Ajker Patrika

নিষেধাজ্ঞা ভেঙে ইসলামাবাদ–রাওয়ালপিন্ডিতে ইমরানের দলের বিক্ষোভের ডাক

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০২ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ৫৩
ইমরান খানের মুক্তির দাবিতে ২০২৪ সালের নভেম্বরে তাঁর দল বিক্ষোভের ডাক দেয়। সেই বিক্ষোভে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে অন্তত ৪ জন নিহত হয়। ছবি: এএফপি
ইমরান খানের মুক্তির দাবিতে ২০২৪ সালের নভেম্বরে তাঁর দল বিক্ষোভের ডাক দেয়। সেই বিক্ষোভে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে অন্তত ৪ জন নিহত হয়। ছবি: এএফপি

কারাগারে আটক প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক–ই–ইনসাফ পার্টি (পিটিআই) দেশটির রাজধানী ইসলামাবাদ ও রাওয়ালপিন্ডিতে বিশাল বিক্ষোভের ঘোষণা দিয়েছে। মূলত, কারাগারে ইমরান খান কী অবস্থায় আছে–সরকার তা না জানানোয় এবং দলটির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের আলোচনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হিসেবে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য ডনের খবরে বলা হয়েছে, আজ মঙ্গলবার ইসলামাবাদ হাইকোর্ট ও রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারের সামনে বিক্ষোভের সিদ্ধান্ত নিয়েছে পিটিআই। ইমরান খান আদিয়ালা কারাগারেই বন্দী। গত ৪ নভেম্বরের পর থেকে তাঁর পরিবার বা দলের কোনো সদস্যকে সাক্ষাৎ করতে দেওয়া হয়নি। এরই মধ্যে গুজব রটে যায় যে, ইমরান খানকে খুন করা হয়েছে।

পাকিস্তান সরকার এই শহর দুটিতে জনসমাবেশ নিষিদ্ধ করেছে। তবে ইমরান খানের দল এই নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেই আদালত ও কারাগারের সামনে সমবেত হওয়ার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ফেডারেল রাজধানীর প্রশাসন গত ১৮ নভেম্বর দুই মাসের জন্য এই নিষেধাজ্ঞা জারি করে। আর রাওয়ালপিন্ডির জেলা প্রশাসন সোমবার তিন দিনের সমাবেশ-নিষেধাজ্ঞার নোটিশ দেয়। উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের পিসফুল অ্যাসেম্বলি অ্যান্ড পাবলিক অর্ডার আইন জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে রাজধানীতে জনসমাবেশ নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা দেয়।

পিটিআই নেতা আসাদ কায়সার জানান, পাকিস্তানের পার্লামেন্টের উভয় কক্ষের বিরোধী দলীয় সদস্যরা প্রথমে ইসলামাবাদ হাইকোর্টের সামনে বিক্ষোভ করবেন, এরপর রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারের দিকে যাবেন। তিনি বলেন, ‘ইসলামাবাদ হাইকোর্ট তাঁর আদেশ বাস্তবায়ন করতে ব্যর্থ হয়েছে এবং আদিয়ালা কারাগার কর্তৃপক্ষও আদালতের নির্দেশ মানতে চাইছে না। আর এ কারণেই বিক্ষোভ।’

গত সপ্তাহে খাইবার পাখতুনখাওয়ার মুখ্যমন্ত্রী সোহাইল আফ্রিদিকে টানা অষ্টমবারের মতো ইমরান খানের সঙ্গে সাক্ষাতে বাধা দেওয়া হলে তিনি কারাগারের সামনে অবস্থান নেন। একইভাবে, ইমরান খানের পরিবারও কয়েক সপ্তাহ ধরে তাঁকে দেখতে পারছেন না। তাঁর স্বাস্থ্যের বিষয়ে নানা জল্পনা তৈরি হয়েছিল, যদিও সরকার ও পিটিআই নেতারা বলেছিলেন যে তিনি সুস্থ আছেন।

এক প্রশ্নের জবাবে আসাদ কায়সার জানান, তিনি মঙ্গলবার কোয়েটায় একটি জনসভায় যোগ দেবেন পিটিআই-নেতৃত্বাধীন বিরোধী জোটের পদাধিকারী হিসেবে। তবে দলের অন্যান্য নেতা ইসলামাবাদ ও রাওয়ালপিন্ডির বিক্ষোভে উপস্থিত থাকবেন।

তিনি আরও জানান, ব্যারিস্টার গহার আলী খানসহ অন্যান্য নেতারা এই দুটি শহরে বিক্ষোভ পরিচালনা করবেন। তিনি বলেন, পার্লামেন্টারি কমিটি ইমরান খানের মুক্তির দাবি জানিয়েছে এবং পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ থেকে তাঁকে বিরত রাখা মানবাধিকারের লঙ্ঘন।

এদিকে, পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশে নির্বাচিত সরকার বাতিল করে সেখানে গভর্নরের শাসন জারি করার হুমকি দিয়েছে। তবে, গতকাল সোমবারের বৈঠকের পর পিটিআইয়ের পার্লামেন্টারি কমিটি দলটির নিয়ন্ত্রণে থাকা খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশে গভর্নরের শাসন জারির সম্ভাবনার বিরুদ্ধে সতর্কতা উচ্চারণ করেছে।

কমিটি বলেছে, এ ধরনের পদক্ষেপ অস্থিরতা বাড়াবে, বিভাজন তৈরি করবে এবং প্রদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরও খারাপ করবে। তারা বলেছে, এই ধরনের সিদ্ধান্ত দেশ বা প্রদেশ কোনো কিছুরই স্বার্থে নয় এবং এর ভয়াবহ রাজনৈতিক পরিণতি হতে পারে। পিটিআই নেতা আসাদ কায়সার বলেন, পার্লামেন্টারি কমিটির মতে—খাইবার পাখতুনখাওয়া সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত এবং এটিকে অস্থিতিশীল করার যে কোনো চেষ্টা জনমতের প্রতি অবমাননা। তিনি অভিযোগ করেন, কেন্দ্রীয় সরকারের নীতির কারণে কেপি অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি ঘটছে।

তিনি বলেন, ‘পার্লামেন্টারি কমিটির মতে, কেন্দ্রীয় সরকার এনএফসি প্রতিশ্রুতি এবং উপজাতীয় জেলা একীভূতের সময় দেওয়া ঘোষণাগুলো মেনে কেপির অধিকার নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে।’ আসাদ কায়সার জানান, খাইবার পাখতুনখাওয়ায় একটি শান্তি জিরগা অনুষ্ঠিত হয়েছিল, যাতে সব রাজনৈতিক দল প্রদেশের সংকট সমাধানে ঐকমত্যে পৌঁছায়। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার কোনো ইতিবাচক সাড়া দেয়নি, তিনি অভিযোগ করেন। তাঁর মতে, কেন্দ্রের ‘কঠোর মনোভাব’ ভালো সম্পর্ক গড়ে তোলা অসম্ভব করে তুলেছে। তিনি বলেন, পাকিস্তান বিশেষ করে কেপি নতুন কোনো সংঘাত বহন করার সামর্থ্য রাখে না, আর আফগানিস্তানের সঙ্গে উত্তেজনা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা উচিত।

এদিকে, পিটিআইয়ের খাইবার পাখতুনখাওয়া শাখা ঘোষণা করেছে যে—রা পেশোয়ার-ইসলামাবাদ মোটরওয়ে ইন্টারচেঞ্জে সমবেত হবে। সেখান থেকে বিক্ষোভ মিছিল স্বাবি ইন্টারচেঞ্জ পর্যন্ত যাবে। পেশোয়ার পিটিআই সভাপতি ইরফান সেলিম ডনকে জানান, নওশেরা, চর্সাদা, মারদান ও স্বাবির বিক্ষোভকারীরাও এতে যোগ দেবেন।

আরেক পিটিআই নেতা ডনকে বলেন, তারা ইসলামাবাদ-পেশোয়ারের মধ্যে মোটরওয়ে অবরোধ করে যান চলাচল স্থগিত করতে পারেন। তিনি জানান, আইনপ্রণেতারা ইসলামাবাদ ও রাওয়ালপিন্ডির বিক্ষোভে যোগ দেবেন, আর বাকি পদাধিকারীরা কেপির বিক্ষোভে অংশ নেবেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইউক্রেনের আরও এক গুরুত্বপূর্ণ শহর দখলে নেওয়ার দাবি রাশিয়ার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
পূর্ব ইউক্রেনের পোকরোভস্ক শহরের আবাসিক এলাকার একটি দৃশ্য। ছবিটি চলতি বছরের মার্চে তোল। ছবি: এএফপি
পূর্ব ইউক্রেনের পোকরোভস্ক শহরের আবাসিক এলাকার একটি দৃশ্য। ছবিটি চলতি বছরের মার্চে তোল। ছবি: এএফপি

রাশিয়া দাবি করেছে, তারা ইউক্রেন থেকে দনবাস অঞ্চলের প্রবেশদ্বার বলে পরিচিত পোকরোভস্ক শহরটি দখল করে নিয়েছে। এই শহরটি পূর্বাঞ্চলে ইউক্রেনের অন্যতম লজিস্টিক হাব হিসেবেও পরিচিত। অর্থাৎ, শহরটির সামরিক গুরুত্ব অনেক বেশি। দীর্ঘদিনের লড়াই শেষে রুশ বাহিনী এই দাবি করল।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল–জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, রাশিয়ার সেনাবাহিনী জানিয়েছে—তারা পূর্ব ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ লজিস্টিকস হাব পোকরোভস্ক শহরটি দখল করেছে। প্রায় দুই বছর ধরে অবরুদ্ধ থাকা এই শহরটি স্থানীয় সময় গত রোববার রাতে রুশ বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে আসে বলে দাবি করা হয়েছে।

গতকাল সোমবার টেলিগ্রামে দেওয়া এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে ক্রেমলিন। রুশ সেনাবাহিনীর চিফ অব স্টাফ ভ্যালেরি গেরাসিমভকে উদ্ধৃত করে পোস্টে আরও বলা হয়, খারকিভ অঞ্চলের ভভচানস্ক শহরটিও রুশ বাহিনী দখল করেছে।

রুশ প্রেসিডেন্টের কার্যালয় ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ জানান, রুশ সংবাদ সংস্থা তাসকে গেরাসিমভ জানিয়েছেন, গত রোববার রাতে পুতিন ফ্রন্টলাইনের একটি কমান্ড সেন্টার পরিদর্শন করার সময় তিনি পোকরোভস্ক দখলের খবর পেয়েছেন। পোকরোভস্ক দোনেৎস্ক অঞ্চলের একটি বড় পরিবহন কেন্দ্র। পূর্ব ইউক্রেনের এই চারটি অঞ্চলকেই রাশিয়া নিজেদের ভূখণ্ড হিসেবে দাবি করে আসছে।

একসময় ৬০ হাজার মানুষের শহরটি সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে রুশ ড্রোন, গোলাবর্ষণ ও বোমা হামলায় বিধ্বস্ত হয়েছে। বহু ভবন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। ইউক্রেন এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে শহরটি হারানোর কথা স্বীকার করেনি। তবে রয়টার্স জানিয়েছে, রুশ বাহিনী পোকরোভস্কের রাস্তায় সৈন্যদের মার্চপাস্ট ও রুশ পতাকা ওড়ানো দৃশ্যের ভিডিও ছড়িয়ে দিচ্ছে।

তাসের খবরে বলা হয়েছে, পরে পুতিন রুশ বাহিনীকে এ সাফল্যের জন্য অভিনন্দন জানান। পুতিন বলেন, ‘ক্রাসনোআর্মেইস্ক (পোকরভস্কের রুশ নাম) সংক্রান্ত এ অভিযানের ফলাফলের জন্য আমি আপনাদের ধন্যবাদ জানাতে চাই। অবশ্যই, আমাদের যোদ্ধারা, যারা এসব যুদ্ধ কাজ সম্পন্ন করছে।’

এদিকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এই সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করছেন যুদ্ধের ইতি টানার সম্ভাব্য পথ নিয়ে আলোচনা করতে। তিনি সোমবার বলেন, তাঁর অন্যতম প্রধান অগ্রাধিকার হলো—রাশিয়াকে কোনোভাবেই এমন ভূখণ্ড ছাড় না দেওয়া, যা মস্কোর দখলদারত্বকে বৈধতা দিতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

এশিয়ার চার দেশে বন্যা-ভূমিধসে মৃতের সংখ্যা ১১০০ ছাড়াল

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০২ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৫৯
এশিয়ার চার দেশে বন্যা-ভূমিধসে মৃতের সংখ্যা ১১০০ ছাড়াল

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে বন্যা ও ভূমিধসে প্রাণহানি সোমবার ১ হাজার ১০০ ছড়িয়েছে। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত শ্রীলঙ্কা ও ইন্দোনেশিয়া বন্যাকবলিত এলাকার জীবিত ব্যক্তিদের সহায়তায় সেনা মোতায়েন করেছে। খবর এএফপির

অবিরাম বৃষ্টি গত সপ্তাহে শ্রীলঙ্কা দ্বীপজুড়ে আর ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা, থাইল্যান্ডের দক্ষিণাঞ্চল ও মালয়েশিয়ার উত্তরে তাণ্ডব চালায়। এই অঞ্চলে এখন বর্ষাকাল চলছে। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বৃষ্টি আরও ঘনীভূত ও ঝড় তীব্র হয়ে উঠছে।

নিঃশেষ না হওয়া বৃষ্টির ধারা অনেককে ছাদে আটকে ফেলে। নৌকা কিংবা হেলিকপ্টারের জন্য তারা অপেক্ষা করেছে দীর্ঘক্ষণ। গ্রামের পর গ্রাম সাহায্য থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।

সোমবার উত্তর সুমাত্রায় পৌঁছে ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট প্রাবো সুবিয়ান্তো বললেন, ‘সবচেয়ে খারাপটা পার হয়ে গেছে, আশা করি।’ তিনি বলেন, সরকারের ‘প্রথম কাজ এখন জরুরি সহায়তা পৌঁছে দেওয়া।’ বিশেষ করে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া কয়েকটি এলাকায় তা জরুরি বলে তিনি জানান।

প্রাবোওর ওপর চাপ বাড়ছে। বন্যা ও ভূমিধসে অন্তত ৫৯৩ জন নিহত হয়েছে, এখনো প্রায় ৪৭০ জন নিখোঁজ। এই প্রেক্ষাপটে জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণার দাবি উঠছে। তা সত্ত্বেও প্রাবো এখনো প্রকাশ্যে আন্তর্জাতিক সহায়তা চায়নি।

২০১৮ সালের ভয়াবহ ভূমিকম্প ও সুনামির পর এটিই ইন্দোনেশিয়ার সবচেয়ে প্রাণঘাতী প্রাকৃতিক দুর্যোগ। সেই সুনামিতে সুলাওয়েসিতে ২ হাজারের বেশি মানুষ মারা গিয়েছিল। সরকার তিনটি যুদ্ধজাহাজ ও দুটি হাসপাতাল জাহাজ পাঠিয়েছে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে। সেখানে এখনো বহু সড়ক চলাচলের অনুপযোগী।

উত্তর আচেহ অঞ্চলের বাসিন্দা ২৮ বছরের মিসবাহুল মুনির জানালেন, পানিতে গলা পর্যন্ত ডুবে তিনি পরিবারে ফিরেছেন। তার ভাষায়, ‘বাড়ির সবকিছুই নষ্ট হয়ে গেছে। শুধু পরনের কাপড়টাই আছে। অন্য জায়গায় অনেক মানুষ মারা গেছে। আমরা বেঁচে আছি, এটাই ভাগ্য।’

এদিকে শ্রীলঙ্কায় সরকার আন্তর্জাতিক সাহায্য চেয়েছে। ঘূর্ণিঝড় ‘ডিটওয়া’-এর কারণে সৃষ্ট বন্যা ও ভূমিধসে আটকা পড়া মানুষদের উদ্ধার করতে সেনা হেলিকপ্টার ব্যবহার করা হচ্ছে।

সোমবার সরকারি হিসাবে অন্তত ৩৫৫ জনের মৃত্যু নিশ্চিত হয়েছে। নিখোঁজ রয়েছে ৩৬৬ জন। রাজধানী কলম্বোতে রাতভর পানি বেড়েছে। তবে বৃষ্টি থামায় ধীরে ধীরে পানি নামার আশা দেখা গেছে। কিছু দোকান ও অফিস আবার খুলেছে।

কলম্বো উপকণ্ঠের মানুষ এমন বন্যায় হতভম্ব। ডেলিভারি বয় দিনুশা সাঞ্জয়ার ভাষায়, ‘প্রতিবছর সামান্য জলাবদ্ধতা হয়। কিন্তু এবার যা হলো, তা অন্য কিছু। পানির পরিমাণই শুধু নয়, কী দ্রুত সব ডুবে গেল, সেটাই ভয়ংকর।’

কর্তৃপক্ষ জানায়, কেন্দ্রীয় পার্বত্য অঞ্চলে যে ক্ষতি হয়েছে, তা পুরোপুরি বোঝা যাচ্ছে এখন। কারণ, গাছপালা আর কাদায় বন্ধ হয়ে থাকা সড়কগুলো ধীরে ধীরে পরিষ্কার হচ্ছে।

রাষ্ট্রপতি অনুরা কুমারা দিসানায়েকে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন। তিনি বলছেন, এটি ‘দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ও চ্যালেঞ্জিং প্রাকৃতিক দুর্যোগ’।

২০০৪ সালের সুনামির পর এই প্রথম শ্রীলঙ্কায় এত বড় ক্ষতি। তখন প্রায় ৩১ হাজার মানুষ মারা গিয়েছিল, গৃহহীন হয়েছিল ১০ লাখের বেশি।

থাইল্যান্ডে ক্ষোভ রোববার বিকেলে শ্রীলঙ্কায় বৃষ্টি থেমে যায়। তবু রাজধানীর নিচু এলাকাগুলো ডুবে ছিল। বড় ধরনের ত্রাণ অভিযানের প্রস্তুতি চলছিল। আটকা পড়া মানুষকে উদ্ধারে হেলিকপ্টার ব্যবহার করা হচ্ছে। খাবারও পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। এক হেলিকপ্টার রোববার কলম্বোর উত্তরে বিধ্বস্ত হয়ে পাইলট নিহত হন।

বর্ষাকাল প্রায় প্রতিবছরই ভূমিধস ও আকস্মিক বন্যা ডেকে আনে। কিন্তু ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায় এবার যে বন্যা দেখা গেছে, তা আরও ঘনীভূত করেছে একটি বিরল ক্রান্তীয় ঝড়। ঝড়টি সুমাত্রায় প্রচণ্ড বৃষ্টি নামিয়েছে।

তীব্র বৃষ্টিতে দক্ষিণ থাইল্যান্ডে অন্তত ১৭৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। সোমবার কর্তৃপক্ষ জানায়, গত এক দশকে দেশটিতে এটি অন্যতম প্রাণঘাতী বন্যা। সরকার ত্রাণ ব্যবস্থা চালু করেছে। কিন্তু সমালোচনা বাড়ছে। দুই স্থানীয় কর্মকর্তাকে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

পাশের দেশ মালয়েশিয়ায়ও প্রবল বৃষ্টি পেরলিস অঙ্গরাজ্যের বহু এলাকা ডুবিয়ে দিয়েছে। সেখানে দুজন মারা গেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতে ‘গরুর মাংস’ সন্দেহে বিয়ে বাড়িতে সংঘর্ষ—ফরেনসিক পরীক্ষায় গেল নমুনা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০২ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০: ২৫
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

ভারতের উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের আলিগড়ে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে খাবারের কাউন্টারে রাখা ‘বিফ কারি’ লেখা একটি লেবেলকে কেন্দ্র করে রোববার (৩০ নভেম্বর) রাতে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। লেবেল দেখে আকাশ ও গৌরব কুমার নামে দুই অতিথি আপত্তি জানিয়ে ভিডিও ধারণের চেষ্টা করেন। এ নিয়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে বিয়ের আয়োজকদের সঙ্গে তাঁদের উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে এবং ধস্তাধস্তি শুরু হয়।

পরিস্থিতি সামাল দিতে ভারতের পুলিশ ও ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছে খাবারের নমুনা সংগ্রহ করেন এবং এটিকে ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠান।

সার্কেল অফিসার সর্বম সিং ভারতের টেলিগ্রাফ পত্রিকাকে জানান, ঘটনায় ক্যাটারারসহ সংশ্লিষ্ট তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছিল। পরে রাতেই তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়। তিনি বলেন, ‘ফরেনসিক রিপোর্টে মাংসের ধরন নিশ্চিত হলে তবেই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এখন পর্যন্ত কোনো মামলা দায়ের হয়নি।’

এদিকে ক্যাটারারের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন আপত্তি জানানো গৌরব কুমার। তিনি দাবি করেছেন—ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার উদ্দেশেই ইচ্ছাকৃতভাবে ওই লেবেল ব্যবহার করা হয়েছিল। অন্যদিকে পুলিশ জানিয়েছে, ‘বিফ’ শব্দটি অনেক সময় মহিষের মাংস (ভারতে খাবার হিসেবে আইনত বৈধ) এবং গরুর মাংস (যা নিষিদ্ধ) উভয় অর্থে ব্যবহৃত হয়। এই বিভ্রান্তি থেকে প্রায়ই ওই অঞ্চলে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়।

ঘটনাটি জানাজানি হলে বিজেপি কর্মীরা স্থানীয় সিভিল লাইন্স থানায় গিয়ে জড়ো হয় এবং কঠোর ব্যবস্থার দাবি জানায়। এ সময় বহুজন সমাজ পার্টির (বিএসপি) নেতা সালমান শহিদও থানায় উপস্থিত হন। তিনি অভিযোগ করেন, বিজেপি কর্মীরা কোনো ব্যাখ্যা না শুনে ‘অতিরিক্ত প্রভাব বিস্তারের’ চেষ্টা করেছে এবং শুরু থেকেই বিষয়টিকে ভুল বোঝাবুঝি হিসেবে ব্যাখ্যা করা সত্ত্বেও তারা উত্তেজনা বাড়িয়েছে।

পুলিশ বলছে, পরিস্থিতি বর্তমানে নিয়ন্ত্রণে আছে এবং ফরেনসিক রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জর্জিয়ায় বিক্ষোভকারীদের দমনে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের প্রমাণ পেয়েছে বিবিসি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
গত বছরের ২৮ নভেম্বর জর্জিয়া সরকার ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) যোগদানের প্রক্রিয়া স্থগিত করলে রাজধানী তিবিলিসিতে বিক্ষোভ শুরু হয়। ছবি: এএফপি
গত বছরের ২৮ নভেম্বর জর্জিয়া সরকার ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) যোগদানের প্রক্রিয়া স্থগিত করলে রাজধানী তিবিলিসিতে বিক্ষোভ শুরু হয়। ছবি: এএফপি

গত বছর সরকারবিরোধী বিক্ষোভ দমনে জর্জিয়ার কর্তৃপক্ষ প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ে ব্যবহৃত একটি রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করেছিল বলে বিবিসির অনুসন্ধানে প্রমাণ পাওয়া গেছে। রাসায়নিক অস্ত্র বিশেষজ্ঞ ও দাঙ্গা পুলিশের অভ্যন্তরীণ সূত্রের মতে, পদার্থটি ছিল ‘ক্যামাইট’। এর রাসায়নিক নাম ব্রোমোবেনজিল সায়ানাইড।

গত বছরের ২৮ নভেম্বর জর্জিয়া সরকার ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) যোগদানের প্রক্রিয়া স্থগিতের ঘোষণা দিলে রাজধানী তিবিলিসির রাস্তায় বিক্ষোভ শুরু হয়। ওই সময় বিক্ষোভকারীদের ওপর জলকামান ব্যবহার করা হলে পরবর্তী সময়ে তারা তীব্র শারীরিক সমস্যার সম্মুখীন হয় বলে জানা গেছে। বিক্ষোভকারীরা জানান, জলকামান থেকে ছিটানো পানি গায়ে পড়ার পর তীব্র জ্বালা শুরু হয়। সাধারণ পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলার চেষ্টা করলে সেটা আরও বেশি খারাপ হতে থাকে।

বিক্ষোভকারীদের মধ্যে অনেকে কয়েক সপ্তাহ বা ৩০ দিনের বেশি সময় ধরে শ্বাসকষ্ট, কাশি, বমি, মাথাব্যথা, ক্লান্তিসহ নানা দীর্ঘমেয়াদি সমস্যায় ভুগেছে।

শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ড. কনস্তানতিন চাকুনাশভিলি নিজেও এই পানির সংস্পর্শে এসেছিলেন। তিনি জানান, তাঁর ত্বক কয়েক দিন ধরে প্রচণ্ড জ্বলেছে। ধোয়ার চেষ্টা করলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে থাকে।

এটি নিয়ে তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি জরিপ চালান। প্রায় ৩৫০ জন সেখানে সাড়া দেয়। তাদের প্রায় অর্ধেকই জানায়, ৩০ দিনের বেশি সময় ধরে তাদের এই সমস্যা ছিল।

বিবিসি তাদের অনুসন্ধানের জন্য দাঙ্গা পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট একাধিক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এবং রাসায়নিক অস্ত্র বিশেষজ্ঞের মতামত নেয়। জর্জিয়ার দাঙ্গা পুলিশের অস্ত্র বিভাগের সাবেক প্রধান লাশা শেরগেলাশভিলি জানান, ২০০৯ সালে তিনি যে রাসায়নিকটি জলকামানে ব্যবহারের জন্য পরীক্ষা করেছিলেন, সেটির প্রভাব ছিল সাধারণ কাঁদানে গ্যাসের চেয়ে প্রায় ১০ গুণ শক্তিশালী। তিনি এটি ব্যবহার করতে নিষেধ করতে করেছিলেন। কিন্তু কেউ তাঁর কথা শোনেনি।

লাশা শেরগেলাশভিলি বলেন, যদি মেঝেতে এই রাসায়নিক পড়ে, তাহলে জল দিয়ে ধুয়ে ফেললেও পরবর্তী দুই থেকে তিন দিন সেই এলাকায় থাকা যাবে না।

বিখ্যাত টক্সিকোলজি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ক্রিস্টোফার হলস্টেগে এসব প্রমাণ বিশ্লেষণ করে নিশ্চিত করেন, আক্রান্তদের উপসর্গ গুলি ব্রোমোবেনজিল সায়ানাইড (ক্যামাইট) ব্যবহারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

ক্যামাইট প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ফ্রান্স জার্মানির বিরুদ্ধে ব্যবহার করেছিল। এর দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতিকর প্রভাবের কারণে এটি ১৯৩০-এর দশকে বাজার থেকে তুলে নেওয়া হয় এবং এর পরিবর্তে সিএস গ্যাস (কাঁদানে গ্যাস) ব্যবহার শুরু হয়।

আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, পুলিশের জন্য ব্যবহৃত রাসায়নিকের প্রভাব অস্থায়ী এবং আনুপাতিক হতে হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, আরও নিরাপদ ও প্রচলিত দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণকারী পদার্থ থাকা সত্ত্বেও একটি অপ্রচলিত এবং আরও শক্তিশালী রাসায়নিকের ব্যবহারকে রাসায়নিক অস্ত্র হিসেবে গণ্য করা যেতে পারে।

জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক (নির্যাতন-সংক্রান্ত) অ্যালিস এডওয়ার্ডস বলেন, রাসায়নিক ব্যবহার-সংক্রান্ত নিয়মের অভাবেই কেউ কেউ এগুলো ব্যবহার করে। এটি আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী। অপরাধ বিবেচনায় এসব ঘটনার তদন্ত করা উচিত।

তবে জর্জিয়ার ক্ষমতাসীন দল ‘জর্জিয়ান ড্রিম’ বিবিসির এই অনুসন্ধানকে অবাস্তব বলে প্রত্যাখ্যান করেছে। দেশটির সরকার জানিয়েছে, মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদন প্রকাশের অভিযোগে তারা বিবিসির বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত