Ajker Patrika

মন ভরে যাক লোভাছড়ার নান্দনিক শোভায়

সুমন্ত গুপ্ত
মন ভরে যাক লোভাছড়ার নান্দনিক শোভায়

অনেক দিন ধরে ইচ্ছা ছিল, সিলেটের সীমান্তবর্তী অঞ্চল মেঘালয়ের খাসিয়া জৈন্তিয়া পাহাড়ের পূর্ব অংশে যাব। সেখানে কানাইঘাট উপজেলার স্বচ্ছ পানির নদী লোভাছড়ায় নৌকা নিয়ে ঘুরে বেড়াব। কিন্তু সময়ের অভাবে তা আর হয়ে উঠছিল না। শেষ পর্যন্ত ঠিক করে ফেললাম, বেরিয়ে পড়ব আসছে শুক্রবারেই। চেষ্টা করেও বৃহস্পতিবার অর্থাৎ সপ্তাহের শেষ দিন সকালে অফিস থেকে বেরোনো সম্ভব হলো না। সেই গতানুগতিক ধারায় রাত ৮টার দিকে বের হলাম অফিস থেকে। সকালবেলা যে বেরিয়ে পড়তে হবে।

সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার একেবারে উত্তর-পূর্ব সীমান্ত এলাকায় খাসিয়া-জৈন্তা পাহাড়ের পাদদেশে রয়েছে বালুভরা বেশ কিছু স্বচ্ছ পানির নদী। এগুলোর মধ্যে অন্যতম লোভাছড়া নদী। নদীর নাম লোভাছড়া হলে প্রেমে না পড়ে উপায় থাকে না। সেই প্রেমিকার সঙ্গে দেখা করতেই রওনা হলাম। গাড়িতে উঠতেই চালক ফরহাদ জানতে চাইলেন, কোন পথ ধরে আমরা লোভাছড়ায় যাব। প্রথমে কানাইঘাট। সিলেট নগরী থেকে কানাইঘাট যাওয়ার কয়েকটি পথ আছে। সিলেট-জাফলং মহাসড়কের ওপর দরবস্ত বাজার থেকে হাতের ডান দিকে রাস্তা চলে গেছে কানাইঘাট পর্যন্ত। গাড়িতে ঘণ্টা দেড়েক সময় লাগে। কানাইঘাট উপজেলা সদর সুরমা নদীর তীরে অবস্থিত। এই অঞ্চলের প্রাকৃতিক দৃশ্য সুন্দর। নদীর ঘাট থেকে নৌকা নিয়ে যাত্রা শুরু করতে হয় লোভাছড়ার দিকে।

কিন্তু আমাদের রুট ছিল সিলেট নগরী থেকে দরবস্ত বাজার হয়ে ছোট ও বড় চতুল অতিক্রম করে হাতের বাঁ দিক দিয়ে বরবন্দ ও সুরই ঘাটের পর লোভা বাগানের নিজস্ব রাস্তা দিয়ে। এখানে বলে রাখা ভালো, লোভা বাগানের রাস্তা দিয়ে যেতে হলে বাগান কর্তৃপক্ষের অনুমতি অবশ্যই নিতে হবে।

লোভাছড়া-(7)

আমরা চলছি যাত্রাপথের দূরত্ব ঘুচিয়ে। রাস্তার দুপাশের দৃশ্য মনভোলানো—ঘন সবুজ ধানখেত, কিছু দূরে উঁচু-নিচু টিলা, কোথাও কোথাও বাঁশবাগান, কাশফুলের বন, দূরে নীলাভ পাহাড় উঁকি দিচ্ছে যেন। আমরা গাড়ির ভেতর থেকে প্রকৃতি দেখতে ব্যস্ত। তবে বেরসিক রাস্তার জন্য মাঝে মাঝে বেগ পেতে হচ্ছে। আমাদের কনিষ্ঠ ভ্রমণসঙ্গীর ক্ষুধা পাওয়ায় গাড়ি থামাতে হবে। রাস্তার পাশের দোকান থেকে রুটি আর ডিম পোচ নিয়ে গাড়িতে ফিরলাম।

লোভাছড়া-(13)

দেখতে দেখতে আমরা একসময় এসে পৌঁছলাম লোভা বাগানের গেটে, সেখান থেকে রাস্তার দুই দিকে চা-গাছের মনোরম দৃশ্য এবং সর্পিল পাহাড়ি রাস্তা অতিক্রম করে পৌঁছাই বাংলাদেশের দ্বিতীয় ঝুলন্ত সেতুর সামনে। ১৯২৫ সালে ইংরেজরা লোভাছড়ায় যাতায়াতের জন্য এটি নির্মাণ করেছিল। আকর্ষণীয় এই সেতুর ওপর দাঁড়িয়ে লোভাছড়ার নান্দনিক শোভা উপভোগ করা সত্যিই অসাধারণ। আমরা যে যার মতো করে ছবি তুলতে লাগলাম। এরপর চলে গেলাম চা-বাগান ঘুরে দেখার জন্য। অসাধারণ সেই দৃশ্য। চা-পাতাগুলো যেন সূর্যরশ্মির সঙ্গে খেলা করছে। পদব্রজে গিয়ে হাজির হলাম সাহেবের বাংলোয়।

লোভাছড়া-(9)

এরপরের গন্তব্য লোভা নদী। চলেছি পরিচ্ছন্ন সুরমা নদী দিয়ে। লোভার মুখ হচ্ছে সুরমা ও লোভাছড়া নদীর সংগমস্থল। সুরমা নদী দিয়ে আমাদের ইঞ্জিনচালিত নৌকা ছুটে চলে লোভাছড়া নদী অভিমুখে। নদীর বুকে ভিড় করা নৌকা নেই। একটি-দুটি ইঞ্জিনচালিত নৌকা হঠাৎ হঠাৎ ঢেউ খেলিয়ে চলে যাচ্ছে। দূরে পাহাড়ের বুকে সূর্যের আলো। এসব মিলিয়ে যেন আমাদের এক অচিন দেশ ভ্রমণ! সুরমা পেরিয়ে লোভাছড়ায় পড়তেই শুরু হলো এক চঞ্চলতা। বেশ জোর হাওয়া ধাক্কা দিল আমাদের নৌকায়, ছুঁয়ে গেল আমাদের শরীর। এ এক অন্য রকম মুগ্ধতা। দেখতে দেখতে সূর্যদেবের পাটে যাওয়ার সময় ঘনিয়ে এল। আর আমরা ফিরে চললাম শহর পানে।

যাবেন কীভাবে

সিলেট শহর থেকে কানাইঘাটে যেতে হলে সিলেট-তামাবিল রোড অথবা জকিগঞ্জ রোড ধরে কানাইঘাট উপজেলা সদরে যাওয়া যায়। কানাইঘাট বাজার ঘেঁষে প্রবাহিত সুরমা নদীর দুই পারে দুটি বাসস্ট্যান্ড রয়েছে। উপজেলা সদর থেকে সুরমা নদী দিয়ে নৌকায় ঝুলন্ত ব্রিজে যেতে পারবেন। এতে দেড়-দুই ঘণ্টা সময় লাগবে। ইঞ্জিনচালিত নৌকা দিয়ে কানাইঘাট বাজার থেকে ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা খরচ পড়বে। তবে রিজার্ভ ছাড়াও নৌকা পাওয়া যাবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...