Ajker Patrika

‘মার্কিনরা বেরিয়ে যাও’ স্লোগানে উত্তাল মেক্সিকোর রাজপথ, কিন্তু কেন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ৩১ আগস্ট ২০২৫, ১৮: ০০
এক মাসের বেশি সময় ধরে মার্কিন-ইউরোপীয়দের মেক্সিকো ভ্রমণের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করছে মেক্সিকানরা। ছবি: সংগৃহীত
এক মাসের বেশি সময় ধরে মার্কিন-ইউরোপীয়দের মেক্সিকো ভ্রমণের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করছে মেক্সিকানরা। ছবি: সংগৃহীত

বিক্ষোভে উত্তাল মেক্সিকো সিটি। ‘ফুয়েরা গ্রিঙ্গো’ স্লোগানে প্রকম্পিত হচ্ছে রাজপথ। স্প্যানিশ এই স্লোগানের বাংলা করলে দাঁড়ায় ‘মার্কিনরা বেরিয়ে যাও!’ এক মাসের বেশি সময় ধরে মার্কিন-ইউরোপীয়দের মেক্সিকো ভ্রমণের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ চলছে।

গত ৪ জুলাই এই আন্দোলন শুরু হয়। ওই দিনই যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা দিবস। বিবিসি বলছে, মার্কিন স্বাধীনতা দিবসের দিনই মেক্সিকোতে আন্দোলন শুরু কোনো কাকতালীয় ঘটনা নয়। ইচ্ছাকৃতভাবেই আন্দোলন শুরুর জন্য ওই দিনটিকে বেছে নেওয়া হয়েছে। শুরুতে আন্দোলন শান্তিপূর্ণ থাকলেও ধীরে ধীরে তা হয়ে ওঠে সহিংস। বিভিন্ন হোটেল-রেস্তোরাঁয় হামলার ঘটনাও ঘটেছে। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, মুখোশধারী কিছু উগ্রপন্থীরা এ ধরনের কর্মকাণ্ড ঘটিয়েছে।

ঘটনার পরদিন এক সংবাদ সম্মেলনে এ ধরনের কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লডিয়া শেনবাউম। সহিংসতাকে ‘বিদেশীবিদ্বেষ’ আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ‘আন্দোলন যতই যৌক্তিক হোক, এ ধরনের কর্মকাণ্ড মেনে নেওয়া যায় না। আমার দেশে বেড়াতে আসা কাউকে আমি কোনোভাবেই বেরিয়ে যাও বলতে পারি না।’

কিন্তু পশ্চিমা পর্যটকদের প্রতি মেক্সিকানদের এই ক্ষোভ কেন? ঠিক কী কারণে তাদের ওপর এত চটেছে স্থানীয়রা?

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, মেক্সিকোর অন্যতম জনপ্রিয় এলাকা ‘কনদেসা’র প্রতি পাঁচটি বাড়ির একটিতে এখন পর্যটকদের বসবাস। শুধু কনদেসা নয়, রোমা, লা হুয়ারেজের মতো শহরগুলোতেও পরিস্থিতি একইরকম। যে কারণে, শহরগুলোর অনেক পুরোনো বাসিন্দাকে বাধ্য হয়ে অন্যত্র স্থানান্তরিত হতে হয়েছে, যা তাদের জন্য অনেক বড় ধাক্কা। এ ছাড়াও এসব জনপ্রিয় শহরগুলোর বেশির ভাগ রেস্তোরাঁয় এখন মেন্যু লেখা হচ্ছে ইংরেজিতে, পশ্চিমা পর্যটকদের খাদ্যাভ্যাসের সঙ্গে মিলিয়ে খাবারের স্বাদেও আনা হচ্ছে পরিবর্তন। ছোট ছোট এই পরিবর্তনগুলোই গলার কাটা হয়ে বিঁধছে স্থানীয়দের।

এরিকা আগুইলার নামে এক মেক্সিকান বিবিসিকে জানান, ৪৫ বছরের বেশি সময় ধরে মেক্সিকো সিটির একটি অ্যাপার্টমেন্টে বসবাস করছিল তার পরিবার। ২০১৭ সালে হঠাৎ একদিন তাদের বাড়ি ছাড়ার নোটিস দেওয়া হয়। কারণ, ১৯২০ এর দশকে তৈরি হওয়া ওই পুরোনো ভবন ভেঙে এখন পর্যটকদের থাকার উপযোগী কমার্শিয়াল অ্যাপার্টমেন্ট বানানো হবে।

এরিকা বলেন, ‘আপনি ভাবতে পারেন? যে বাড়িতে আমার পরিবার সেই ১৯৭৭ সাল থেকে বাস করছেন, হঠাৎ সেখান থেকে আমাদের উচ্ছেদ করা হলো। তারা আমাদের বলে হয় এক মাসের মধ্যে বাড়ি ছেড়ে দিতে হবে, নয়তো দুসপ্তাহের মধ্যে ২৯ লাখ ডলার দিয়ে ভবনটি কিনে নিতে পারি। এত টাকা আমরা পাব কোথায়?’

বাধ্য হয়ে ওই বাড়ি ছাড়তে হয় এরিকার পরিবারকে। কিন্তু ওই শহরের আর কোনো বাড়িতেই তাদের ঠাঁই হয়নি। বর্তমানে পাশের রাজ্যে বসবাস করছেন তারা। এরিকা জানান মেক্সিকো সিটি থেকে সেখানে পৌঁছাতে সময় লাগে প্রায় দুই ঘণ্টা। সমাজকর্মীরা এই ধরনের ঘটনাকে ‘কেন্দ্রের অধিকার হারানো’ বলে অভিহিত করছেন। সার্জিও গঞ্জালেজ নামের এক সমাজকর্মী বলেন, যে কোনো শহর বা দেশের প্রাণকেন্দ্রে বসবাসের অধিকার হারানো মানে অনেক কিছু থেকে বঞ্চিত হওয়া। তিনি আরও জানান, তিনি ও তার দল গত ১০ বছরে শুধু লা হুয়ারেজ এলাকাতেই ৪ হাজারের বেশি এমন ঘটনা নথিভুক্ত করেছে। এমনকি সার্জিও নিজেও উচ্ছেদের শিকার।

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এক ধরনের নগর যুদ্ধের মুখোমুখি হয়েছি। এখানে আসলে জমির অধিকার নিয়ে লড়াই চলছে—কে থাকবে আর কে থাকবে না তা নিয়ে লড়াই চলছে।’ তিনি জানান, তার এলাকা থেকে উচ্ছেদ হওয়া বেশির ভাগ বাসিন্দাই আর শহরে ফিরতে পারেনি। ফলে সংবিধান দ্বারা সুরক্ষিত অনেক অধিকার তারা হারিয়েছে।

সার্জিও ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘২০০৭ সালে আমি এখানে প্রথম যে অ্যাপার্টমেন্টটি ভাড়া নিয়েছিলাম, তার মাসিক ভাড়া ছিল প্রায় ৪ হাজার পেসো। আজ সেই একই অ্যাপার্টমেন্টের ভাড়া ১০ গুণেরও বেশি। এটা চরম অন্যায়।’

ক্রমবর্ধমান ক্ষোভের মুখে মেক্সিকো সিটির মেয়র ক্লারা ব্রুগাদা ১৪ দফা পরিকল্পনা ঘোষণা করেন। এর মধ্যে রয়েছে ভাড়া নিয়ন্ত্রণ করা, পুরোনো বাসিন্দাদের সুরক্ষা দেওয়া এবং সাশ্রয়ী মূল্যে নতুন সামাজিক আবাসন তৈরি করা। সার্জিও বলেন, ‘আমাদের স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় সরকার এখনো নব্য উদার অর্থনৈতিক মডেলকে উৎসাহিত করছে, যা বদলায়নি। যদিও তারা মানুষের জন্য সামাজিক সুরক্ষা বাড়িয়েছে, যা আমি ব্যক্তিগতভাবে ভালো মনে করি, কিন্তু এটি তাদের শাসনের অর্থনৈতিক কাঠামো পরিবর্তন করেনি।’ মেয়রের এই পদক্ষেপগুলোকে তিনি ‘সাময়িক উপশম’ আখ্যা দিয়ে বলেন, ‘এগুলো অনেকটা ঘোড়া পালিয়ে যাওয়ার পর আস্তাবলের দরজা বন্ধ করার মতো।’

প্রেসিডেন্ট ক্লডিয়া শেইনবাউমের সমালোচকেরা বলছেন, তিনি যখন মেক্সিকো সিটির মেয়র ছিলেন, তখন এই সমস্যার সমাধান করতে ব্যর্থ হয়েছেন। বরং উল্টো ২০২২ সালে এয়ারবিএনবির সঙ্গে একটি চুক্তি করে পর্যটন এবং ডিজিটাল যাযাবরদের উৎসাহিত করেছেন শেইনবাউম, যা বিদেশিদের শহরে বসতি গড়তে আরও আকৃষ্ট করেছে।

এরিকা তার পরিবারের এই অবস্থার জন্য ভবনটির পুরোনো মালিক, নগর সরকার, এমনকি ভাড়াটেদেরও দোষ দেন। তার মতে, নিজেদের সঙ্গে ঘটে যাওয়া অন্যায়ের বিরুদ্ধে সময় মতো কোনো পদক্ষেপ নেয়নি তারা। তবে, বিদেশিদের খুব বেশি দোষারোপ করেন না তিনি। এরিকা বলেন, ‘যদি আমারও অন্য কোথাও ভালো থাকার সুযোগ হতো, তাহলে আমিও হয়তো তাই করতাম। আর পর্যটন মেক্সিকোর জন্য ভালো, এটি আয়ের একটা বড় উৎস।’

তবে বিক্ষোভ মিছিলের অনেক মানুষই এরিকার সঙ্গে একমত নন। তারা এই আমেরিকান এবং ইউরোপীয়দের দোষারোপ করেন। তারা অভিযোগ করেন যে এই বিদেশিরা মেক্সিকোর রীতিনীতি বোঝে না, স্প্যানিশ ভাষা শিখতে চায় না, এবং অনেক ক্ষেত্রেই করও দেয় না। তাদের আরও ক্ষোভ—ট্রাম্প প্রশাসন আমেরিকায় মেক্সিকোসহ অন্য অনেক দেশের বাসিন্দাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিচ্ছে, সেখানে মেক্সিকোতে মার্কিনদের এত আয়েশি জীবন যাপনের কোনো অধিকার নেই। বিক্ষোভকারীরা বলেন, ‘ট্রাম্প প্রশাসনের আমলে যখন মেক্সিকান এবং অন্যান্য অভিবাসীদের সঙ্গে কঠোর ব্যবহার করা হচ্ছে, তখন ধনী আমেরিকানরা দক্ষিণে চলে এসে বসতি স্থাপন করলে তা অবশ্যই অন্যায়। উত্তর থেকে দক্ষিণে যাওয়াকে পশ্চিমারা ঠিক মনে করছে, কিন্তু দক্ষিণ থেকে উত্তর গেলেই সমস্যা। এটি কি দ্বিচারিতা নয়?’ প্রশ্ন তোলেন তারা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

২২ বছর ধরে নির্মাণ শেষে অমূল্য সম্পদ দেখাতে খুলল ‘গ্র্যান্ড ইজিপশিয়ান মিউজিয়াম’

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

দীর্ঘ দুই দশকের অপেক্ষা, অগণিত বিলম্ব ও ব্যয়ের পর অবশেষে বিশ্বের বৃহত্তম প্রাচীন সভ্যতার জাদুঘর গ্র্যান্ড ইজিপশিয়ান মিউজিয়াম খুলে দেওয়া হয়েছে। গিজার পিরামিড কমপ্লেক্সের পাশে অবস্থিত এই বিশাল স্থাপনা নির্মাণে ব্যয় হয়েছে এক বিলিয়ন ডলারেরও বেশি। শনিবার (১ নভেম্বর) এই জাদুঘরের উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী সরকারি ছুটি পালিত হয়েছে।

গ্র্যান্ড ইজিপশিয়ান মিউজিয়াম সম্পর্কে রোববার (২ নভেম্বর) সিএনএন জানিয়েছে, এটির জন্য ২০০২ সালে মিসর সরকার বিশ্বের সবচেয়ে বড় আন্তর্জাতিক নকশা প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছিল। ওই প্রতিযোগিতায় ১ হাজার ৫৫৬টি প্রস্তাব জমা পড়ে। পরে সবাইকে অবাক করে বিজয়ী হয় ডাবলিনভিত্তিক একটি ছোট আর্কিটেকচার ফার্ম—হেনেগান পেং আর্কিটেক্টস। ওই ফার্মের সহ-প্রতিষ্ঠাতা রোয়েশিন হেনেগান তখন ভাবতেও পারেননি যে, তাঁর চার সদস্যের ছোট প্রতিষ্ঠান এমন ঐতিহাসিক দায়িত্ব পেতে পারে। তবে এই স্বপ্ন বাস্তবায়ন হতে শেষ পর্যন্ত সময় লেগেছে ২২ বছর।

মিউজিয়ামটির নির্মাণ পরিকল্পনা প্রথম ঘোষণা করা হয়েছিল ১৯৯২ সালে। এরপর পেরিয়েছে আরব বসন্তের বিপ্লব, সামরিক অভ্যুত্থান এবং কোভিড-১৯ মহামারির মতো নানা ধাক্কা। তবু টিকে থেকেছে প্রকল্পটি। ২০২৫ সালে এসে অবশেষে দর্শনার্থীদের জন্য খুলে দেওয়া হলো মিসরের এই গর্ব।

এই জাদুঘরকে বলা হচ্ছে ‘প্রাচীন মিসরীয় সভ্যতার দীর্ঘায়ু ও মহিমার প্রতীক’। ২ লাখ ৫৮ হাজার বর্গফুটজুড়ে বিস্তৃত স্থাপনাটিতে রয়েছে প্রায় এক লাখ নিদর্শন। এর মধ্যে প্রাচীন প্যাপিরাস, টেক্সটাইল, পাত্র, সারকোফাগাস, এমনকি সংরক্ষিত মানব মমিও রয়েছে। সময়ক্রম অনুযায়ী গ্যালারিগুলো সাজানো হয়েছে প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে কপটিক যুগ পর্যন্ত—অর্থাৎ খ্রিষ্টপূর্ব ৩০০০ সাল থেকে খ্রিষ্টীয় সপ্তম শতাব্দী পর্যন্ত। সবচেয়ে আকর্ষণীয় অংশ হলো তুতেনখামেন গ্যালারি, যেখানে তরুণ রাজা তুতেনখামেনের সমাধি থেকে পাওয়া ৫ হাজার নিদর্শন প্রদর্শিত হচ্ছে।

প্রবেশপথে দাঁড়িয়ে আছে ৩৬ ফুট উঁচু দ্বিতীয় রামেসিসের মূর্তি, আর বাইরে রয়েছে ৮৭ টন ওজনের এক বিশাল স্তম্ভ। ছাদের ঢাল এমনভাবে নকশা করা হয়েছে যাতে প্রাকৃতিক আলো পর্যাপ্তভাবে প্রবেশ করতে পারে। নির্মাতা হেনেগান বলেন, ‘প্রাকৃতিক আলোতে এই জাদুঘর যেন জীবন্ত হয়ে ওঠে।’

মিউজিয়ামের মূল অংশটিতে ছয়তলা একটি প্রশস্ত সিঁড়ি দর্শনার্থীদের নিয়ে যায় সময়ের বিপরীতে সাজানো পাথরের ভাস্কর্যের প্রদর্শনীতে। এর চূড়ায় পৌঁছে দর্শনার্থীরা পাবেন এক অনবদ্য দৃশ্য—গিজার মহাপিরামিড কমপ্লেক্সের সরাসরি দৃশ্যপট।

ভবনটির ছাদের ঢাল পিরামিডের সর্বোচ্চ বিন্দুর সমান্তরাল, যেন এটি কখনোই পিরামিডকে ছাপিয়ে না যায়। জাদুঘরের নকশায় ব্যবহৃত জ্যামিতিক রেখা ও স্থান বিন্যাস এমনভাবে সাজানো যে ভবনটি মরুভূমির প্রান্তে একটি নতুন সীমারেখা তৈরি করেছে, অথচ পিরামিডের মর্যাদা অক্ষুণ্ন রেখেছে।

দুই দশকের পরিশ্রমে দাঁড়ানো এই স্থাপনা সম্পর্কে হেনেগান বলেন, ‘একটি দীর্ঘ যাত্রার সার্থক পরিণতি। এত সূক্ষ্ম ও ঐতিহাসিক নিদর্শন স্থানান্তরিত করতে সময় লাগবেই। একটু বেশি সময় লাগলেও যদি তা নিখুঁতভাবে করা যায়—তবে সেটাই সবচেয়ে মূল্যবান।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রুশ তরুণদের মাঝে ছড়িয়ে পড়েছে ওজন কমানোর বিপজ্জনক এক বড়ি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
‘মলিকিউল’ সেবন করে অস্বাভাবিক পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছিলেন ২২ বছরের মারিয়া। ছবি: বিবিসি
‘মলিকিউল’ সেবন করে অস্বাভাবিক পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছিলেন ২২ বছরের মারিয়া। ছবি: বিবিসি

রাশিয়ায় তরুণদের মধ্যে ভয়াবহভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ‘মলিকিউল’ নামে ওজন কমানোর একটি সস্তা বড়ি। রুশ টিকটকে এই বড়িটি নিয়ে প্রচারণা শুরু হয়েছিল চলতি বছরের শুরুর দিকে। ভিডিওগুলোতে দেখা যায়, তরুণীরা বলছেন—‘মলিকিউল খাও, খাবারের কথা ভুলে যাও’ বা ‘ওজন কমাও, ক্লাসের পেছনের বেঞ্চে বসো না।’ এই ধরনের প্রচারের ফলেই দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে বড়িটির বিক্রি।

রোববার (২ নভেম্বর) বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গের ২২ বছর বয়সী মারিয়া অনলাইনে বড়িটি কিনে খান। দিনে দুটি করে খেয়ে দুই সপ্তাহের মধ্যে তাঁর মুখ শুকিয়ে যায়, ক্ষুধা সম্পূর্ণ হারিয়ে ফেলেন, আর মানসিক অস্থিরতা ও উদ্বেগে ভুগতে থাকেন।

মারিয়া বলেন, ‘আমি ক্রমাগত ঠোঁট কামড়াচ্ছিলাম, গাল চিবোচ্ছিলাম—মনে হচ্ছিল কিছু একটা ঠিক নেই।’

টিকটকের অন্য ব্যবহারকারীরাও জানান, বড়ি খাওয়ার পর তাঁদের চোখ বড় হয়ে যাওয়া, হাত কাঁপা ও ঘুমহীনতার মতো উপসর্গ দেখা দিয়েছে। অন্তত তিনজন স্কুলশিক্ষার্থীকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে। সাইবেরিয়ার চিতায় এক স্কুলছাত্রী গ্রীষ্মের আগে দ্রুত ওজন কমাতে গিয়ে ওভারডোজে আক্রান্ত হয়। অন্য এক কিশোরকে স্কুলে মোটা বলে ঠাট্টা করা হতো, বন্ধুর মাধ্যমে বড়ি কিনে খেয়ে সে হ্যালুসিনেশনে আক্রান্ত হয়।

রাশিয়ার পত্রিকা ‘ইজভেস্তিয়া’ বড়িটির নমুনা পরীক্ষা করে দেখেছে, এতে ‘সিবিউট্রামিন’ নামে এক ধরনের নিষিদ্ধ উপাদান রয়েছে। ১৯৮০-এর দশকে এই ‘সিবিউট্রামিন’ প্রথমে অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট হিসেবে তৈরি হলেও পরে ওজন কমানোর ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু গবেষণায় দেখা যায়, এটি হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়—বিপরীতে ওজন কমানোর প্রভাব সামান্য। এ জন্য ২০১০ সালে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বহু দেশ সিবিউট্রামিন নিষিদ্ধ করে।

রাশিয়ায় ‘সিবিউট্রামিন’ শুধুমাত্র চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশনে পাওয়া যায়। কিন্তু অনলাইনে নানা অবৈধ বিক্রেতা বেশি মাত্রার ‘সিবিউট্রামিন’ উপাদানসমৃদ্ধ বড়ি বিক্রি করছে। এগুলোর দাম ওজন কমানোর জনপ্রিয় ইনজেকশন ‘ওজেমপিক’ এর তুলনায় অনেক সস্তা।

এ অবস্থায় সরকারি উদ্যোগে কয়েকটি অনলাইন মার্কেটপ্লেস থেকে বড়িটি সরানো হলেও তা ‘অ্যাটম’ নামে নতুন প্যাকেটে আবার ফিরে এসেছে। বিক্রেতারা এখন এসব বড়িকে ‘স্পোর্টস নিউট্রিশন’ তালিকাভুক্ত করছে, যাতে নজর এড়ানো যায়।

বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন, তরুণদের জন্য এই বড়ি প্রাণঘাতী হতে পারে। এন্ডোক্রাইন বিশেষজ্ঞ ক্সেনিয়া সোলোভিয়েভা বলেন, ‘এই ধরনের ওষুধে সক্রিয় উপাদানের পরিমাণ আমরা জানি না—তাই এটি মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রাজস্থানে ট্রাকের পেছনে তীর্থযাত্রীবোঝাই বাসের ধাক্কা, নিহত ১৫

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
স্থানীয় পুলিশ জানিয়েছে, নিহত ব্যক্তিরা সবাই যোধপুরের সুরসাগর এলাকার বাসিন্দা ছিলেন। ছবি: সংগৃহীত
স্থানীয় পুলিশ জানিয়েছে, নিহত ব্যক্তিরা সবাই যোধপুরের সুরসাগর এলাকার বাসিন্দা ছিলেন। ছবি: সংগৃহীত

ভারতের রাজস্থানে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকের পেছনে একটি বাসের ধাক্কায় কমপক্ষে ১৮ জন নিহত ও তিনজন আহত হয়েছেন। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজধানী জয়পুর থেকে প্রায় ৪০০ কিলোমিটার দূরে ফালোদি জেলার মাতোদা গ্রামের কাছে ভারত-মালা হাইওয়েতে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

স্থানীয় পুলিশ জানিয়েছে, নিহত ব্যক্তিরা সবাই যোধপুরের সুরসাগর এলাকার বাসিন্দা ছিলেন। তাঁরা বিকানেরের কোলায়েত মন্দির থেকে কপিল মুনি আশ্রমে প্রার্থনা সেরে বাড়ি ফিরছিলেন।

রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী ভজন লাল শর্মা এ ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। তিনি নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের জন্য সব ধরনের সহায়তা এবং আহত ব্যক্তিদের সঠিক চিকিৎসাসেবা দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন।

মুখ্যমন্ত্রী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে লিখেছেন, ‘ফালোদি জেলার মাতোদা এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় এতগুলো মানুষের প্রাণহানি অত্যন্ত মর্মান্তিক ও হৃদয়বিদারক। আমি শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি। আহত ব্যক্তিদের সবার যথাযথ চিকিৎসা নিশ্চিত করতে জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আমি ভগবানের কাছে নিহত ব্যক্তিদের আত্মার শান্তি ও আহত ব্যক্তিদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি।’

সাবেক মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলটও প্রাণহানিতে শোক প্রকাশ করেছেন। তিনি এক্সে লিখেছেন, ‘আমি এইমাত্র খবর পেলাম যে ফালোদির মাতোদাতে সড়ক দুর্ঘটনায় ১৫ জন মারা গেছেন। এ খবর শুনে আমার হৃদয় গভীরভাবে ভারাক্রান্ত। আমি ভগবানের কাছে প্রার্থনা করি, যেন তিনি নিহত ব্যক্তিদের তাঁর চরণে স্থান দেন, তাঁদের পরিবারকে শক্তি দেন এবং আহত ব্যক্তিদের দ্রুত আরোগ্য দান করেন।’

রাজস্থানে সম্প্রতি সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা বেড়েছে। গত মাসে জয়সালমেরে একটি স্লিপার বাসে আগুন লাগার ঘটনায় ২৬ জন পুড়ে মারা যান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

গোপনে মাস্ককে ২০০ কোটি ডলারের প্রতিরক্ষা প্রকল্প দিলেন ট্রাম্প

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইলন মাস্ক। ছবি: সংগৃহীত
ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইলন মাস্ক। ছবি: সংগৃহীত

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বে শুরু হওয়া ‘গোল্ডেন ডোম’ প্রতিরক্ষা প্রকল্পে যুক্ত হচ্ছে ইলন মাস্কের মহাকাশ সংস্থা স্পেসএক্স। প্রকল্পটির আওতায় স্পেসএক্স দুই বিলিয়ন ডলার সরকারি অর্থায়ন পেতে যাচ্ছে বলে দাবি করেছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল।

ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই অর্থায়ন গোপনে জুলাই মাসে ট্রাম্প স্বাক্ষরিত একটি কর ও ব্যয়সংক্রান্ত বিলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। তবে তখন কোনো নির্দিষ্ট ঠিকাদারের নাম প্রকাশ করা হয়নি।

‘গোল্ডেন ডোম’ প্রকল্পের আওতায় স্পেসএক্সকে এমন একটি বৃহৎ স্যাটেলাইট নেটওয়ার্ক তৈরি করতে হবে, যা আকাশে চলমান লক্ষ্যবস্তু—যেমন মিসাইল বা যুদ্ধবিমান শনাক্ত ও ট্র্যাক করতে সক্ষম হয়।

সংশ্লিষ্ট একটি সূত্রের বরাতে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানায়, এই ‘এয়ার মুভিং টার্গেট ইন্ডিকেটর’ সিস্টেমে ৬০০ পর্যন্ত স্যাটেলাইট থাকতে পারে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তাব্যবস্থায় মাস্কের প্রভাব আরও বাড়াবে বলে মনে করা হচ্ছে।

ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, স্পেসএক্স পেন্টাগনের দুটি গোপন স্যাটেলাইট প্রকল্পেও কাজ শুরু করতে যাচ্ছে। এর মধ্যে একটির নাম ‘মিলনেট’, যা সংবেদনশীল সামরিক তথ্য নিরাপদে আদান-প্রদানের জন্য তৈরি একটি নেটওয়ার্ক। অন্যটির নাম ‘গ্রাউন্ড ট্র্যাকিং’ সিস্টেম, যা ভূপৃষ্ঠে থাকা যানবাহন পর্যবেক্ষণ ও শনাক্ত করতে সক্ষম আলাদা স্যাটেলাইট নেটওয়ার্ক।

প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকেরা বলছেন, এসব প্রকল্পে স্পেসএক্সের অংশগ্রহণ যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশভিত্তিক প্রতিরক্ষা কাঠামোয় কোম্পানিটির ভূমিকা আরও গুরুত্বপূর্ণ করে তুলছে।

তবে মার্কিন প্রশাসনের কিছু কর্মকর্তা সতর্ক করে বলেছেন, ইলন মাস্কের অতীত আচরণ—যেমন নাসার মহাকাশচারীদের বহনকারী স্পেসক্রাফট বন্ধের হুমকি—সরকারকে ভবিষ্যতে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরক্ষা কার্যক্রমে বহু ঠিকাদারকে অন্তর্ভুক্ত রাখার প্রয়োজনীয়তা মনে করিয়ে দিয়েছে।

‘গোল্ডেন ডোম’ কী?

‘গোল্ডেন ডোম’ প্রকল্পটিকে একটি উন্নত প্রতিরক্ষাব্যবস্থা হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে, যা মিসাইল শনাক্ত ও আঘাতের আগেই ধ্বংস করতে সক্ষম একটি ঢালের মতো কাজ করবে। তবে এর কাঠামো বা কার্যপ্রণালি সম্পর্কে পেন্টাগন এখনো বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করেনি।

প্রকল্পটির বড় বড় চুক্তি এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে দেওয়া হয়নি। প্রতিরক্ষা দপ্তর ব্যয় পরিকল্পনা চূড়ান্ত করছে।

‘গোল্ডেন ডোম’ প্রকল্পে স্পেসএক্সের সম্পৃক্ততা নিয়ে জানতে চাইলে পেন্টাগনের এক মুখপাত্র বলেন, ‘আমরা এ ধরনের প্রস্তাবিত প্রকল্পের বিস্তারিত প্রকাশ করি না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত