Ajker Patrika

ভ্রূণ হত্যার মামলা: এআইজি ফারুকীর ডিএনএ পরীক্ষার দাবি ভুক্তভোগীর

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
Thumbnail image

ভ্রূণ হত্যার অভিযোগে পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলার বাদী ডিএনএ পরীক্ষার দাবি জানিয়েছেন। গত ১৬ মার্চ পুলিশ সদর দপ্তরের লজিস্টিকস অ্যান্ড সাপ্লাই শাখার সহকারী পুলিশ মহাপরিদর্শক (এআইজি) মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ফারুকীর বিরুদ্ধে মামলা করেন তিনি। 

গতকাল বুধবার (১৬ মার্চ) মামলাটি তদন্ত করতে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশকে (ডিবি) দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। 

আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলার সময় বাদী অভিযোগ করে বলেন, ‘ফারুকী আমাকে নানাভাবে হয়রানি করছে। সম্পর্কের শুরু থেকে নানা ধরনের কৌশলে আমার সঙ্গে প্রতারণা করেছে। সে একবার আমার গর্ভের সন্তান (ভ্রূণ) হত্যা করেছে। এরপর সদর দপ্তরে অভিযোগ করার পরে আমাকে বিয়ে করেছে। কিন্তু বিয়ের দুই মাসের মাথায় আমাকে ডিভোর্স দিয়েছে।’

মামলার বাদী আরও বলেন, ‘সে (ফারুকী) আমার সন্তানের পরিচয় দিতে চাইছে না। আমি আমার সন্তানের পরিচয় দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি। বাবা হিসেবে তার যে দায়িত্ব সেই দায়িত্ব পালনের দাবি করছি। গত নভেম্বর মাসে জন্ম নেওয়া আমার একমাত্র সন্তানের পিতৃপরিচয় দরকার। যদি তার বাচ্চা না হয় তাহলে ডিএনএ টেস্ট করা হোক। আমি ডিএনএ টেস্ট করতে প্রস্তুত। সে আমাকে নানাভাবে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে।’

হুমকি এবং মামলার বিষয়ে বক্তব্যের জন্য মহিউদ্দীন ফারুকীর সরকারি ফোনে নম্বরে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তিনি জবাব দেননি।
 
বিভিন্ন লোক দিয়ে হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করে বাদী বলেন, ‘আমি যত কিছুই করি না কেন, প্রমাণ করতে পারব না যে সে এগুলো করেছে। সে সরাসরি যোগাযোগ করছে না। বিভিন্ন জনকে দিয়ে আমাকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে।’

ফারুকীর হাতে নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাকে গর্ভবতী অবস্থায় ফারুকী নির্যাতন করেছে। যার প্রভাব পরে আমার সন্তানের ওপর পড়েছে। যার কারণে সে জন্মের সময়ে অনেক অসুস্থ ছিল। ১০ দিন তাকে বাংলাদেশ স্পেশালিস্ট হাসপাতালের এনআইসিইউতে রেখে চিকিৎসা করানো হয়েছে। আমিও মরতে মরতে বেঁচে আছি।’

গত মঙ্গলবার ঢাকার মহানগর হাকিম রাজেশ চৌধুরীর আদালতে ভ্রূণ হত্যার অভিযোগে মামলা করা হয়। একই দিন আগামী ৮ মে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন আদালত।

মামলায় আসামির নামের বাইরে কোনো পরিচয় উল্লেখ না থাকলেও জানা গেছে, তিনি পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী পুলিশ মহাপরিদর্শক (এআইজি)। 

মামলায় অভিযোগ করা হয়, ২০১৯ সালে মহিউদ্দিন ফারুকীর সঙ্গে বাদীর ফেসবুকে বন্ধুত্ব হয়। আগস্টে তাঁরা দেখা করেন। মহিউদ্দিন ফারুকী ওই নারীকে জানান, তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক ভালো না। তাঁকে বিয়ে করলে তিনি স্ত্রীকে তালাক দেবেন। ওই নারী প্রথমে প্রস্তাব নাকচ করেন। কিন্তু পরে মহিউদ্দিন ফারুকীর কথায় প্রলুব্ধ হন। 

ওই বছর ৩০ সেপ্টেম্বর মহিউদ্দিন ফারুকী হঠাৎ করে ওই নারীর বাসায় যান। এরপর থেকে বিভিন্ন অজুহাতে বাসায় যাতায়াত করেন। ৯ অক্টোবর ওই নারীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে শারীরিক সম্পর্ক হয়। ২০২০ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি ওই নারীর জন্মদিনে মহিউদ্দিন ফারুকী তাঁকে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করান। এরপর বিয়ের প্রলোভন দিয়ে সম্পর্ক চলতে থাকে। ২০২০ সালের ১৭ মার্চ ওই নারী তাঁকে গর্ভধারণের কথা জানান। 

চিকিৎসক তাঁকে ভিটামিন ও আয়রন ট্যাবলেট গ্রহণের পরামর্শ দেন। ১৮ মার্চ মহিউদ্দিন ফারুকী তাঁর জন্য কিছু ওষুধ নিয়ে আসেন। কৌশলে তা ওই নারীকে খাওয়ান। রাতে তাঁর পেটে ব্যথা হয়। পরদিন সকালে এসে মহিউদ্দিন ফারুকী আবার তাঁকে ওষুধ খাওয়ানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু তিনি ব্যর্থ হন। পরে ফারুকী অকপটে স্বীকার করেন ওষুধগুলো গর্ভপাতের। ওই নারী গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে ২০ মার্চ ঢাকার একটি হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে তাঁর গর্ভপাত করানো হয়। 

এরপর ২০২১ সালের ১৬ এপ্রিল ওই নারী আবারও গর্ভবতী হন। ২৮ এপ্রিল মহিউদ্দিন ফারুকীকে সে কথা জানান। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তাঁকে হুমকি দেন মহিউদ্দিন ফারুকী। ওই নারী তাঁকে বিয়ে করতে বলেন, না হলে আইনের আশ্রয় নেবেন বলে জানান। পরে গত ৬ জুন ওই নারীকে বিয়ে করেন ফারুকী। তাঁদের একটি সন্তান হয়। কিন্তু এখন বিভিন্নভাবে নির্যাতন করছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত