঞ্জুরুল হাসান শামীম। কেরানীগঞ্জের এই ভাড়া বাসায় চক্রের উপস্থিতিতে স্বর্ণ, ইমিটেশনের গয়না ও অর্থ আলাদা করা হয়। পরে শ্রীকান্ত আসল স্বর্ণ তাঁর পূর্বপরিচিত এক ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করে দেন। স্বর্ণ বিক্রির টাকা ভাগ করে নিয়ে সবাই আত্মগোপনে চলে যান।

জিজ্ঞাসাবাদে শামীম পুলিশকে জানিয়েছেন, চক্রের মূল হোতা ফ্রান্সপ্রবাসী নাসির। তিনি তাঁর (শামীম) মাধ্যমে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন ও প্রাথমিক অর্থের জোগান দিয়ে থাকেন। এই চক্রের প্রত্যেক সদস্যের আলাদা আলাদা দায়িত্ব নির্ধারণ করা থাকে। চক্রটি একাধিক চুরির সঙ্গে জড়িত। তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। 

রজনীগন্ধা মার্কেটে যে প্রতিষ্ঠান নিরাপত্তাকর্মী ও সুইপার নিয়োগ দিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না, জানতে চাইলে ডিবির প্রধান বলেন, ‘আমরা তদন্ত করছি। অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রতিষ্ঠানটি জনবল নিয়োগের আগে ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করেনি। এই দুর্বলতা কাজে লাগিয়ে চক্রের সদস্যরা চুরি করেছে।’ 

নাসিরের বিষয়ে জানতে চাইলে হাফিজ আক্তার বলেন, ‘নাসির পেশাদার চোর। সে সাত বছর আগে ফ্রান্সে চলে যায়। এরপর থেকেই প্রবাসে একটি চোর চক্রের মূল হোতা ও অর্থদাতা হিসেবে কাজ করছে। তার গ্রামের বাড়ি বাগেরহাট জেলায়। নাসির ২০ বছর ধরে চুরির সঙ্গে জড়িত। তার বিরুদ্ধে কতগুলো মামলা রয়েছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ছাড়া চক্রের পলাতক সদস্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত