Ajker Patrika

কেন ওকিনাওয়ার মানুষেরা এত বেশি বাঁচে?

ফিচার ডেস্ক, ঢাকা 
জাপানের ওকিনাওয়া দ্বীপপুঞ্জের অধিবাসীরা। এ দ্বীপপুঞ্জে প্রচুর শতবর্ষী মানুষ বসবাস করেন। ছবি: হ্যালো কেয়ার ডট কম
জাপানের ওকিনাওয়া দ্বীপপুঞ্জের অধিবাসীরা। এ দ্বীপপুঞ্জে প্রচুর শতবর্ষী মানুষ বসবাস করেন। ছবি: হ্যালো কেয়ার ডট কম

আপনাকে যদি জিজ্ঞাসা করি, কত দিন বাঁচতে চান, কী বলবেন? বেশির ভাগ মানুষ বলবে, অনেক দিন। কিন্তু এই ‘অনেক দিন’ ঠিক কত দিন, তা আমরা কেউই বলতে পারি না। সুস্থ থাকতে মোট কথা বেঁচে থাকতেই মানুষের যত তাগিদ। আমাদের জীবনধারা, চলাফেরার একটা বড় অংশ বা অভ্যাসের ওপরই মূলত বেশি দিন বেঁচে থাকা নির্ভর করে। জাপানের ওকিনাওয়া দ্বীপপুঞ্জ। এটি বিভিন্ন কারণে ব্যতিক্রমী দীর্ঘ জীবন লাভকারী বাসিন্দাদের আবাসস্থল হিসেবে পরিচিত। সেখানে শতবর্ষী মানুষের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য এবং গবেষকেরা দীর্ঘদিন ধরে এর পেছনের রহস্য উদ্ঘাটনে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন।

ওকিনাওয়ার বাসিন্দাদের জীবনধারা ও খাদ্যাভ্যাসসহ নানা কারণ অনুসন্ধান করা হয়েছে। এই দ্বীপপুঞ্জটি মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্যে সমৃদ্ধ। তাই একে জাপানের হাওয়াই নামে ডাকা হয়। ১৬০টিরও বেশি ছোট-বড় দ্বীপ নিয়ে গঠিত এই অঞ্চলটির মোট জনসংখ্যা প্রায় ১ দশমিক ৪ মিলিয়ন। ওকিনাওয়া দ্বীপপুঞ্জের প্রধান দ্বীপে রয়েছে এর রাজধানী নাহা। এটি সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। কিন্তু এত প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং সমৃদ্ধ ইতিহাস থাকা সত্ত্বেও, অনেক ভ্রমণকারী এই দ্বীপটির অস্তিত্ব সম্পর্কে জানেন না। কারণ মানচিত্রে এটি খুব কমই দেখা যায়।

দীর্ঘ জীবনের মূলমন্ত্র

ইকিগাইয়ের নাম শুনেছেন? একটি বহুল আলোচিত জাপানি বই ‘ইকিগাই দ্য জাপানিজ সিক্রেট টু আ লং অ্যান্ড হ্যাপি লাইফ’। বিবিসির মতে, ওকিনাওয়ার বাসিন্দাদের মধ্যে ইকিগাই নামক একটি বিশেষ ধারণা রয়েছে, যা জীবনে একটি অনন্য শক্তিশালী উদ্দেশ্যবোধ থাকার প্রতি নির্দেশ করে। তাঁরা বস্তুবাদী বা ক্ষমতা অর্জনের লক্ষ্যের দিকে মনোনিবেশ করেন না। বরং প্রকৃতির সঙ্গে সংযোগ স্থাপন, সক্রিয় থাকা এবং প্রিয়জনদের সঙ্গে সময় কাটানোর মাধ্যমে জীবনযাপন করেন। ‘ইকিগাই’ নামের বইখানি আমাদের জানিয়েছে, স্থানীয়রা প্রচুর পরিমাণে সবজি ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্টসমৃদ্ধ খাবার খেয়ে থাকেন। জাপানের সাধারণ জনসংখ্যার তুলনায় সে দ্বীপটির মানুষ অনেক কম চিনি খান।

জাপানের দীর্ঘ জীবন লাভকারী বাসিন্দাদের অন্যতম আবাসস্থল হিসেবে পরিচিত ওকিনাওয়া দ্বীপপুঞ্জের একাংশ। ছবি: ভিজিট ওকিনাওয়া জাপান
জাপানের দীর্ঘ জীবন লাভকারী বাসিন্দাদের অন্যতম আবাসস্থল হিসেবে পরিচিত ওকিনাওয়া দ্বীপপুঞ্জের একাংশ। ছবি: ভিজিট ওকিনাওয়া জাপান

ওকিনাওয়ার মানুষেরা কোনো খাবারই পেট ভরে খান না। বরং তাঁরা পাকস্থলীর ৮০ শতাংশ পূর্ণ করেন খাবার দিয়ে। ২০ শতাংশ খালি রাখেন। এই অভ্যাসকে বলা হয় হারা হাচি বু। এই পুরো প্রক্রিয়াটি আসলে নিজেদের শরীরের প্রতি মনোযোগ দেওয়ার এক দারুণ উপায়। ওকিনাওয়ার মানুষেরা সাধারণত কম ভারী ব্যায়াম করেন।

কেউ আবার ভিন্ন মতের

ওকিনাওয়া দ্বীপপুঞ্জটি মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্যে সমৃদ্ধ। তাই একে জাপানের হাওয়াই নামে ডাকা হয়। ছবি: ভিজিট ওকিনাওয়া জাপান
ওকিনাওয়া দ্বীপপুঞ্জটি মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্যে সমৃদ্ধ। তাই একে জাপানের হাওয়াই নামে ডাকা হয়। ছবি: ভিজিট ওকিনাওয়া জাপান

তবে এই স্বাস্থ্যকর অভ্যাসের পাশাপাশি স্থানীয়দের জীবনযাত্রায় কিছুটা নির্লিপ্ত মনোভাবও দেখা যায়। ভ্রমণ লেখক পল মার্শালের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী, তিনি স্থানীয় এক পার্কে এক ডজনেরও বেশি শতবর্ষী পুরুষকে লাঠি দিয়ে বল মারতে এবং ঘাসে ভরা মাঠে বলের পেছনে তাঁদের দৌড়াতে দেখেছিলেন। তিনি আরও উল্লেখ করেন, তিনি সেখানে তাঁদের অনেককেই চেইন স্মোকিং, বিয়ার পান এবং ভাজা মুরগি খেতে দেখেছেন। এটি আসলে স্থানীয়দের সহজ-সরল জীবনযাত্রার উদাহরণ। পল মার্শালকে সেখানে ঐতিহ্যবাহী চাল থেকে তৈরি পানীয় আওয়ামোরি দেওয়া হয়েছিল, যাকে তিনি ‘মিষ্টি, কিডনি-পরিষ্কারকারী জল’ হিসেবে বর্ণনা করেন। এমনকি তিনি কৌতুক করে বলেন, এটিই হয়তো দীর্ঘ জীবনের আসল রহস্য! পল মার্শাল আরও লক্ষ্য করেন, স্থানীয় ক্ল্যাসিক খাবারগুলোতে টিনজাত প্রক্রিয়াজাত মাংস দেখা যায়, যা সাধারণত স্বাস্থ্যকর জীবনের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়।

ইকিগাইয়ের ১০টি নীতি

১. সক্রিয় থাকুন। কাজ থেকে অবসর নেবেন না।

২. তাড়াহুড়ো না করে ধীরগতির জীবনযাপন করুন।

৩. পেট ৮০ শতাংশ পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত খান।

৪. ভালো বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটান।

৫. দৈনিক হালকা ব্যায়ামের মাধ্যমে ফিট থাকুন।

৬. হাসুন এবং আপনার চারপাশের মানুষকে ভালোবাসা দিন।

৭. প্রকৃতির সঙ্গে পুনরায় সংযোগ স্থাপন করুন।

৮. যা কিছু আপনার দিনকে উজ্জ্বল করে এবং আপনাকে প্রাণবন্ত করে তোলে, সেগুলোর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন।

৯. বর্তমানে বাঁচুন।

১০. আপনার ইকিগাই অনুসরণ করুন।

সূত্র: ডেইলি মেইল

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...