Ajker Patrika

শিক্ষক রাজনীতি

ঢাবির সাদা দলে ভাঙনের সুর

  • পুরোনো নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ক্ষমতা কুক্ষিগত করার অভিযোগ ‘বিচ্ছিন্নতাকামীদের’।
  • যাঁদের বের হওয়ার ভাবনাচিন্তার কথা রটেছে, তাঁরা বলেছেন, সাদা দলকে ‘আগের জায়গায়’ ফিরিয়ে নিতে চান তাঁরা।
ফারুক ছিদ্দিক, ঢাবি 
আপডেট : ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৭: ৫৬
Thumbnail image

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতীয়তাবাদী ও ইসলামি মূল্যবোধে বিশ্বাসী শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দলে ভাঙনের সুর বাজছে। ঘুরেফিরে কয়েকজনের হাতেই নেতৃত্ব থাকা, বিশেষ ব্যক্তিদের সুবিধা দেওয়া, বিশ্ববিদ্যালয় ও সংগঠনের জন্য ‘ক্ষতিকর’ বিষয়ে প্রতিবাদ না করাসহ বেশ কয়েকটি অভিযোগ এনে একটি অংশ বের হয়ে যাচ্ছে বলে গুঞ্জন রয়েছে। তবে যাঁদের বের হওয়ার ভাবনাচিন্তার কথা রটেছে, তাঁরা বলেছেন, দল ছেড়ে বেরিয়ে যেতে নয়, তাঁরা কাজ করছেন পুনর্গঠন করে সাদা দলকে ‘আগের জায়গায়’ ফিরিয়ে নিতে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভাগ হতে যাওয়া অংশের নেতৃত্বে আছেন পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সাদা দলের শিক্ষক অধ্যাপক ড. আমিনুল ইসলাম তালুকদার, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলমোজাদ্দেদী আলফেছানী এবং তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মেজবাহ-উল-ইসলাম। সাদা দল থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে না বললেও এই পক্ষ একই সঙ্গে জানিয়েছে, আগামী শিক্ষক সমিতিসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন নির্বাচনে তাঁরা আলাদা প্যানেল দেবেন।

একচেটিয়া নেতৃত্ব ধরে রাখাসহ অনিয়মের অভিযোগের প্রতিক্রিয়ায় সাদা দলের বর্তমান নেতৃত্বে থাকা শিক্ষকেরা বলেছেন, সংগঠনের গঠনতন্ত্র মেনেই তাঁরা সবকিছু পরিচালনা করছেন। সব সদস্যের মতামতের ভিত্তিতে সব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাধীনতার পর থেকে শিক্ষকদের দুটি বিপরীত আদর্শভিত্তিক গ্রুপ ছিল। পরে আওয়ামী লীগ বিরোধী শিক্ষকদের দুটি গ্রুপ হয়, একটি বিএনপি-জামায়াতপন্থীদের সাদা দল, অন্যটি বামপন্থীদের গোলাপি দল। তবে গোলাপি দলের তেমন কোনো কার্যক্রম চোখে পড়ে না।

সাদা দলের সর্বশেষ কমিটির আহ্বায়ক পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য লুৎফর রহমান, যুগ্ম আহ্বায়ক ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান ও রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. আব্দুস সালাম এবং কোষাধ্যক্ষ ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের অধ্যাপক ড. আবুল কালাম সরকার। এ কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা আগামী ৩১ ডিসেম্বর।

সাদা দলের আলাদা হতে চাওয়া শিক্ষকদের অভিযোগ, সংগঠনের আসন্ন কেন্দ্রীয় কমিটিতে আবারও অধ্যাপক আব্দুস সালাম ও কালাম সরকারকে রাখা হচ্ছে। অথচ তাঁরা ১০ বছরের বেশি সময় ধরে কমিটিতে রয়েছেন। ঘুরেফিরে কয়েকজন শিক্ষকের মধ্য থেকেই আহ্বায়ক, যুগ্ম আহ্বায়ক, অনুষদ আহ্বায়কসহ কমিটির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে আসার বিষয়টি দল ভাগ হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ বলে জানিয়েছেন কথিত ‘বিচ্ছিন্নতাকামীরা’।

অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম তালুকদার আজকের পত্রিকাকে এ বিষয়ে বলেন, ‘সাদা দল ভাগ হবে না। বলা যায়, এর সংস্কার বা পুনর্গঠন হবে। আমরা দলের ভেতরে নতুন নেতৃত্ব তৈরি করতে চাই, যার মেয়াদ এক বছর হবে। বিগত সময়ে অনেকে চেষ্টা করেও সেটা করতে পারেননি। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের পরে শিক্ষকেরা কথা বলা শুরু করেছেন। তাঁরা সিন্ডিকেট থেকে মুক্ত হতে চান।’

অধ্যাপক আলমোজাদ্দেদী আলফেছানীও একটি গোষ্ঠীর সংগঠনের ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখার অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, ‘১৫-২০ বছর ধরে একটি বলয় ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করে রেখেছে। সিন্ডিকেট তৈরি করেছে। তারা আওয়ামী প্রশাসনের সঙ্গে বিভিন্ন আঁতাত করে দল পরিচালনা করেছে, নতুন নেতৃত্ব আসতে দেয়নি। শিক্ষকদের মধ্যে কেউ কথা বললে তাঁদের চাপিয়ে রেখেছে। কেউ প্রতিবাদ করতে পারেননি। তাঁরা জাতীয় সংকটে কোনো ধরনের কর্মসূচি পালন করেননি। তাই আমরা সাদা দলের পুনর্গঠনের কথা ভাবছি।’

এ পক্ষের আরেকজন অধ্যাপক মেজবাহ-উল-ইসলাম বলেন, ‘সাদা দলের বর্তমান নেতৃত্ব সংগঠনকে বিপথে পরিচালিত করেছেন। তাঁরা বিগত সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অপকর্মের বিরুদ্ধে কোনো প্রতিবাদ করেননি। আমরা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আদর্শের প্রতি দায়বদ্ধ হয়ে, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের পক্ষে কাজ করার জন্য সাদা দলকে নতুন নেতৃত্বের হাতে তুলে দিতে চাই।’

সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক লুৎফর রহমান জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্যের দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে দলের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন অধ্যাপক ছিদ্দিকুর রহমান খান। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘১২টি ইউনিট থেকে নাম নিয়ে যাচাই-বাছাই করে নতুন করে কমিটি দেওয়া হয়। এখানে কুক্ষিগত করার বিষয় কেন আসবে। শিক্ষকেরা যাঁদেরকে চান, তাঁরাই নেতৃত্ব আসেন। নির্বাচনে নিশ্চিত পরাজয় জানার পর তাঁরা এ রকম সংস্কার বা পুনর্গঠনের কথা বলছেন। আমাদের মেয়াদ ৩১ তারিখ শেষ হলে নতুন নেতৃত্ব আসবে। তাঁরা শিক্ষকদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে আসতে পারলে আসুন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত