Ajker Patrika

গর্ভবতী ছিলেন ট্রাম্পের স্ত্রী, বাজিতে হেরে ১০ হাজার ডলারের শিশুখাদ্য পাঠান এপস্টেইন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৪ নভেম্বর ২০২৫, ২২: ২৪
জর্জিয়ায় জন্ম নেওয়া অভিনেত্রী ও গায়িকা মারলা ম্যাপলস ১৯৯৩ সালের অক্টোবরে ট্রাম্পের কন্যা টিফানির জন্ম দেন। ছবি: এএফপি
জর্জিয়ায় জন্ম নেওয়া অভিনেত্রী ও গায়িকা মারলা ম্যাপলস ১৯৯৩ সালের অক্টোবরে ট্রাম্পের কন্যা টিফানির জন্ম দেন। ছবি: এএফপি

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে কুখ্যাত যৌন অপরাধী জেফরি এপস্টেইনের সম্পৃক্ততার আরও কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের তত্ত্বাবধায়ক কমিটি (হাউস ওভারসাইট কমিটি) এসব তথ্য প্রকাশ করেছে। এপস্টেইন ফাইলসংশ্লিষ্ট এসব নথিতে দেখা গেছে, বহুবার বহুভাবে ট্রাম্পের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।

সর্বশেষ পাওয়া তথ্য থেকে জানা গেছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বাজিতে হেরে ১০ হাজার ডলার মূল্যের শিশুখাদ্যে ভরা একটি ট্রাক পাঠিয়েছিলেন জেফরি এপস্টেইন।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দি ইনডিপেনডেন্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৬ সালের জুলাই মাসে ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন লেখক দীপক চোপড়ার সঙ্গে ই-মেইল বিনিময়ে এপস্টেইন এই বাজির কথা জানান। তখন ট্রাম্পের প্রথম নির্বাচনের মাত্র কয়েক মাস বাকি। চোপড়া ২৯ জুলাই এপস্টেইনকে ই-মেইল করে ফেসটাইম বা স্কাইপে কথা বলার আগ্রহ প্রকাশ করেন এবং জিজ্ঞেস করেন, ‘আপনি কি মারলা ম্যাপলসকে চেনেন?’

তিন মিনিট পর এপস্টেইন জবাব দেন, ‘হ্যাঁ, চিনি।’ এরপরই তিনি লেখেন, ‘যখন মারলা ডোনাল্ডকে জানালেন যে তিনি অন্তঃসত্ত্বা...তখন আমি ১০ হাজার ডলারের বাজিতে হেরে যাই এবং তাঁকে শিশুখাদ্যে ভরা একটা ট্রাক পাঠাই।’

এপস্টেইন আরও জানান, সেই ঘটনার পর থেকে আর ম্যাপলসের সঙ্গে তাঁর কথা হয়নি।

জর্জিয়ায় জন্ম নেওয়া অভিনেত্রী ও গায়িকা মারলা ম্যাপলস ১৯৯৩ সালের অক্টোবরে ট্রাম্পের কন্যা টিফানির জন্ম দেন। এর কিছুদিন আগেই ট্রাম্প তাঁর প্রথম স্ত্রী ইভানাকে তালাক দেন। কয়েক মাস পর নিউইয়র্কের প্লাজা হোটেলে ম্যাপলস-ট্রাম্প বিয়ে করেন। সিএনএনের আর্কাইভ ফুটেজ অনুযায়ী, বিয়ের অনুষ্ঠানের অতিথির তালিকায় জেফরি এপস্টেইনও ছিলেন। ১৯৯৯ সালে ম্যাপলস-ট্রাম্পের বিচ্ছেদ হয়।

ম্যাপলস ও চোপড়ার পূর্বপরিচয়ের তথ্যও জানা গেছে। ২০১০ সালে ‘সেজেস অ্যান্ড সায়েন্সেস সিম্পোজিয়াম’-এ তাঁরা একসঙ্গে বক্তব্য দেন এবং ২০১৬ সালে ম্যাপলস চোপড়ার সঙ্গে একটি ছবি পোস্ট করে তাঁকে ‘বন্ধু’ বলে উল্লেখ করেন।

ট্রাম্পকে নিয়ে এসব ই-মেইল প্রসঙ্গে দীপক চোপড়া দি ইনডিপেনডেন্টকে বলেন, ‘চিকিৎসক-রোগীর গোপনীয়তার মতোই এসব বিষয় নিয়ে আমি সব সময় সতর্ক। তবে চলমান তদন্ত সঠিকভাবে সম্পন্ন হয়ে সত্য বেরিয়ে আসুক—এটাই আশা করি। আমি যা জানি, সেটা অনুমোদিত কর্মকর্তাদের জানাতে প্রস্তুত। নইলে প্রেক্ষাপট না জেনে কেবল অনুমানই চলতে থাকবে।’

এর আগে গত বুধবার হাউস ওভারসাইট কমিটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে আরও কিছু ই-মেইল প্রকাশ করে। এতে এপস্টেইন, তাঁর ঘনিষ্ঠ সহযোগী ঘিসলেন ম্যাক্সওয়েল ও লেখক মাইকেল উলফের মধ্যে আদান-প্রদান করা বার্তা ছিল। কয়েকটি ই-মেইলে এপস্টেইনকে বারবার ট্রাম্পের নাম উল্লেখ করতে দেখা গেছে।

২০১১ সালের এপ্রিল মাসে লেখা একটি ই-মেইলে এপস্টেইন লিখেছিলেন, ‘আমি চাই তুমি বোঝো, যে কুকুরটা এখনো ঘেউ ঘেউ করেনি, সে হচ্ছে ট্রাম্প।’ এরপর তিনি (নাম অপ্রকাশিত) লেখেন, ‘একটি মেয়ে তার (ট্রাম্পের) সঙ্গে আমার বাড়িতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় কাটিয়েছে। কিন্তু সে (ট্রাম্প) তার নাম একবারও প্রকাশ করেনি।’ এর জবাবে ম্যাক্সওয়েল লিখেছিলেন, ‘আমি আসলে এটা নিয়েই ভাবছিলাম...।’

এদিকে নতুন এই ই-মেইলগুলো প্রকাশের পর ট্রাম্প–এপস্টেইন সম্পর্ক নিয়ে আবারও বিতর্ক তৈরি হয়েছে।

তবে এখন পর্যন্ত ট্রাম্পের বিরুদ্ধে এপস্টেইন বা ম্যাক্সওয়েলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোনো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ আনেনি মার্কিন কর্তৃপক্ষ।

এদিকে কিছুদিন আগে মামলাটির কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করেছিল ট্রাম্প প্রশাসন। তাদের দাবি, এই মামলার বিষয়ে আর কোনো তথ্য প্রকাশ করার নেই। কিন্তু এর ঠিক চার মাস পর এই নতুন তথ্য সামনে এল।

ট্রাম্প একাধিকবার বলেছেন, এপস্টেইনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে তাঁর কোনো ধারণা ছিল না। ১৯৯০-এর দশক থেকে ২০০০-এর শুরুর দিকে তাঁদের মধ্যে যোগাযোগ ছিল, তবে ২০০৪ সালের দিকে তাঁদের সম্পর্কের অবনতি ঘটে।

নিউইয়র্ক টাইমসের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯০-এর দশকে অন্তত সাতবার এপস্টেইনের বিমানে ভ্রমণ করেছেন ট্রাম্প। গত জুলাইয়ে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০৩ সালে এপস্টেইনের ৫০তম জন্মদিন উপলক্ষে একটি অশ্লীল চিঠি পাঠিয়েছিলেন ট্রাম্প—যেখানে ছিল হাতে আঁকা একজন নগ্ন নারীর ছবি ও কিছু কৌতুকপূর্ণ বার্তা।

ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চিঠিটি ছিল জন্মদিনের একটি ‘বিশেষ’ অ্যালবামের অংশ। এপস্টেইনের জন্মদিন উপলক্ষে তাঁর সাবেক সঙ্গী ঘিসলেন ম্যাক্সওয়েল এটি তৈরি করেছিলেন। চিঠিটিতে ট্রাম্পের নামসহ টাইপরাইটারে লেখা একটি কথোপকথন রয়েছে। একজন নগ্ন নারীর অবয়বে চিঠিটি বাঁধাই করা ছিল। ওই নারীর স্তন, যৌনাঙ্গসহ স্পর্শকাতর অংশে ‘ডোনাল্ড’ স্বাক্ষরও ছিল।

চিঠির শেষ লাইনে এপস্টেইনের উদ্দেশে লেখা ছিল, ‘শুভ জন্মদিন—প্রতিটি দিন হোক আরও একটি চমৎকার গোপন রহস্য।’ তবে ট্রাম্প চিঠিটি ‘নকল’ বলে দাবি করেন এবং ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের বিরুদ্ধে মামলা করেন।

নতুন এসব ই-মেইলের বিষয়ে হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলাইন লেভিট বলেন,‘বিরক্তিকর আচরণের জন্য এক দশকেরও আগে এপস্টেইনকে মার-এ-লাগো থেকে বের করে দিয়েছিলেন ট্রাম্প। এর আগে ২০১৯ সালে ট্রাম্পও বলেছিলেন, এপস্টেইনের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ‘অনেক আগেই’ শেষ হয়ে গেছে।

তবে নতুন প্রকাশিত এসব ই-মেইলে দেখা গেছে, এপস্টেইন দাবি করছেন, তিনি ‘কখনো’ মার-এ-লাগোর সদস্য ছিলেন না।

এদিকে, গত বুধবার হাউস ডিসচার্জ পিটিশনের চূড়ান্ত ভোট সম্পন্ন হয়েছে। এখন এপস্টেইনের সব নথি প্রকাশে কংগ্রেসের পূর্ণাঙ্গ ভোট বাধ্যতামূলক করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

রাতে মাত্র ২ ঘণ্টা ঘুমান জাপানের নতুন প্রধানমন্ত্রী, ভোর ৩টায় ডাকেন বৈঠক

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৪ নভেম্বর ২০২৫, ২২: ২৪
জাপানের নতুন প্রধানমন্ত্রী সানে তাকাইচি। ছবি: বিবিসি
জাপানের নতুন প্রধানমন্ত্রী সানে তাকাইচি। ছবি: বিবিসি

জাপানের নতুন প্রধানমন্ত্রী সানে তাকাইচি জানিয়েছেন, প্রতিরাতে তিনি গড়ে মাত্র দুই ঘণ্টা ঘুমান এবং অনেক সময় উপদেষ্টাদের ভোর ৩টায় বৈঠকে ডাকেন। তবে এই তথ্য প্রকাশ্যে আসার পর জাপান জুড়ে আবারও আলোচনায় এসেছে দেশটির অতিরিক্ত কর্মচাপ, ক্লান্তি এবং অতিরিক্ত কাজের কারণে মৃত্যুর দীর্ঘদিনের সমস্যা।

শুক্রবার যুক্তরাজ্যভিত্তিক ইনডিপেনডেন্ট জানিয়েছে, গত সপ্তাহে টোকিওতে ভোররাতের এক বৈঠক নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েন তাকাইচি। ‘ভোর তিনটার স্টাডি সেশন’ নামে সেই বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয় বাজেট কমিটির শুনানির মাত্র ছয় ঘণ্টা আগে।

সংসদীয় কমিটির এক শুনানিতে তাকাইচি নিজেই বলেছেন, ‘এখন আমি প্রায় দুই ঘণ্টা ঘুমাই, কখনো কখনো বড়জোর চার ঘণ্টা। এতে ত্বকেরও ক্ষতি হচ্ছে বোধ হয়।’ তাকাইচির কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, জাপানের দীর্ঘ কর্মঘণ্টার সংস্কৃতির বিরুদ্ধে তিনি কী পদক্ষেপ নেবেন। সেই প্রশ্নের জবাবেই তিনি এমন কথা বলেন।

তবে এই বিষয়ে সাধারণ মানুষ এবং বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, প্রধানমন্ত্রীর এমন আচরণ দেশের অতিমাত্রায় কর্মনির্ভর করপোরেট সংস্কৃতিকে আরও উৎসাহিত করতে পারে।

উল্লেখ্য, গত অক্টোবরে তাকাইচি জাপানের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হন এবং দায়িত্ব নেওয়ার সময় প্রতিশ্রুতি দেন, তিনি শুধু ‘কাজ, কাজ, আর কাজ’ করবেন। এখনো তিনি সরকারি বাসভবনে ওঠেননি। দাবি করেছেন, বাসায় তাঁর ফ্যাক্স মেশিন নষ্ট হয়ে যাওয়ায় ভোর রাতেই তিনি সরকারি বাসভবনে গিয়ে ৯টার বৈঠকের জন্য ব্রিফিং পড়েন।

তবে সমালোচকেরা বলছেন, এই ঘটনাই দেখিয়ে দিয়েছে—সরকারগুলো জাপানের কঠোর কর্মসংস্কৃতি বদলাতে ক্রমাগত ব্যর্থ হয়েছে। দেশে অনেক কর্মীকে দিনের দীর্ঘ কাজ শেষে সহকর্মীদের সঙ্গে সামাজিকতা করতেও বাধ্য করা হয়, যা মানসিক চাপ আরও বাড়ায়। এর মধ্যে আবার সরকারের ‘ওভারটাইম’ সীমা বাড়ানোর আলোচনা জনমনে নতুন উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।

তাকাইচি অবশ্য আশ্বাস দিয়েছেন, যে কোনো পরিবর্তনেই শ্রমিকদের স্বাস্থ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। তিনি বলেছেন, ‘যদি এমন পরিবেশ তৈরি করতে পারি যেখানে মানুষ সন্তান বা পরিবারকে সময় দেওয়ার পাশাপাশি কাজ, অবসর আর বিশ্রামের মধ্যে ভারসাম্য রাখতে পারে—সেটাই আদর্শ।’

এদিকে তাকাইচির ভোর রাতের বৈঠককে ‘উন্মাদনা’ বলে আখ্যা দেশটির দিয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী দলের নেতা ইয়োশিহিকো নোদা। তিনি বলেন, ‘তিনি কাজ করতে চাইলে করতে পারেন, কিন্তু অন্যদের জড়ানো ঠিক নয়। সবাই তো ওই সময়ে ঘুমিয়ে থাকে। দেশের শীর্ষ নেতার এমন মনোভাব দুঃখজনক।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

একটি সাইকেলযাত্রা শেষ করতে ৪০ বছর লাগল তিন বন্ধুর

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
দক্ষিণ চিলির প্রত্যন্ত পাতাগোনিয়া অঞ্চলের রাস্তা ধরে গন্তব্যের দিকে যাচ্ছেন তিন বন্ধু। ছবি: বিবিসি
দক্ষিণ চিলির প্রত্যন্ত পাতাগোনিয়া অঞ্চলের রাস্তা ধরে গন্তব্যের দিকে যাচ্ছেন তিন বন্ধু। ছবি: বিবিসি

১৯৮৫ সালে চিলির পুন্তা আরেনাস থেকে আলাস্কার অ্যানকারেজ পর্যন্ত প্রায় ১৭ হাজার মাইলের এক দুর্দান্ত মাউন্টেন বাইক অভিযানে নেমেছিলেন তিন স্কটিশ বন্ধু—সোফি ট্র্যাফোর্ড, রোনা হালবার্ট এবং ক্রেগ সোয়ান। তবে দক্ষিণ চিলির প্রত্যন্ত পাতাগোনিয়া অঞ্চলের একটি অংশে তখন কোনো সড়ক ছিল না। ফলে তাঁদের বাধ্য হয়ে একটি ফেরি নিতে হয়েছিল এবং যাত্রা পরিকল্পনা অনুযায়ী সেই অংশটি তাঁদের অসম্পূর্ণ থেকে যায়।

শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) বিবিসি জানিয়েছে, চার দশক পর আবারও একত্র হলেন তিন বন্ধু। গত ৪০ বছরে পাতাগোনিয়ার সেই দুর্গম এলাকায় প্রায় ৮০০ মাইল নতুন রাস্তা তৈরি হয়েছে। এই সুযোগেই তিন বন্ধু আবারও মিলিত হয়ে সেই অসম্পূর্ণ যাত্রাটি সম্পন্ন করার সিদ্ধান্ত নেন। দীর্ঘ বছরের ব্যবধানে তাঁদের বয়স বর্তমানে ৬২ বছর হয়ে গেলেও চ্যালেঞ্জটি গ্রহণের জন্য তাঁরা যথেষ্ট উদ্দীপ্ত ছিলেন।

ষাটোর্ধ্ব বয়সে সম্প্রতি ২৬ দিনের কঠিন এই বাইকযাত্রা সম্পন্ন করে ক্রেগ সোয়ান বলেছেন, ‘চল্লিশ বছর পরেও আমরা একটি যাত্রা শেষ করলাম—এটাই বলে দেয় আমাদের মধ্যে বন্ধুত্ব কতটা গভীর।’

চিলির বিখ্যাত কারেতেরা অস্ট্রাল রোড ধরে দক্ষিণ দিকে সাইকেল চালিয়ে ভিলা ও’হিগিন্স নামের ছোট্ট এক শহরে পৌঁছে তাঁরা তাঁদের বহু বছর আগের স্বপ্নযাত্রাটি অবশেষে সম্পন্ন করেন। এই যাত্রার মাধ্যমে তাঁরা স্কটল্যান্ডের ফোর্থ ভ্যালির ম্যাগিজ ক্যানসার সেন্টার এবং এপিলেপসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের জন্য তহবিল সংগ্রহ করেছেন।

ক্রেগ সোয়ান, সোফি ট্র্যাফোর্ড এবং রোনা হালবার্টের বর্তমান বয়স ৬২ বছর। ছবি: বিবিসি
ক্রেগ সোয়ান, সোফি ট্র্যাফোর্ড এবং রোনা হালবার্টের বর্তমান বয়স ৬২ বছর। ছবি: বিবিসি

তিন বন্ধুর মধ্যে সোফি ট্র্যাফোর্ড থাকেন স্কটল্যান্ডের স্টার্লিং-এর কাছাকাছি ব্যালফ্রনে। বর্তমানে তিনি করপোরেট ফাইন্যান্সে কর্মরত। সোফি জানান, এই যাত্রাটি ছিল তাঁর জীবনের সবচেয়ে কঠোর শারীরিক চ্যালেঞ্জ। এপিলেপসির কারণে তাঁর ছেলে হেক্টরের আকস্মিক মৃত্যু হয়েছিল। পাতাগোনিয়ার পাহাড়, হিমবাহ-উৎপন্ন নদী আর অনাবিল প্রকৃতি তাঁকে তাঁর ছেলের কাছাকাছি থাকার অনুভূতি দিয়েছে। সোফি বলেন, ‘হেক্টর এই জায়গাগুলো ভীষণ ভালোবাসত।’

আরেক বন্ধু রোনা হালবার্ট জানিয়েছেন, স্তন ক্যানসারের চিকিৎসার পর তিনি আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছিলেন। তবে তিন বন্ধুর এই পুনর্মিলন ও অসমাপ্ত পথ পাড়ি দেওয়া তাঁর জন্য ছিল এক ধরনের নিরাময়ের প্রক্রিয়া। তিনি বলেন, ‘যাত্রা শেষ করার মুহূর্তটি ছিল খুবই আবেগঘন।’

দলের একমাত্র পুরুষ সদস্য ক্রেগ সোয়ান অবশ্য বিবিসির সাবেক সাংবাদিক। তিনি জানিয়েছেন, তাঁর দুই বন্ধুর ব্যক্তিগত শোকের গল্প এই অভিযানে তাঁদের অদৃশ্য শক্তি দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘এটা ছিল আমাদের জীবনের এক অধ্যায় সম্পূর্ণ করা।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঢাক-ঢোল পিটিয়ে বিহারের নির্বাচনে কী খেল দেখাল প্রশান্ত কিশোরের দল

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
নিজ দলের প্রচারণা কর্মীদের সঙ্গে প্রশান্ত কিশোর। ছবি: সংগৃহীত
নিজ দলের প্রচারণা কর্মীদের সঙ্গে প্রশান্ত কিশোর। ছবি: সংগৃহীত

ভোটকুশলী হিসেবে ভারতে সবচেয়ে বেশি আলোচিত যিনি, তিনিই প্রশান্ত কিশোর। বলা হয়ে থাকে, তাঁর পরামর্শ ও নকশা অনুসরণ করেই পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনে বাজিমাত করেছিল মমতা ব্যানার্জির তৃণমূল কংগ্রেস। শুধু পশ্চিমবঙ্গই নয়, ভারতের আরও অনেক রাজ্যেই মুখ্যমন্ত্রী বানানোর কারিগর নাকি তিনি। এমনকি ভারতের লোকসভা নির্বাচনেও তাঁর দ্বারস্থ হয়েছিল দেশটির ক্ষমতাসীন দল বিজেপি!

সর্বশেষ বিহারের নির্বাচনকে সামনে রেখে নিজের একটি দলও গড়েন প্রশান্ত। ‘জন-সুরাজ’ নামের সেই পার্টি বিহারে সরকার গঠন করবে এমন ঘোষণাও দেন তিনি। তবে নির্বাচনের আগে আগে এক সাক্ষাৎকারে দাবি করেছিলেন—তাঁর দল হয় ফার্স্ট হবে, নয়তো লাস্ট। এ অবস্থায় সদ্য শেষ হওয়া নির্বাচনে জন-সুরাজ পার্টি কী ফল করে, তা দেখার অপেক্ষায় ছিলেন অনেকেই।

বুথফেরত জরিপের বরাতে শুক্রবার ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, প্রশান্ত কিশোরের জন-সুরজ অভিষেকেই ব্যর্থ। তাঁর ভবিষ্যদ্বাণীও যেন ফলে গেছে—জন-সুরজ পার্টি ফার্স্ট হতে পারেনি, একেবারে লাস্ট হয়ে গেছে।

বিহারের ২৪৩টি আসনের মধ্যে ২৩৮ টিতেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে প্রশান্ত কিশোর তথা পিকে-এর জন সুরজ পার্টি। যদিও বুথফেরত জরিপগুলো জন সুরজকে আগেই নাকচ করে দিয়েছিল। এনডিটিভির একটি জরিপে পিকের দল মাত্র একটি আসন পেতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। শুক্রবার রাতে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত দেখা গেছে, এই দল একটি আসনেও জয়লাভ করেনি।

রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জাতিগত সমীকরণ থেকে প্রার্থী বাছাই, বিভিন্ন ক্ষেত্রেই প্রশান্ত কিশোর মারাত্মক ভুল করেছেন। প্রথমবারের মতো বড় রাজনৈতিক পরীক্ষায় নামা প্রশান্ত কিশোরের কৌশল মাঠে নেমেই দুর্বল হয়ে পড়ে। এই নির্বাচনে জন সুরাজ পার্টিকে অনেকেই তৃতীয় শক্তি হিসেবে দেখছিলেন। কারণ শুরুতে পিকে যেসব ইস্যু সামনে এনেছিলেন, তা সরাসরি সাধারণ মানুষের জীবন–যাত্রার সঙ্গে যুক্ত ছিল। কিন্তু সবচেয়ে বড় ভুল ছিল পুরো প্রচার-ব্যবস্থা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম আর তরুণদের ওপর নির্ভর করে চালানো হয়েছে।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা জানিয়েছেন, দলটি অসংখ্য বুথে একজন প্রতিনিধি রাখারও মানুষ পায়নি। আর শুরু থেকেই কিশোরের দলকে বিজেপির ‘বি টিম’ বলা হচ্ছিল। এ অবস্থায় বিজেপির জোটসঙ্গী নিতীশ কুমার ও তাঁর দল জেডিইউকে নানাভাবে আক্রমণ করে নিজের অবস্থান ধরে রাখার চেষ্টা করেছেন তিনি। কিন্তু ফলাফল হয়েছে উল্টো।

অভ্যন্তরীণ কোন্দলও জন সুরাজ পার্টিকে দুর্বল করেছে। দলের ভেতরে বারবার মতবিরোধ সৃষ্টি হওয়ায় কর্মীদের মনোবল তলানিতে নেমে যায়। কিশোরের ব্যক্তিগত আচরণের কারণেও অনেক নেতা তাঁর সঙ্গে স্বচ্ছন্দ বোধ করেননি। আসল কথা হলো—জাতিগত সমীকরণকে সঠিকভাবে ধরতে ব্যর্থতা, শুধু সোশ্যাল মিডিয়া ও ইনফ্লুয়েন্সারের ওপর ভরসা করে নির্বাচন পরিচালনা, নিজে নির্বাচনে না লড়ায় নেতৃত্বের প্রতি আস্থাহীনতা তৈরি হওয়া, বুথ পর্যায়ে দলীয় প্রতিনিধি না থাকা এবং প্রার্থী নির্বাচনে অস্বচ্ছতা ও অসন্তোষ তৈরি হওয়া প্রশান্ত কিশোরকে রাজনীতির ময়দানে নামার আগেই প্যাভিলিয়নে পাঠিয়ে দিয়েছে।

তবে শুক্রবার সকালে ভোট গণনার ফল বলছিল, পুরোপুরি ব্যর্থ নন প্রশান্ত কিশোর। বিশ্লেষকেরা বলছেন, ফলাফল যেমনই হোক প্রশান্ত কিশোরের অনিবার্য ভূমিকা থাকবে এই নির্বাচনে। এ ক্ষেত্রে দেখার বিষয় হলো—কত শতাংশ ভোট পেল তাঁর দল এবং কাদের ঘরে সিঁধ কাটল। বিশেষ করে, দলটি যদি কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন বিরোধী জোটের ভোটে থাবা বসায়, তবে তা নতুন মূল্যায়নের পথ খুলে দেবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আলিনগরকে ‘সীতানগর’ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিহারের সর্বকনিষ্ঠ এমএলএ হওয়ার পথে মৈথিলী

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
মৈথিলী ঠাকুর। ছবি: এক্স
মৈথিলী ঠাকুর। ছবি: এক্স

বিহার বিধানসভা নির্বাচনের ভোট গণনা চলছে। এই নির্বাচনে বিজেপির টিকিটে আলিনগর আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মোদিভক্ত জনপ্রিয় লোকসংগীতশিল্পী মৈথিলী ঠাকুর। সর্বশেষ পাওয়া খবরে জানা গেছে, ২৫ বছর বয়সী মৈথিলী ঠাকুর বিপুল ভোটে এগিয়ে আছেন এবং তিনি রাজ্যের সর্বকনিষ্ঠ বিধায়ক (এমএলএ) হতে চলেছেন।

মৈথিলীর এমন খ্যাতির যাত্রা শুরু হয়েছিল অনেক আগে—মাত্র ছয় বছর বয়সে। সংগীত পরিবারে জন্মগ্রহণ করা মৈথিলী তাঁর দাদা ও বাবার কাছে লোকসংগীত, হিন্দুস্তানি শাস্ত্রীয় সংগীত, হারমোনিয়াম ও তবলায় প্রশিক্ষণ নেন।

পরে মেয়ের ব্যতিক্রমী প্রতিভা দেখে বাবা তাঁকে দিল্লিতে নিয়ে আসেন। ১০ বছর বয়সে মৈথিলী দিল্লির দ্বারকায় জাগরণ ও বিভিন্ন সংগীত অনুষ্ঠানে পরিবেশনা শুরু করেন।

১১ বছর বয়সে তিনি ‘সা রে গা মা পা লিটল চ্যাম্পস’-এ অংশ নেন। ১৫ বছর বয়সে সনি টিভিতে ‘ইন্ডিয়ান আইডল জুনিয়র’-এ প্রতিযোগিতা করেন। এক বছর পর, ১৬ বছর বয়সে, তিনি ‘আই জিনিয়াস ইয়াং সিঙ্গিং স্টার’ প্রতিযোগিতা জেতেন। পরে তিনি ‘রাইজিং স্টার’-এ অংশ নেন এবং মাত্র দুই ভোটের ব্যবধানে রানার্সআপ হন।

সামাজিক মাধ্যমের উত্থানের সঙ্গে সঙ্গে মৈথিলীর জনপ্রিয়তা দ্রুত বাড়তে থাকে। ফেসবুক ও ইউটিউবে তাঁর মিউজিক ভিডিওগুলো ভাইরাল হয় এবং তিনি একটি ডিজিটাল ফ্যানবেজ তৈরি করেন। দুই ভাইয়ের সঙ্গে সংগীত পরিবেশন করে তিনি অসংখ্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হন।

বিহারের মধুবনী জেলার এই শিল্পী ও তাঁর দুই ভাইকে ২০১৯ সালে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক মধুবনীর ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।

ভারত সরকার তাঁকে ‘অটল মিথিলা’ সম্মান দেয়। ২০২১ সালে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর তাঁকে ‘লোকমত সুর জ্যোৎস্না জাতীয় সংগীত পুরস্কারে’ ভূষিত করেন।

দুই ভাই ঋষভ ও আয়াচির সঙ্গে তুলসীদাসের রাম চরিতমানস এবং ভগবান রাম ও সীতাকে উৎসর্গ করা মৈথিলী লোকসংগীত পরিবেশন শুরু করার পর তাঁর খ্যাতি আরও বাড়ে। মধুবনী শিল্পকলার থিম ও মোটিফ তাঁর পরিবেশনায় যুক্ত করে এই শিল্পের প্রচারেও তিনি অবদান রাখেন।

২৫ বছর বয়সে মৈথিলী রাজনীতিতে পা রাখেন। গত ১৪ অক্টোবর তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে বিজেপিতে যোগ দেন এবং আলিনগর বিধানসভা আসনের টিকিট পান। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বেলা ৩টা পর্যন্ত ৫১ হাজারের বেশি ভোটের ব্যবধানে এগিয়ে আছেন মৈথিলী।

সংবাদ সংস্থা এএনআইকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মৈথিলী বলেছেন, ‘এটি আমার কাছে স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে। মানুষ আমার ওপর এত আস্থা রেখেছে। একজন বিধায়ক হিসেবে এটি আমার প্রথম মেয়াদ হবে এবং আমি নির্বাচনী এলাকার জন্য আমার সেরাটা দেব।’

মৈথিলী এই আসনে রাষ্ট্রীয় জনতা দলের (আরজেডি) বিনোদ মিশ্র ও জন সুরাজ পার্টির বিপ্লব কুমার চৌধুরীর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তিনি জিতলে বিহার বিধানসভায় নির্বাচিত সর্বকনিষ্ঠ প্রতিনিধি হবেন।

এদিকে, তাঁর বিজয় আলিনগরে বিজেপির প্রথম জয় হবে। মৈথিলীর প্রধান প্রতিশ্রুতিগুলোর মধ্যে রয়েছে—স্কুলে পাঠ্যক্রমবহির্ভূত কার্যকলাপ হিসেবে মিথিলা চিত্রকলার প্রবর্তন, আলিনগরের নাম পরিবর্তন করে সীতানগর রাখা এবং মেয়েদের শিক্ষাব্যবস্থা শক্তিশালী করা।

আলিনগর আসনে উচ্চবর্ণের ব্রাহ্মণ, মুসলিম, যাদব (যদুর বংশধর) এবং পিছিয়ে পড়া মাল্লাহ ও পাসোয়ান জনগোষ্ঠী রয়েছে। ২০১০ ও ২০১৫ সালে আরজেডির আব্দুল বারি সিদ্দিকী এবং ২০২০ সালে বিকাশশীল ইনসান পার্টির (ভিআইপি) মিশরি লাল যাদবের জয়ের মধ্য দিয়ে ২০০৮ সাল থেকে আসনটি মহাগাঠবন্ধনের (এমজিবি) ঘাঁটি ছিল। তবে এবার সেটি বিজেপির হাতে চলে যাচ্ছে।

প্রসঙ্গত, গত ৬ অক্টোবর বিহার বিধানসভা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। এরপর দুই দফায় ৬ ও ১১ নভেম্বর ভোট হয়। আজ শুক্রবার ভোট গণনা চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত