Ajker Patrika

সংকটাপন্ন খালেদা জিয়া

  • ভেন্টিলেশন সাপোর্টে আছেন খালেদা জিয়া: আজম খান
  • অবস্থা স্থিতিশীল, মন্তব্য মির্জা ফখরুলের।
  • মোদির উদ্বেগ, চিকিৎসা সহায়তায় প্রস্তুত।
‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০২ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ৫৬
খালেদা জিয়া। ফাইল ছবি
খালেদা জিয়া। ফাইল ছবি

রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অবস্থা সংকটাপন্ন। দলটির ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান গতকাল সোমবার দুপুরে হাসপাতালের সামনে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের এ কথা জানিয়ে বলেন, ‘রোববার রাত থেকে খালেদা জিয়া খুব ক্রিটিক্যাল কন্ডিশনে (সংকটাপন্ন অবস্থায়) চলে গেছেন।...বর্তমানে তিনি ভেন্টিলেশন সাপোর্টে আছেন।’

আহমেদ আজম খানের বক্তব্যের পর অবশ্য বিকেলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংবাদমাধ্যমের কাছে ‘খালেদা জিয়ার অবস্থা স্থিতিশীল আছে’ বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন গণমাধ্যমে ম্যাডামকে নিয়ে সংবাদ প্রচারিত হচ্ছে, এটা সঠিক নয়। কেউ এতে বিভ্রান্ত হবেন না।’

দেশি-বিদেশি চিকিৎসকদের নিয়ে গঠিত মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শে চিকিৎসা চলা এবং বিদেশে নেওয়ার সার্বিক প্রস্তুতির মধ্যে গতকাল চীনের পাঁচজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় সহায়তা করতে ঢাকায় এসেছেন। চীন থেকে আরও কয়েকজন বিশেষজ্ঞ আসছেন আজ মঙ্গলবার।

বিএনপির চেয়ারপারসনের অবস্থা জানতে উদ্গ্রীব দলীয় নেতা-কর্মী, শুভানুধ্যায়ীরা রাজধানীর বসুন্ধরা এলাকার এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনে ভিড় করছেন। সেখানে অবস্থান করছেন সংবাদকর্মীরাও। এমন পরিস্থিতিতে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান গতকাল দুপুরে হাসপাতালের সামনে সাংবাদিকদের বলেন, ‘রোববার রাত থেকে খালেদা জিয়া খুব ক্রিটিক্যাল কন্ডিশনে চলে গেছেন। এখনো অবস্থা ক্রিটিক্যাল আছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানে খালেদা জিয়া ভেন্টিলেশন সাপোর্টে আছেন। সিসিইউ থেকে আইসিইউ, এরপরে ভেন্টিলেশন বা লাইফ সাপোর্ট, যা-ই বলেন। আমি এগুলোর বাইরে বলব যে ম্যাডাম খুব ক্রিটিক্যাল কন্ডিশনে আছেন।’

গত ২৩ নভেম্বর থেকে এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ৭৯ বছর বয়সী খালেদা জিয়া। সেদিন পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরে তাঁর ফুসফুসে সংক্রমণের কথা জানিয়েছিলেন চিকিৎসকেরা। কিডনির সমস্যার কারণে তাঁর ডায়ালাইসিসও করানো হয়েছে। এ ছাড়া শরীরে পানি জমেছে।

গত কয়েক দিনে বিএনপির চেয়ারপারসনের অবস্থার বড় কোনো পরিবর্তন হয়নি। তবে গত শনিবার তিনি অল্প কথা বলেন বলে ঘনিষ্ঠ স্বজনেরা জানিয়েছিলেন। মির্জা ফখরুল বলেছিলেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। তবে এখনই তাঁর অবস্থা বিদেশে নেওয়ার মতো স্থিতিশীল নয়।

গতকাল বিকেলে বিএনপির চেয়ারপারসনের স্বাস্থ্যের সর্বশেষ পরিস্থিতি জানিয়ে মির্জা ফখরুল সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) অবস্থা স্থিতিশীল আছে। চিকিৎসকদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে তাঁর চিকিৎসা চলছে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে ম্যাডামকে নিয়ে সংবাদ প্রচারিত হচ্ছে, এটা সঠিক নয়। কেউ এতে বিভ্রান্ত হবেন না।’

গতকাল সন্ধ্যায় খালেদা জিয়ার চিকিৎসা বিষয়ে বৈঠক করেন তাঁর জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা। বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাঁর ডায়ালাইসিস শুরু করা হয় বলে জানিয়েছে একটি সূত্র। ওই সূত্র বলছে, দেশি-বিদেশি চিকিৎসকদের সমন্বয়ে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা চলছে। চিকিৎসকদের দলে চীনও যুক্ত হয়েছে। মেডিকেল বোর্ডের বৈঠকে লন্ডন থেকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তাঁর স্ত্রী জোবাইদা রহমানও অংশ নেন। দুই ঘণ্টাব্যাপী ওই বৈঠক থেকে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার পরবর্তী করণীয় ঠিক করা হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বোর্ডের এক চিকিৎসক বলেন, ‘ম্যাডামের শারীরিক অবস্থা আমরা অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছি। ডায়ালাইসিস চলছে। প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে চিকিৎসক দল পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানাবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘সোমবারও কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রতিনিয়ত ফলোআপ করা হচ্ছে।’

হাসপাতালে বিএনপির চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা মো. মাসুদুর রহমান, খালেদা জিয়ার ছোট ছেলের স্ত্রী শামিলা রহমান, ভাই শামীম এস্কান্দার ও তাঁর স্ত্রী কানিজ ফাতিমা সার্বক্ষণিক থাকছেন। এ ছাড়া খালেদা জিয়ার গৃহপরিচারিকা ফাতেমা ও স্টাফ রূপা আক্তার সঙ্গে আছেন।

এভারকেয়ার হাসপাতালে নিরাপত্তাব্যবস্থা আরও জোরদার করা হয়েছে। হাসপাতাল প্রাঙ্গণে মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য। গতকাল রাতে নিরাপত্তা পরিস্থিতি সরেজমিনে পরিদর্শন ও তদারক করতে হাসপাতালে যান ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী।

স্থায়ী কমিটির বৈঠক

রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে গতকাল রাতে বৈঠক করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। পরে কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, বৈঠকে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি, দলের নির্বাচনী প্রস্তুতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের বিষয়ে জানতে চাইলে সালাহউদ্দিন বলেন, ‘এই বিষয়ে চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন কথা বলবেন।’

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরার বিষয়ে জানতে চাইলে সালাহউদ্দিন বলেন, ‘উনি শিগগির দেশে ফিরবেন।’

আরোগ্য কামনায় দোয়া অব্যাহত

খালেদা জিয়ার আরোগ্য কামনায় রাজধানীসহ সারা দেশে দোয়া ও প্রার্থনা অব্যাহত রয়েছে। রোগমুক্তি কামনায় ছাদকায়ে জারিয়া হিসেবে দুটি ছাগল জবাই করে দুস্থদের দান করেছেন দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। গতকাল দুপুরে মোহাম্মদপুরে দলের কেন্দ্রীয় নেতা মাহবুব ইসলামের বাসভবনে দোয়া অনুষ্ঠান শেষে ছাদকা দেওয়া হয়। এর আগে খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনা করে বিশেষ দোয়া করা হয়।

খালেদা জিয়া দীর্ঘ সময় ধরে বিভিন্ন রোগশোকের সঙ্গে যুদ্ধ করে চলেছেন। বিগত সরকারের আমলে খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর জন্য বারবার আবেদন করা হলেও তাতে সাড়া মেলেনি। এর মধ্যেই ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর অকালমৃত্যুর শোক সইতে হয়। চব্বিশের জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের পর কারামুক্ত হলে বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ পান বিএনপির চেয়ারপারসন। গত ৮ জানুয়ারি উন্নত চিকিৎসার জন্য কাতারের আমিরের এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে যুক্তরাজ্যে যান খালেদা জিয়া। লন্ডনের এক হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে গত ৬ মে দেশে ফেরেন তিনি। দেশে ফেরার পরও অসুস্থতার কারণে হাসপাতাল-বাড়ি করতে হয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে।

উদ্বেগ জানিয়ে মোদির টুইট

খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনা করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। একই সঙ্গে তাঁর চিকিৎসার যেকোনো প্রয়োজনে ভারত সহায়তা করতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন তিনি।

গতকাল রাতে নরেন্দ্র মোদি এক্সে এক পোস্টে বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে পেরে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। তিনি অনেক বছর ধরে বাংলাদেশের জনগণের জন্য অবদান রেখেছেন। তাঁর দ্রুত আরোগ্য লাভের জন্য আমাদের আন্তরিক প্রার্থনা ও শুভকামনা রইল। আমরা যেভাবে পারি, আমাদের পক্ষ থেকে সম্ভাব্য সকল ধরনের সহায়তা প্রদানের জন্য ভারত প্রস্তুত রয়েছে।’

সরকারের সিদ্ধান্ত

খালেদা জিয়াকে অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ঘোষণা করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আজ-কালের মধ্যে এ বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হতে পারে বলে সরকারের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানিয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শিগগির দেশে ফিরবেন তারেক রহমান: সালাহউদ্দিন

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০২ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৫৫
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ছবি: সংগৃহীত
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ছবি: সংগৃহীত

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান শিগগির দেশে ফিরবেন বলে জানিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ।

সোমবার (১ ডিসেম্বর) রাতে গুলশান কার্যালয়ে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা জানান। বৈঠকে সমসাময়িক রাজনৈতিক পরিস্থিতি, নির্বাচনের প্রস্তুতিসহ নানা বিষয়ে কথা হয়েছে বলে জানান সালাহউদ্দিন।

তারেক রহমানের দেশে ফেরার বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে সালাহউদ্দিন বলেন, তিনি শিগগির দেশে ফিরবেন।

এ সময় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের বিষয়ে জানতে চাইলে সালাহউদ্দিন বলেন, এই বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন কথা বলবেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় যুক্ত হলো চীনা বিশেষজ্ঞ দল

ইউএনবি, ঢাকা
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ছবি: সংগৃহীত
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ছবি: সংগৃহীত

বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় চীনের একটি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দল যুক্ত হয়েছে। গতকাল রোববার (৩০ নভেম্বর) রাতে তাঁর শারীরিক অবস্থা আরও অবনতি হওয়ার পর চীনা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা দেশে এসেছেন। তবে তিনি এখনো সংকটাপন্ন অবস্থায় রয়েছেন।

গত ২৩ নভেম্বর থেকে খালেদা জিয়া এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি আছেন। লিভার, কিডনি ও হৃদ্‌যন্ত্র-সংক্রান্ত বহু জটিলতার জন্য তাঁকে হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।

গতকাল রাতে তাঁর অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে ভেন্টিলেটরে নেওয়া হয়। আজ সোমবার পাঁচ সদস্যের চীনা বিশেষজ্ঞ দল ঢাকায় এসে পৌঁছায়। তারা হাসপাতালের মেডিকেল বোর্ডের সঙ্গে বৈঠক করে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা পর্যালোচনা এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসার বিষয়ে স্থানীয় চিকিৎসকদের সঙ্গে আলোচনা করে।

হাসপাতালের মেডিকেল বোর্ডের প্রধান ও কার্ডিওলজিস্ট শাহাবউদ্দিন তালুকদার বলেন, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার ওপর নির্ভর করে মূল বিশেষজ্ঞ দল পরে ঢাকায় পৌঁছাবে।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নিশ্চিত করেছেন যে, খালেদা জিয়া এখনো সংকটাপন্ন অবস্থায় আছেন এবং দেশি-বিদেশি চিকিৎসকদের সমন্বয়ে তাঁর চিকিৎসা চলছে।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সবাইকে গুজব বা বিভ্রান্তিকর তথ্য উপেক্ষা করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, খালেদা জিয়া এভারকেয়ার হাসপাতালে নিবিড় চিকিৎসাধীন আছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

অনেক আগেই দেশ ভারতের দখলে যেত, খালেদা জিয়ার কারণে সম্ভব হয়নি: তাহের

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। ফাইল ছবি
নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। ফাইল ছবি

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দৃঢ়তার কারণে দেশ ভারতের দখলে যেতে পারেনি বলে মন্তব্য করেছেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। তিনি বলেছেন, ‘বিগত ১৫ বছরে দেশ যেভাবে ভারতীয় দখলে গিয়েছিল, এটা আরও অনেক আগেই চলে যেতে পারত। কিন্তু উনার দৃঢ়তার কারণেই সেটা সম্ভব হয়নি।’

আজ সোমবার রাজধানীর গুলশানে ইউনাইটেড হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা শেষে বাসায় ফেরার আগে এক সংক্ষিপ্ত ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।

আগামী নির্বাচনের জন্য বৃহৎ রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আরও অনেক বেশি সমঝোতা, বোঝাপড়া এবং নীতিগত ঐক্য প্রয়োজন উল্লেখ করে তাহের বলেন, ‘আজকের দেশের এই অবস্থাতে জাতীয় রাজনীতি এবং আগামী নির্বাচনের ব্যাপারে বৃহৎ দলগুলোর ভিতরে আরও অনেক বেশি বোঝাপড়া প্রয়োজন। আমি আবারও বলছি, বাংলাদেশের আজকের এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের আগামী রাজনীতি এবং আগামী নির্বাচনের জন্য বৃহৎ রাজনৈতিক দলগুলোর ভিতরে আরও অনেক বেশি সমঝোতা, বোঝাপড়া এবং নীতিগত ঐক্য প্রয়োজন।’

জামায়াতের এই নেতা দেশবাসী, রাজনৈতিক দল, সকলের প্রতি আহ্বান জানান, যেন সবাই মিলে ভবিষ্যতে আরও অনেক ধৈর্য, প্রজ্ঞার সঙ্গে দেশকে প্রাধান্য দিয়ে সবার কর্তব্য নির্ধারণ করেন।

আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে এ সাক্ষী দিতে পারি, বেগম জিয়া একান্তভাবেই একজন দেশপ্রেমিক, গণতান্ত্রিক নেত্রী ছিলেন। বিগত ১৫ বছরে দেশ যেভাবে ভারতীয় দখলে গিয়েছিল, এটা তার অনেক আগেই চলে যেতে পারত। কিন্তু উনার দৃঢ়তার কারণেই সেটা সম্ভব হয়নি।’

মোহাম্মদ তাহের আরও বলেন, ‘আজকে উনি কোনো দলের নেত্রী নন, দেশের সমগ্র মানুষের নেত্রী। উনার প্রতি আবেগ-ভালোবাসা আমাদের আছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে তাঁর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাচ্ছি ও আরোগ্য কামনা করছি। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে ইতিমধ্যেই তাঁর সুস্থতা কামনা করে আমরা অনেক প্রোগ্রাম করেছি।’

উল্লেখ্য, সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের হার্টে চারটি ব্লক নিয়ে ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি হন। কয়েক দিনের চিকিৎসা শেষে সোমবার সুস্থ হয়ে নিজ বাসায় ফিরে যান তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নির্বাচনের আগে দেশের পরিস্থিতি ঘোলাটে করার চেষ্টা করা হচ্ছে: নাহিদ ইসলাম

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
রোববার সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। ছবি: স্ক্রিনশট
রোববার সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। ছবি: স্ক্রিনশট

নির্বাচনের আগে দেশের পরিস্থিতি ঘোলাটে করার চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক মো. নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমরা দেখছি, সামনে নির্বাচনের আগে নানা ধরনের পরিস্থিতি ঘোলাটে করার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমরা যে সংস্কার কার্যক্রম শুরু করেছিলাম, সংস্কারের অগ্রযাত্রা শুরু করেছিলাম, সেটাকে নানাভাবে বাধাগ্রস্ত করা হয়েছে। একটি দল প্রকাশ্যে সংস্কারের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। আরেকটি দল গোপনে সংস্কারের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। এ কারণে আমরা সংস্কার নিয়ে একটা সমঝোতায় পৌঁছাতে পারি নাই।’

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সংহতি জানানোর কারণে সংযুক্ত আরব আমিরাতে কারারুদ্ধ প্রবাসীদের মুক্ত হওয়ায় শোকরানা ও দোয়া অনুষ্ঠানে নাহিদ ইসলাম এই অভিযোগ করেন। আজ সোমবার বিকেলে রাজধানীর বাংলামোটরে এনসিপির অস্থায়ী কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এ দোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

দুটি দল মুক্তিযুদ্ধ ও ধর্ম নিয়ে রাজনীতিতে খেলছে বলেও অভিযোগ করেন এনসিপির আহ্বায়ক। তিনি বলেন, একটি দল মুক্তিযুদ্ধ কার্ড খেলছে, মুক্তিযুদ্ধ বনাম রাজাকার। আরেকটি দল ধর্ম কার্ড খেলছে, ইসলাম বনাম ইসলামবিরোধী।

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনা করে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘খালেদা জিয়া প্রচণ্ডভাবে অসুস্থ। আমরা তাঁর আরোগ্য কামনা করি। বাংলাদেশের গণতন্ত্র এবং সার্বভৌমত্বের লড়াইয়ে তাঁর যে ভূমিকা, সে ভূমিকা এই জাতি মনে রাখবে। আমরা আশা করব, তিনি আমাদের মধ্যে আরও অনেক দিন বেঁচে থাকবেন।’

জুলাই অভ্যুত্থানে সমর্থন জানিয়ে আরব আমিরাতে কারারুদ্ধ হওয়া প্রবাসীদের বিষয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘গণ-অভ্যুত্থানের সময় যখন একটা পর্যায়ে আমরা বাংলাদেশের রাজপথে নামতে পারছিলাম না। আমাদের ডিবি অফিসে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সে সময় বৈশ্বিকভাবে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে জনমত তৈরি করেছিলেন প্রবাসে থাকা আমাদের ছাত্র, শ্রমিক এবং অন্যান্য পেশাজীবী মানুষেরা। পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি দেশে যেখানে বাংলাদেশিরা রয়েছেন, তাঁরা প্রত্যেকে কথা বলেছেন, প্রত্যেকে সেখানে রাজপথে নেমেছেন, কর্তৃপক্ষের কাছে জানিয়েছে এবং অনলাইনে তাঁরা ক্যাম্পেইন করেছেন।’

আরব আমিরাতে যাঁরা কারারুদ্ধ হয়েছিলেন, মুক্তির পর তাঁদের দেশে ফিরিয়ে এনে পুনর্বাসনের আহ্বান জানান নাহিদ। তিনি বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে তাঁরা রাজপথে নেমেছেন। কিন্তু সে দেশের আইনে এটা আইনবহির্ভূত কাজ হওয়ায় তাঁদেরকে গ্রেপ্তর হতে হয়েছে। আমরা সরকারের কাছে আহ্বান জানাব, তাঁদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা যেন করা হয়। একজন ভাই জেলেই মৃত্যুবরণ করেছেন। আমরা তাঁর আত্মার মাগফিরাত কামনা করি।’

এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন বলেন, আমিরাত থেকে দেশে ফেরা কারাবন্দী জুলাই যোদ্ধাকে সংবর্ধনা দেবে এনসিপি।

সামান্তা শারমিন অভিযোগ করে বলেন, ‘কারাবন্দী জুলাই যোদ্ধাদের পরিবারের সঙ্গে সরকার অসহযোগিতামূলক আচরণ করেছে এবং সরকারকে আরও জনবান্ধব হওয়ার আহ্বান জানাই।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত