Ajker Patrika
সাক্ষাৎকার

আমাকে হকির হামজা ডাকলে গর্বিত হই

দুর্দান্ত ফর্মে আছেন আমিরুল। ছবি: হকি ফেডারেশন

মাথায় ঝাঁকড়া চুল থাকায় কেউ কেউ তাঁকে হামজা চৌধুরী ভেবে বসেন। আসলে নাম তাঁর আমিরুল ইসলাম। ভারতে চলমান জুনিয়র হকি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের হয়ে আলো ছড়াচ্ছেন ২১ বছর বয়সী এই খেলোয়াড়। দুই ম্যাচ খেলে দুটিতেই করেছেন হ্যাটট্রিক। আজকের পত্রিকাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি শোনালেন ড্রাগ অ্যান্ড ফ্লিক স্পেশালিস্ট হওয়ার গল্প। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আনোয়ার সোহাগ

আনোয়ার সোহাগ, ঢাকা
আপডেট : ০২ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০: ২৪

প্রশ্ন: জুনিয়র হকি বিশ্বকাপে প্রথম দুই ম্যাচে হ্যাটট্রিক। ম্যাচসেরাও হয়েছেন। কোনটি এগিয়ে রাখবেন?

আমিরুল: অস্ট্রেলিয়ার চেয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে হ্যাটট্রিকটা এগিয়ে রাখব। ম্যাচটা একটু কঠিন ছিল। কারণ, আমরা ৩-০ তে পিছিয়ে ছিলাম। সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়ানোটা সহজ ছিল না। খেলোয়াড়দের কৃতিত্ব দেব, আমরা সবাই এক হয়ে খেলার কারণে ড্র করতে পেরেছি।

প্রশ্ন: তিন গোলে পিছিয়ে থাকার পরও ঘুরে দাঁড়ানোর ব্যাপারে কতটুকু আত্মবিশ্বাসী ছিলেন?

আমিরুল: প্রথমত মাঠে নামার আগে আমাদের যে ব্রিফিং ছিল, সেখানে আলোচনা হয়, আমরা যদি কোনোভাবে গোল হজম করি, হাল ছাড়ব না। শেষ সেকেন্ড পর্যন্ত চেষ্টা করে যাব। ৩ গোল হজম করার পর কোচিং স্টাফের সবাই বলেছে, আমাদের সামর্থ্য আছে ঘুরে দাঁড়ানোর। মানসিকভাবে অনেক শক্তিশালী ছিলাম আমরা। সেই বিশ্বাস নিয়ে আমরা ঘুরে দাঁড়াতে পেরেছি।

প্রশ্ন: বিশ্বকাপে যাওয়ার আগে হ্যাটট্রিকের ভাবনা ছিল?

আমিরুল: প্রথমত বিশ্বকাপ অবশ্যই আমাদের জন্য আত্মমর্যাদার। প্রথমবারের জন্য আমরা এখানে অংশগ্রহণ করছি, এটা গর্বের বিষয়। আমি যে দুটো ম্যাচে হ্যাটট্রিক করব, সেই ভাবনা মাথায় ছিল না। কোচ আমাকে সুযোগ দিলে সেটা সম্পূর্ণভাবে কাজে লাগানোর চেষ্টা করব এবং এটাই ছিল আমার ভাবনা। কারণ, দল সবার আগে।

প্রশ্ন: আপনাকে ঘিরে আস্থার জায়গাটা এখন বেড়েছে...

আমিরুল: হ্যাঁ। এটা দেখতে পাচ্ছি। অবশ্যই খুশি যে কোচ আমার ওপর আস্থা রাখছেন। এর প্রতিদান দেওয়ার চেষ্টা করছি ৷ আমি অবশ্যই নিজের সেরাটা দেব এবং দলকে সহায়তা করব।

প্রশ্ন: কোচ কীভাবে আপনাকে অনুপ্রাণিত করেন?

আমিরুল: এত বড় মঞ্চে প্রথমবার খেলতে এসেছি। সেখানে মানসিকভাবে শক্তিশালী না হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন আসলে। তাই আমার আত্মবিশ্বাসে এক ভাগও যদি ঘাটতি থাকে, তখন সেটা নিয়ে কোচের সঙ্গে আলোচনা করি। তিনি (সিগফ্রাইড আইকম্যান) অনেক বড় মাপের কোচ। সব সময় আমাকে সহায়তা করেন।

প্রশ্ন: ৬টি গোলই এসেছে পেনাল্টি কর্নার থেকে। পেনাল্টি কর্নারে কীভাবে দক্ষ হয়ে উঠলেন?

আমিরুল: সবচেয়ে বড় অবদান আমি বলব যে বিকেএসপির রাজিব স্যার, আনোয়ার স্যার ও আমাদের সাবেক কোচ গোবিনাথন কৃষ্ণমূর্তি স্যার। তাঁরাই আমাকে অনুপ্রেরণা, পরামর্শ ও সাহস দিয়েছেন। টেকনিক্যালি ও স্ট্রেন্থলি—সবদিক থেকে আমি তাঁদের সহায়তা পেয়েছি। এরপর অনুশীলনে প্রায় ১৫০ বার ড্রাগ ফ্লিক করার চেষ্টা করি।

প্রশ্ন: ড্রাগ অ্যান্ড ফ্লিক করার ক্ষেত্রে প্রথম ভাবনাটা কী থাকে?

আমিরুল: আমি যেন গোল করতে পারি, সেটাই আমার প্রথম ভাবনা থাকে। আমি চেষ্টা করি যে যতটুকু সুযোগ পাব, সেটা কাজে লাগানোর। এ বিষয়ে খুব মনোযোগ দিই। সতীর্থরাও এটা নিয়ে আরও সচেতন থাকে; বিশেষ করে ফরোয়ার্ডরা খুব চেষ্টা করে পেনাল্টি কর্নার আদায় করতে। কারণ, পেনাল্টি কর্নার পেলেই সেটা গোলে পরিণত করার সুযোগ থাকে। আমি চেষ্টা করি সতীর্থদের আস্থার প্রতিদান দেওয়ার।

প্রশ্ন: হকিতে কীভাবে উঠে এলেন?

আমিরুল: ২০১৫ সালে আমি যখন ক্লাস সিক্সে পড়ি, তখন আন্তস্কুল একটা টুর্নামেন্ট হয়েছিল। তো সেখানে হকির স্টিক নিয়ে একটু অনুশীলন করছিলাম। আমার আঙ্কেল হকির কোচিং করাতেন। তাঁর মাধ্যমেই বিকেএসপিতে ভর্তি হওয়া। ছোটবেলা থেকে খেলাধুলার প্রতি বেশি আগ্রহ ছিল। ফুটবল বেশি খেলা হতো আমার। হকিস্টিক যখন হাতে নিলাম, তখন এটাই ভালো লাগতে শুরু করে। অথচ ২০১৫ সালের আগে হকি কী জিনিস, সেটা জানতামই না। হকির জন্য অনেক কিছু পেয়েছি।

প্রশ্ন: মানুষ আপনাকে হকির হামজা বলে। বিষয়টা কেমন লাগে?

আমিরুল: আসলে ঝাঁকড়া চুল আমার অনেক আগে থেকেই। হামজা ভাই অবশ্যই একজন অসাধারণ খেলোয়াড়। আমার মতে ফুটবলের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর তিনি। কারণ, তাঁর মাধ্যমে বাংলাদেশ ফুটবলকে কিন্তু চিনতে শুরু করেছে। আমি অবশ্যই গর্বিত, হামজা ভাইয়ের মতো একজন খেলোয়াড়ের সঙ্গে আমাকে নিয়ে আলোচনা করা হয়। বিষয়টা আমি ইতিবাচকভাবে নিই। সতীর্থরাও আমার সঙ্গে উপভোগ করে।

প্রশ্ন: ফ্রান্সের বিপক্ষে (আজকের) ম্যাচ নিয়ে পরিকল্পনা কী?

আমিরুল: প্রথমত আমরা অনেক আত্মবিশ্বাস নিয়ে নিজেদের সেরাটা দিয়ে খেলব। ফ্রান্স অবশ্যই শক্তিশালী, আমরা তাদের সম্মান করি। এটা মাথায় রাখলেও হাল ছেড়ে দেব না। চেষ্টা করব সেরা ফলটা বের করে আনার।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...