ফারজিয়া হক ফারিন,নাট্যকর্মী ও গবেষক
৩ অক্টোবর বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট প্রকাশ করেছে বিশ্বব্যাংক। প্রতিবেদনে সংস্থাটি জানিয়েছে, বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ২০২৪ সালে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ হতে পারে। ইতিপূর্বে গত এপ্রিলের রিপোর্টে ২০২৪ সালে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৫ শতাংশ হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছিল বিশ্বব্যাংক। কিন্তু অক্টোবরে প্রকাশিত প্রতিবেদনে প্রত্যাশিত জিডিপি প্রবৃদ্ধি আগের তুলনায় কমে যাওয়ায় নড়েচড়ে বসেছে বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমগুলো। দেশের প্রথমসারির কিছু সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে লেখা প্রতিবেদনগুলো দেখলে মনে হয়, বাংলাদেশের অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়ছে, আর এখান থেকে উত্তরণের কোনো আশা নেই বললেই চলে। বিশ্বব্যাংক এপ্রিল সংখ্যায় জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ২ শতাংশ হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে বলে উল্লেখ করেছে আজকের পত্রিকা, যেখানে মূল প্রতিবেদনে সম্ভাব্য প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৫ শতাংশ বলে উল্লেখ আছে। এ ধরনের তথ্যগত ত্রুটি এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত নিরাশায় ভরা খবর প্রথম শ্রেণির সংবাদমাধ্যমগুলোর কাছ থেকে কাম্য নয়।
গত এপ্রিল ও অক্টোবরের বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট সূক্ষ্মভাবে বিশ্লেষণ করে এমন নৈরাশ্যজনক ও হতাশাব্যঞ্জক কিছু পাওয়া যায়নি; বরং সারা বিশ্ব বর্তমানে যে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, বাংলাদেশেও স্বাভাবিকভাবে তারই প্রভাব পড়েছে বলে প্রতীয়মান হয়। বিশ্বব্যাংক এই অবস্থা থেকে উত্তরণের সম্ভাব্য কিছু উপায়ও উল্লেখ করেছে প্রতিবেদনে।
প্রকৃতপক্ষে, মহামারির ধাক্কা, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি, আর্থিক নীতির কড়াকড়ির কারণে বৈশ্বিক অর্থনীতি বর্তমানে একটি অনিশ্চিত অবস্থায় আছে (পৃষ্ঠা-৮)। ২০২৩ সালে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিও মন্থর, মাত্র ২ দশমিক ১ শতাংশ। অনবরত অর্থনৈতিক নীতির লাগাম টেনে ধরা, উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি এর কারণ (পৃষ্ঠা-৬)। ২০২২ সালের শেষের দিকে এবং ২০২৩ সালের শুরুর দিকে উন্নত দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিও প্রত্যাশার তুলনায় ধীরগতির। যুক্তরাষ্ট্রের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ২০২৩-এ ১ দশমিক ১ শতাংশ থেকে কমে গিয়ে ২০২৪ সালে শূন্য দশমিক ৮ শতাংশ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে (পৃষ্ঠা-৯)।
গত এপ্রিলের ডেভেলপমেন্ট আপডেটে বিশ্বব্যাংক ২০২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ২ শতাংশে নেমে আসবে বলেও আশঙ্কা করেছিল (পৃষ্ঠা-৬), কিন্তু বাংলাদেশে এ বছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬ শতাংশ। বিশ্বব্যাংক মনে করছে, মূল্যস্ফীতি এবং বাহ্যিক খাতের চ্যালেঞ্জের কারণে ২০২৪ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ৬ শতাংশে হ্রাস পাবে। উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে মজুরি বৃদ্ধি সীমিত থাকবে, ফলে ব্যক্তিগত খরচ হ্রাস পাবে।
আমদানি দমনের কারণে বিনিয়োগ কম হবে, তবে মেগা প্রকল্পের কারণে সরকারি বিনিয়োগ অব্যাহত থাকবে। মূল্যস্ফীতির চাপ কমানো, বাহ্যিক খাত স্বাভাবিকীকরণ, পরিপূরক ইনপুট ঘাটতি দূরীকরণ এবং অনিশ্চয়তা হ্রাসের মাধ্যমে ২০২৫ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি পুনরায় ঊর্ধ্বমুখী হবে বলে সংস্থাটির মতামত (পৃষ্ঠা-২১)। উল্লেখ্য, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৬৩ শতাংশে নেমে এসেছে, যা আগস্টে ছিল ৯ দশমিক ৯২ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংক মূল্যস্ফীতি কমাতে বেশ কিছু কার্যকর পদক্ষেপও নিয়েছে, যা বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনেও আছে।
প্রতিবেদনে আরও আছে, স্থিতিস্থাপক রপ্তানি বৃদ্ধি এবং আমদানি কমানোর ফলে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি কমেছে। ২০২৩ অর্থবছরে কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ডেফিসিট (CAD) ৩ দশমিক ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে নেমে এসেছে, যা ২০২২ অর্থবছরে ছিল ১৮ দশমিক ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। রাজস্বঘাটতি সরকারের লক্ষ্যমাত্রা জিডিপির ৫ দশমিক ৫ শতাংশের মধ্যেই থাকবে বলে আশা করা যাচ্ছে, সঙ্গে রাজস্ব খাতে কিছুটা বৃদ্ধি ঘটবে (পৃষ্ঠা-৬)। ২০২২ অর্থবছরের তুলনায় ২০২৩ অর্থবছরে কৃষি প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ২ থেকে ৩ দশমিক ১ শতাংশে নেমে এলেও একটি শক্তিশালী জনভিত্তিক খাদ্য সঞ্চয় থাকার কারণে খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত হয়েছে (পৃষ্ঠা-৮)। আশা করা যাচ্ছে, বন্যা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত না হলে কৃষি প্রবৃদ্ধি পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হবে (পৃষ্ঠা-২১)। ২০২৩ অর্থবছরে রপ্তানি বৃদ্ধি স্থিতিস্থাপক ছিল, যেহেতু তৈরি পোশাকের বাজার অব্যাহত আছে। পণ্য রপ্তানি আয় ৬ দশমিক ৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, তৈরি পোশাক খাতে রপ্তানি বেড়েছে ১০ দশমিক ৩ শতাংশ (পৃষ্ঠা-১০)। আর্থিক বৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয়েছে, যদিও তা বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারণ করা লক্ষ্যমাত্রা ছুঁতে পারেনি। জুনে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১২ দশমিক ১ শতাংশ, অর্জিত হয়েছে ১০ দশমিক ৫ শতাংশ। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের জন্য আর্থিক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৯ দশমিক ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। ২০২৩ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক ১৩ দশমিক ৪ বিলিয়ন বৈদেশিক মুদ্রা বিক্রি করেছে, ফলে ১৩ শতাংশ নেট ফরেন অ্যাসেট (এনএফএ) কমেছে। কিন্তু নেট ডোমেস্টিক অ্যাসেটে (এনডিএ) ১৬ দশমিক ৯ শতাংশ বৃদ্ধি ঘটেছে। এর কারণ বিস্তৃতভাবে রাজস্বঘাটতির নগদীকরণ, যা ১০ দশমিক ৫ শতাংশ আর্থিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করেছে। (পৃষ্ঠ-১৩)
এ ছাড়া বাংলাদেশের দারিদ্র্য হ্রাসে সাফল্য, বর্তমান অবস্থা এবং করণীয় নিয়ে প্রতিবেদনে একটি বিশেষ অংশ রয়েছে। বাংলাদেশ ২০১৬ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে ১ কোটি ১০ লাখ মানুষকে দারিদ্র্য থেকে বের করে আনতে পেরেছে, আর চরম দারিদ্র্য থেকে বের হয়ে এসেছে ৫৪ লাখ মানুষ (পৃষ্ঠা-২৫)। গত ১২ বছরে বাংলাদেশে দারিদ্র্য হ্রাসের হার সামগ্রিকভাবে দক্ষিণ এশিয়ার দারিদ্র্য হ্রাসের হারের চেয়ে বেশি। সাম্প্রতিক পরিবারের আয় ও ব্যয় জরিপ ডেটা (HIES) থেকে পাওয়া যায়, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দারিদ্র্য হ্রাসে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেছে। ২০১৬ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে দারিদ্র্য এবং চরম দারিদ্র্যের হার প্রতিবছর যথাক্রমে ১ দশমিক ৩ এবং শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ কমে গিয়ে ৩০ ও ৫ শতাংশে পৌঁছেছে। বর্তমানে দরিদ্র পরিবারগুলো ২০১০ সালের অ-দরিদ্র পরিবারগুলোর মতো একই সুবিধা ভোগ করতে পারছে, বিশেষ করে পানি, বিদ্যুৎ, স্যানিটেশন ও উন্নত আবাসনের ক্ষেত্রে (পৃষ্ঠা-৭)। শিশুমৃত্যুর হার, শিশুর অবৃদ্ধিজনিত সমস্যা, বয়ঃসন্ধিকালীন প্রজনন হ্রাসসহ সুস্থতার অ-অর্থনৈতিক মাত্রাগুলো উন্নত হয়েছে (পৃষ্ঠা-২৭)।
বর্তমান অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা থেকে বের হয়ে আসার জন্য বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে কিছু পরামর্শ দিয়েছে। তাদের মতে, রিজার্ভের ঘাটতি এবং মুদ্রাস্ফীতি প্রতিহত করার জন্য মুদ্রা ও বিনিময় হার নীতির পরিবর্তন প্রয়োজন। ক্রমবর্ধমান আর্থিক খাতের দুর্বলতাগুলো মোকাবিলা করার জন্য ব্যাংক তত্ত্বাবধান উন্নত করা, আন্তর্জাতিক মান গ্রহণ করা, সেক্টরজুড়ে করপোরেট গভর্ন্যান্সকে শক্তিশালী করা এবং ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী কাঠামোগত সংস্কার অর্থনৈতিক ঘাটতি পূরণ এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করবে। (পৃষ্ঠা-৭)
বিশ্বব্যাংক আরও জানিয়েছে, ২০২৬ সালে জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হয়ে আসার পর বাংলাদেশকে অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। বাণিজ্য প্রতিযোগিতা জোরদার, দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি সম্প্রসারণ, আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতা জোরদার, বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার জন্য ব্যবসায়িক পরিবেশের ও শাসনকাঠামোর উন্নয়ন—এই ক্ষেত্রগুলোর উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দিলে দারিদ্র্য বিমোচন ত্বরান্বিত হবে এবং সার্বিক উন্নয়ন সাধিত হবে। (পৃষ্ঠা-৭)
৩ অক্টোবর বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট প্রকাশ করেছে বিশ্বব্যাংক। প্রতিবেদনে সংস্থাটি জানিয়েছে, বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ২০২৪ সালে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ হতে পারে। ইতিপূর্বে গত এপ্রিলের রিপোর্টে ২০২৪ সালে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৫ শতাংশ হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছিল বিশ্বব্যাংক। কিন্তু অক্টোবরে প্রকাশিত প্রতিবেদনে প্রত্যাশিত জিডিপি প্রবৃদ্ধি আগের তুলনায় কমে যাওয়ায় নড়েচড়ে বসেছে বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমগুলো। দেশের প্রথমসারির কিছু সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে লেখা প্রতিবেদনগুলো দেখলে মনে হয়, বাংলাদেশের অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়ছে, আর এখান থেকে উত্তরণের কোনো আশা নেই বললেই চলে। বিশ্বব্যাংক এপ্রিল সংখ্যায় জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ২ শতাংশ হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে বলে উল্লেখ করেছে আজকের পত্রিকা, যেখানে মূল প্রতিবেদনে সম্ভাব্য প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৫ শতাংশ বলে উল্লেখ আছে। এ ধরনের তথ্যগত ত্রুটি এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত নিরাশায় ভরা খবর প্রথম শ্রেণির সংবাদমাধ্যমগুলোর কাছ থেকে কাম্য নয়।
গত এপ্রিল ও অক্টোবরের বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট সূক্ষ্মভাবে বিশ্লেষণ করে এমন নৈরাশ্যজনক ও হতাশাব্যঞ্জক কিছু পাওয়া যায়নি; বরং সারা বিশ্ব বর্তমানে যে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, বাংলাদেশেও স্বাভাবিকভাবে তারই প্রভাব পড়েছে বলে প্রতীয়মান হয়। বিশ্বব্যাংক এই অবস্থা থেকে উত্তরণের সম্ভাব্য কিছু উপায়ও উল্লেখ করেছে প্রতিবেদনে।
প্রকৃতপক্ষে, মহামারির ধাক্কা, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি, আর্থিক নীতির কড়াকড়ির কারণে বৈশ্বিক অর্থনীতি বর্তমানে একটি অনিশ্চিত অবস্থায় আছে (পৃষ্ঠা-৮)। ২০২৩ সালে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিও মন্থর, মাত্র ২ দশমিক ১ শতাংশ। অনবরত অর্থনৈতিক নীতির লাগাম টেনে ধরা, উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি এর কারণ (পৃষ্ঠা-৬)। ২০২২ সালের শেষের দিকে এবং ২০২৩ সালের শুরুর দিকে উন্নত দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিও প্রত্যাশার তুলনায় ধীরগতির। যুক্তরাষ্ট্রের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ২০২৩-এ ১ দশমিক ১ শতাংশ থেকে কমে গিয়ে ২০২৪ সালে শূন্য দশমিক ৮ শতাংশ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে (পৃষ্ঠা-৯)।
গত এপ্রিলের ডেভেলপমেন্ট আপডেটে বিশ্বব্যাংক ২০২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ২ শতাংশে নেমে আসবে বলেও আশঙ্কা করেছিল (পৃষ্ঠা-৬), কিন্তু বাংলাদেশে এ বছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬ শতাংশ। বিশ্বব্যাংক মনে করছে, মূল্যস্ফীতি এবং বাহ্যিক খাতের চ্যালেঞ্জের কারণে ২০২৪ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ৬ শতাংশে হ্রাস পাবে। উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে মজুরি বৃদ্ধি সীমিত থাকবে, ফলে ব্যক্তিগত খরচ হ্রাস পাবে।
আমদানি দমনের কারণে বিনিয়োগ কম হবে, তবে মেগা প্রকল্পের কারণে সরকারি বিনিয়োগ অব্যাহত থাকবে। মূল্যস্ফীতির চাপ কমানো, বাহ্যিক খাত স্বাভাবিকীকরণ, পরিপূরক ইনপুট ঘাটতি দূরীকরণ এবং অনিশ্চয়তা হ্রাসের মাধ্যমে ২০২৫ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি পুনরায় ঊর্ধ্বমুখী হবে বলে সংস্থাটির মতামত (পৃষ্ঠা-২১)। উল্লেখ্য, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৬৩ শতাংশে নেমে এসেছে, যা আগস্টে ছিল ৯ দশমিক ৯২ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংক মূল্যস্ফীতি কমাতে বেশ কিছু কার্যকর পদক্ষেপও নিয়েছে, যা বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনেও আছে।
প্রতিবেদনে আরও আছে, স্থিতিস্থাপক রপ্তানি বৃদ্ধি এবং আমদানি কমানোর ফলে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি কমেছে। ২০২৩ অর্থবছরে কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ডেফিসিট (CAD) ৩ দশমিক ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে নেমে এসেছে, যা ২০২২ অর্থবছরে ছিল ১৮ দশমিক ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। রাজস্বঘাটতি সরকারের লক্ষ্যমাত্রা জিডিপির ৫ দশমিক ৫ শতাংশের মধ্যেই থাকবে বলে আশা করা যাচ্ছে, সঙ্গে রাজস্ব খাতে কিছুটা বৃদ্ধি ঘটবে (পৃষ্ঠা-৬)। ২০২২ অর্থবছরের তুলনায় ২০২৩ অর্থবছরে কৃষি প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ২ থেকে ৩ দশমিক ১ শতাংশে নেমে এলেও একটি শক্তিশালী জনভিত্তিক খাদ্য সঞ্চয় থাকার কারণে খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত হয়েছে (পৃষ্ঠা-৮)। আশা করা যাচ্ছে, বন্যা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত না হলে কৃষি প্রবৃদ্ধি পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হবে (পৃষ্ঠা-২১)। ২০২৩ অর্থবছরে রপ্তানি বৃদ্ধি স্থিতিস্থাপক ছিল, যেহেতু তৈরি পোশাকের বাজার অব্যাহত আছে। পণ্য রপ্তানি আয় ৬ দশমিক ৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, তৈরি পোশাক খাতে রপ্তানি বেড়েছে ১০ দশমিক ৩ শতাংশ (পৃষ্ঠা-১০)। আর্থিক বৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয়েছে, যদিও তা বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারণ করা লক্ষ্যমাত্রা ছুঁতে পারেনি। জুনে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১২ দশমিক ১ শতাংশ, অর্জিত হয়েছে ১০ দশমিক ৫ শতাংশ। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের জন্য আর্থিক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৯ দশমিক ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। ২০২৩ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক ১৩ দশমিক ৪ বিলিয়ন বৈদেশিক মুদ্রা বিক্রি করেছে, ফলে ১৩ শতাংশ নেট ফরেন অ্যাসেট (এনএফএ) কমেছে। কিন্তু নেট ডোমেস্টিক অ্যাসেটে (এনডিএ) ১৬ দশমিক ৯ শতাংশ বৃদ্ধি ঘটেছে। এর কারণ বিস্তৃতভাবে রাজস্বঘাটতির নগদীকরণ, যা ১০ দশমিক ৫ শতাংশ আর্থিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করেছে। (পৃষ্ঠ-১৩)
এ ছাড়া বাংলাদেশের দারিদ্র্য হ্রাসে সাফল্য, বর্তমান অবস্থা এবং করণীয় নিয়ে প্রতিবেদনে একটি বিশেষ অংশ রয়েছে। বাংলাদেশ ২০১৬ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে ১ কোটি ১০ লাখ মানুষকে দারিদ্র্য থেকে বের করে আনতে পেরেছে, আর চরম দারিদ্র্য থেকে বের হয়ে এসেছে ৫৪ লাখ মানুষ (পৃষ্ঠা-২৫)। গত ১২ বছরে বাংলাদেশে দারিদ্র্য হ্রাসের হার সামগ্রিকভাবে দক্ষিণ এশিয়ার দারিদ্র্য হ্রাসের হারের চেয়ে বেশি। সাম্প্রতিক পরিবারের আয় ও ব্যয় জরিপ ডেটা (HIES) থেকে পাওয়া যায়, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দারিদ্র্য হ্রাসে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেছে। ২০১৬ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে দারিদ্র্য এবং চরম দারিদ্র্যের হার প্রতিবছর যথাক্রমে ১ দশমিক ৩ এবং শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ কমে গিয়ে ৩০ ও ৫ শতাংশে পৌঁছেছে। বর্তমানে দরিদ্র পরিবারগুলো ২০১০ সালের অ-দরিদ্র পরিবারগুলোর মতো একই সুবিধা ভোগ করতে পারছে, বিশেষ করে পানি, বিদ্যুৎ, স্যানিটেশন ও উন্নত আবাসনের ক্ষেত্রে (পৃষ্ঠা-৭)। শিশুমৃত্যুর হার, শিশুর অবৃদ্ধিজনিত সমস্যা, বয়ঃসন্ধিকালীন প্রজনন হ্রাসসহ সুস্থতার অ-অর্থনৈতিক মাত্রাগুলো উন্নত হয়েছে (পৃষ্ঠা-২৭)।
বর্তমান অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা থেকে বের হয়ে আসার জন্য বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে কিছু পরামর্শ দিয়েছে। তাদের মতে, রিজার্ভের ঘাটতি এবং মুদ্রাস্ফীতি প্রতিহত করার জন্য মুদ্রা ও বিনিময় হার নীতির পরিবর্তন প্রয়োজন। ক্রমবর্ধমান আর্থিক খাতের দুর্বলতাগুলো মোকাবিলা করার জন্য ব্যাংক তত্ত্বাবধান উন্নত করা, আন্তর্জাতিক মান গ্রহণ করা, সেক্টরজুড়ে করপোরেট গভর্ন্যান্সকে শক্তিশালী করা এবং ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী কাঠামোগত সংস্কার অর্থনৈতিক ঘাটতি পূরণ এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করবে। (পৃষ্ঠা-৭)
বিশ্বব্যাংক আরও জানিয়েছে, ২০২৬ সালে জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হয়ে আসার পর বাংলাদেশকে অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। বাণিজ্য প্রতিযোগিতা জোরদার, দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি সম্প্রসারণ, আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতা জোরদার, বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার জন্য ব্যবসায়িক পরিবেশের ও শাসনকাঠামোর উন্নয়ন—এই ক্ষেত্রগুলোর উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দিলে দারিদ্র্য বিমোচন ত্বরান্বিত হবে এবং সার্বিক উন্নয়ন সাধিত হবে। (পৃষ্ঠা-৭)
বিআরটিসির বাস দিয়ে চালু করা বিশেষায়িত বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) লেনে অনুমতি না নিয়েই চলছে বেসরকারি কোম্পানির কিছু বাস। ঢুকে পড়ছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। উল্টো পথে চলছে মোটরসাইকেল। অন্যদিকে বিআরটিসির মাত্র ১০টি বাস চলাচল করায় সোয়া চার হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্প থেকে...
১৬ দিন আগেগাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
২৪ নভেম্বর ২০২৪ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২০ নভেম্বর ২০২৪দেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
২০ নভেম্বর ২০২৪