Ajker Patrika

পাটকলের হাজার কোটি টাকার সম্পদ লুটপাটের অভিযোগ পাট শ্রমিক দলের

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আজ বুধবার বিকেলে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে সংবাদ সম্মেলন করে জাতীয়বাদী পাট শ্রমিক দল। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ বুধবার বিকেলে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে সংবাদ সম্মেলন করে জাতীয়বাদী পাট শ্রমিক দল। ছবি: আজকের পত্রিকা

বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের অযাচিত পদক্ষেপের কারণে বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশনের (বিজেএমসি) হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ লুটপাটের অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলন করেছে জাতীয়তাবাদী পাট শ্রমিক দল। আজ বুধবার বিকেলে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে জাতীয়তাবাদী পাট শ্রমিক দল।

বর্তমান সরকারের বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় কর্তৃক জুট মিলের ৩২৪ একর জমি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে বিনা মূল্যে দেওয়া, বিজেএমসির মালিকানায় থাকা করিম বিল্ডিং অন্য প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে দেওয়া ও জুট মিলসের সম্পদ স্বার্থন্বেষী মহলকে বিনা মূল্যে দেওয়াসহ নানান অভিযোগ তুলে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জাতীয়তাবাদী পাট শ্রমিক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাঈদ আল নোমান। এ সময় নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় না আসা পর্যন্ত বিজেএমসির মূল্যবান সম্পদের ওপর কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান তিনি।

লিখিত বক্তব্যে সাঈদ আল নোমান বলেন, পতিত শেখ হাসিনা সরকার ২০২০ সালের ১ জুলাই ২৫টি জুট মিল বন্ধ করে দেয়, যেখানে লাখ লাখ লোক কর্মসংস্থান হারিয়েছে। এ ছাড়া প্রতিবছর বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন হতে বঞ্চিত করা হয়েছে। দেশ ও জনগণের স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে মনগড়া পলিসি তৈরি করে শেখ হাসিনা সরকার বন্ধ করা ১৩-১৪টি পাটকল নামেমাত্র ৩০ বছরের দীর্ঘমেয়াদি লিজ প্রদান করে। দুর্নীতি ও অনিয়ম করে অনেক কম লিজ মানিতে ভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে লিজ দেওয়া হয়। এতে করে একদিকে সরকারি সম্পদ নষ্ট করা হয়েছে, অন্যদিকে কম লিজ মানির কারণে সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে।

সাঈদ আল নোমান আরও বলেন, লিজকৃত মিলগুলোর গ্রেস পিরিয়ড ৯ মাস করা হয়, যা পরবর্তীকালে লিজগ্রহীতার সঙ্গে যোগসাজশ করে ৯ মাসকে বৃদ্ধি করে ৩০ মাস করা হয়। উৎপাদনকৃত চালু মিলে এক মাসের পরিবর্তে ৩০ মাস গ্রেস পিরিয়ড কেন করা হলো, তা বোধগম্য নয়। এটা বাংলাদেশের নজিরবিহীন এবং এতে অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। এসব কার্যক্রমের মূল হোতা হিসেবে ছিলেন বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী এবং সাবেক পাটসচিব আব্দুর রউফ, অভিযোগ জাতীয়বাদী পাট শ্রমিক দলের সভাপতির।

মিলগুলোর মেশিন ও যন্ত্রপাতি স্ক্র্যাপ হিসেবে কেজি দরে ন্যূনতম মূল্যে বিক্রি করে জাতীয় সম্পদ ধ্বংস করা হচ্ছে বলে জানান পাট শ্রমিক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাঈদ আল নোমান। তিনি বলেন, মিলের মূল্যবান জায়গাজমি দখল ও মিল অভ্যন্তরে মূল্যবান গাছ লুটপাটের স্বর্গরাজ্য কায়েম করা হয়েছে। এমনভাবে ধ্বংস করা হয়েছে, যা আর কখনো পুনরুদ্ধার সম্ভব হবে না।

সাঈদ আল নোমান আরও বলেন, আদমজী জুট মিলের বিল্ডিংয়ে বর্তমান সরকার বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের আদমজী অ্যান্ড সন্স নামে একটি প্রতিষ্ঠান তৈরি করে এসব বিল্ডিংয়ের ভাড়া আদায় করছে, অথচ প্রকৃতপক্ষে মালিকানা থাকার কথা বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশনের (বিজেএমসির)। বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব বিলকিছ জাহান রিমি ঢাকা শহরের বিজেএমসির একমাত্র প্রতিষ্ঠান করিম চেম্বার (৬ষ্ঠ তলা) বিল্ডিংটি স্বার্থান্বেষী মহলকে বিনা মূল্যে দেওয়ার চক্রান্ত করছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

বর্তমান সরকার পূর্বের সরকারের আচরণের ন্যায় মিলের প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকার মূল্যের সম্পদকে বিনা মূল্যে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে দেওয়ার অভিযোগ তুলে সাঈদ আল নোমান বলেন, চট্টগ্রাম হাফিজ জুট মিলস, আমিন জুট মিলস, ঢাকার লতিফ বাওয়ানী এবং জুট ফাইবার মিলসসহ প্রায় ৩২৪ একর জায়গা স্থাপনাসহ সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে বিনা মূল্যে দেওয়া হয়েছে, যার বাজারমূল্য প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়া প্রাইভেটাইজেশন কমিশনের মাধ্যমে ৭টি মিল বেসরকারি উদ্যোক্তাদের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে, যার জমির পরিমাণ ১৯৭.৮৬ একর। এভাবে আওয়ামী ফ্যাসিস্টের আচরণ চলতে পারে না এবং দেশের জাতীয় সম্পদ রক্ষার্থে এসব অশুভ হস্তক্ষেপ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান তিনি।

সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক আবুল খায়ের খাজার সঞ্চালনায় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসাইন, সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম খান নাসিম, জাকির হোসেন প্রমুখ।

লিখিত বক্তব্য পাঠ শেষে বক্তারা বলেন, কারখানা মানে সামাজিক প্রতিষ্ঠান ও রাষ্ট্রীয় সম্পদ। পাটকল বন্ধ করা কোনো সমাধান হতে পারে না। কোনো কারখানা বন্ধের পক্ষে আমরা নই। শ্রমিকদের আত্মকর্মসংস্থানের জন্য একটা কমিশন গঠন করা উচিত। আমরা পাটের পুনরুজ্জীবন চাই। জুট মিলসের জমি যেন ব্যক্তির না হয়ে যায়। পতিত ফ্যাসিস্ট সরকার প্রতিবেশী রাষ্ট্রের স্বার্থরক্ষার জন্য মিলস বন্ধ করাসহ নানান পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিল, সেই সময় মেশিনগুলোও লুটপাট হয়েছে, গাছ কেটে কেটেও বিক্রি করা হয়। পাটশিল্পকে ধ্বংস করার জন্য পাটকল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল বলে জানান তাঁরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...