Ajker Patrika

কিয়েভজুড়ে রাশিয়ার ‘নিষ্ঠুর’ হামলায় নিহত ৪, বিদ্যুৎহীন ইউক্রেনের বিশাল এলাকা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
রুশ হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত কিয়েভের একটি ভবন। ছবি: এএফপি
রুশ হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত কিয়েভের একটি ভবন। ছবি: এএফপি

ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। এই হামলায় অন্তত ৪ জন নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। এ ছাড়া, রাশিয়ার ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলায় কিয়েভসহ ইউক্রেনের বিভিন্ন অঞ্চলে বিদ্যুৎ বিভ্রাট দেখা দিয়েছে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল–জাজিরার প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জানিয়েছেন, আজ শুক্রবার ভোরে কিয়েভে রাশিয়ার এক ‘বিশাল’ হামলায় অন্তত চারজন নিহত ও বহু মানুষ আহত হয়েছেন। ইউক্রেনের জরুরি সেবা বিভাগ জানিয়েছে, রাতভর চলা ওই আক্রমণের পর ৪০ জনের বেশি মানুষকে উদ্ধার করতে হয়েছে। কিয়েভের ১০টি জেলার বেশির ভাগেই আবাসিক ভবনে আগুন বা ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে।

জেলেনস্কি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে লিখেছেন, এটি ছিল ‘এক নিষ্ঠুর হামলা।’ এ হামলায় চারজন নিহত হয়েছেন এবং বহু মানুষ আহত হয়েছে, তাদের মধ্যে শিশু ও এক গর্ভবতী নারীও আছেন। তিনি জানান, ‘প্রায় ৪৩০টি ড্রোন এবং ১৮টি ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে, যার মধ্যে ব্যালিস্টিক ও অ্যারোব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রও ছিল। এটি মানুষের ওপর ও বেসামরিক অবকাঠামোর সর্বোচ্চ ক্ষতি নিশ্চিত করার জন্য পরিকল্পিতভাবে চালানো আক্রমণ।’

তিনি আরও বলেন, ‘হামলার মূল লক্ষ্য ছিল কিয়েভ। পাশাপাশি কিয়েভ, খারকিভ ও ওদেসা অঞ্চলেও আঘাত হানা হয়েছে।’

এর আগে কিয়েভ পুলিশ জানায়, এক বৃদ্ধা নিহত হয়েছেন এবং আহতদের মধ্যে ১০ বছরের এক শিশুও রয়েছে। কিয়েভের মেয়র ভিতালি ক্লিৎস্কো একে ‘শত্রুর ব্যাপক আক্রমণ’ বলে উল্লেখ করেন। তিনি জানান, হাসপাতালে নেওয়া আহতদের মধ্যে এক গর্ভবতী নারী এবং এক গুরুতর অবস্থায় থাকা পুরুষও রয়েছেন।

কিয়েভ অঞ্চলের প্রধান মাইকোলা কালাশনিক বলেন, বিলা তসেরকভায় ৫৫ বছর বয়সী এক ব্যক্তি দগ্ধ হওয়ায় হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, রুশ ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোনগুলো কিয়েভের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো লক্ষ্য করে আঘাত হেনেছে।

এদিকে, রাশিয়ার রাতভর হামলায় জ্বালানি অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ইউক্রেনের তিনটি অঞ্চল বিদ্যুৎহীন অবস্থায় রয়েছে বলে জানিয়েছে ইউক্রেনের জ্বালানি মন্ত্রণালয়। বিশেষ করে কিয়েভ, ওদেসা এবং দোনেৎস্ক ওব্লাস্ত অঞ্চল। টেলিগ্রামে দেওয়া বার্তায় মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত স্থাপনা মেরামতে জ্বালানি কর্মীরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।

অপরদিকে, রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তাদের বাহিনী রাতে ইউক্রেনের ২০০ টির বেশি ড্রোন ভূপাতিত করেছে। টেলিগ্রামে এক বিবৃতিতে তারা লিখেছে, ‘গত রাতে বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ইউক্রেনের ২১৬টি মানবহীন উড়োজাহাজ শনাক্ত ও ধ্বংস করেছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আলিনগরকে ‘সীতানগর’ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিহারের সর্বকনিষ্ঠ এমএলএ হওয়ার পথে মৈথিলী

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
মৈথিলী ঠাকুর। ছবি: এক্স
মৈথিলী ঠাকুর। ছবি: এক্স

বিহার বিধানসভা নির্বাচনের ভোট গণনা চলছে। এই নির্বাচনে বিজেপির টিকিটে আলিনগর আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মোদিভক্ত জনপ্রিয় লোকসংগীতশিল্পী মৈথিলী ঠাকুর। সর্বশেষ পাওয়া খবরে জানা গেছে, ২৫ বছর বয়সী মৈথিলী ঠাকুর বিপুল ভোটে এগিয়ে আছেন এবং তিনি রাজ্যের সর্বকনিষ্ঠ বিধায়ক (এমএলএ) হতে চলেছেন।

মৈথিলীর এমন খ্যাতির যাত্রা শুরু হয়েছিল অনেক আগে—মাত্র ছয় বছর বয়সে। সংগীত পরিবারে জন্মগ্রহণ করা মৈথিলী তাঁর দাদা ও বাবার কাছে লোকসংগীত, হিন্দুস্তানি শাস্ত্রীয় সংগীত, হারমোনিয়াম ও তবলায় প্রশিক্ষণ নেন।

পরে মেয়ের ব্যতিক্রমী প্রতিভা দেখে বাবা তাঁকে দিল্লিতে নিয়ে আসেন। ১০ বছর বয়সে মৈথিলী দিল্লির দ্বারকায় জাগরণ ও বিভিন্ন সংগীত অনুষ্ঠানে পরিবেশনা শুরু করেন।

১১ বছর বয়সে তিনি ‘সা রে গা মা পা লিটল চ্যাম্পস’-এ অংশ নেন। ১৫ বছর বয়সে সনি টিভিতে ‘ইন্ডিয়ান আইডল জুনিয়র’-এ প্রতিযোগিতা করেন। এক বছর পর, ১৬ বছর বয়সে, তিনি ‘আই জিনিয়াস ইয়াং সিঙ্গিং স্টার’ প্রতিযোগিতা জেতেন। পরে তিনি ‘রাইজিং স্টার’-এ অংশ নেন এবং মাত্র দুই ভোটের ব্যবধানে রানার্সআপ হন।

সামাজিক মাধ্যমের উত্থানের সঙ্গে সঙ্গে মৈথিলীর জনপ্রিয়তা দ্রুত বাড়তে থাকে। ফেসবুক ও ইউটিউবে তাঁর মিউজিক ভিডিওগুলো ভাইরাল হয় এবং তিনি একটি ডিজিটাল ফ্যানবেজ তৈরি করেন। দুই ভাইয়ের সঙ্গে সংগীত পরিবেশন করে তিনি অসংখ্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হন।

বিহারের মধুবনী জেলার এই শিল্পী ও তাঁর দুই ভাইকে ২০১৯ সালে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক মধুবনীর ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।

ভারত সরকার তাঁকে ‘অটল মিথিলা’ সম্মান দেয়। ২০২১ সালে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর তাঁকে ‘লোকমত সুর জ্যোৎস্না জাতীয় সংগীত পুরস্কারে’ ভূষিত করেন।

দুই ভাই ঋষভ ও আয়াচির সঙ্গে তুলসীদাসের রাম চরিতমানস এবং ভগবান রাম ও সীতাকে উৎসর্গ করা মৈথিলী লোকসংগীত পরিবেশন শুরু করার পর তাঁর খ্যাতি আরও বাড়ে। মধুবনী শিল্পকলার থিম ও মোটিফ তাঁর পরিবেশনায় যুক্ত করে এই শিল্পের প্রচারেও তিনি অবদান রাখেন।

২৫ বছর বয়সে মৈথিলী রাজনীতিতে পা রাখেন। গত ১৪ অক্টোবর তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে বিজেপিতে যোগ দেন এবং আলিনগর বিধানসভা আসনের টিকিট পান। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বেলা ৩টা পর্যন্ত ৫১ হাজারের বেশি ভোটের ব্যবধানে এগিয়ে আছেন মৈথিলী।

সংবাদ সংস্থা এএনআইকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মৈথিলী বলেছেন, ‘এটি আমার কাছে স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে। মানুষ আমার ওপর এত আস্থা রেখেছে। একজন বিধায়ক হিসেবে এটি আমার প্রথম মেয়াদ হবে এবং আমি নির্বাচনী এলাকার জন্য আমার সেরাটা দেব।’

মৈথিলী এই আসনে রাষ্ট্রীয় জনতা দলের (আরজেডি) বিনোদ মিশ্র ও জন সুরাজ পার্টির বিপ্লব কুমার চৌধুরীর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তিনি জিতলে বিহার বিধানসভায় নির্বাচিত সর্বকনিষ্ঠ প্রতিনিধি হবেন।

এদিকে, তাঁর বিজয় আলিনগরে বিজেপির প্রথম জয় হবে। মৈথিলীর প্রধান প্রতিশ্রুতিগুলোর মধ্যে রয়েছে—স্কুলে পাঠ্যক্রমবহির্ভূত কার্যকলাপ হিসেবে মিথিলা চিত্রকলার প্রবর্তন, আলিনগরের নাম পরিবর্তন করে সীতানগর রাখা এবং মেয়েদের শিক্ষাব্যবস্থা শক্তিশালী করা।

আলিনগর আসনে উচ্চবর্ণের ব্রাহ্মণ, মুসলিম, যাদব (যদুর বংশধর) এবং পিছিয়ে পড়া মাল্লাহ ও পাসোয়ান জনগোষ্ঠী রয়েছে। ২০১০ ও ২০১৫ সালে আরজেডির আব্দুল বারি সিদ্দিকী এবং ২০২০ সালে বিকাশশীল ইনসান পার্টির (ভিআইপি) মিশরি লাল যাদবের জয়ের মধ্য দিয়ে ২০০৮ সাল থেকে আসনটি মহাগাঠবন্ধনের (এমজিবি) ঘাঁটি ছিল। তবে এবার সেটি বিজেপির হাতে চলে যাচ্ছে।

প্রসঙ্গত, গত ৬ অক্টোবর বিহার বিধানসভা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। এরপর দুই দফায় ৬ ও ১১ নভেম্বর ভোট হয়। আজ শুক্রবার ভোট গণনা চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

গাজার শাসনকাঠামো নিয়ে মুখোমুখি যুক্তরাষ্ট্র–রাশিয়া, জাতিসংঘে পাল্টাপাল্টি প্রস্তাব

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৪ নভেম্বর ২০২৫, ১৬: ৩৫
গাজায় ত্রাণ নিতে গিয়ে প্রায়ই ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে নিহত হচ্ছে ফিলিস্তিনিরা। ছবি: এএফপি
গাজায় ত্রাণ নিতে গিয়ে প্রায়ই ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে নিহত হচ্ছে ফিলিস্তিনিরা। ছবি: এএফপি

যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদকে তাদের উত্থাপিত গাজা শাসনসংক্রান্ত খসড়া প্রস্তাবকে আনুষ্ঠানিক সমর্থন দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের গাজা শান্তি পরিকল্পনাকে শক্তিশালী করতে এই প্রস্তাব। ওয়াশিংটন সতর্ক করেছে, প্রস্তাবটি পাস না হলে ফিলিস্তিনিদের জন্য ‘গুরুতর পরিণতি’র পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। তবে রাশিয়া যুক্তরাষ্ট্রের বিকল্প একটি প্রস্তাব উত্থাপন করেছে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স তাদের কাছে এ-সংক্রান্ত আসা নথির ভিত্তিতে জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের এই আহ্বানের মধ্যে রাশিয়া নিরাপত্তা পরিষদে গাজা ইস্যুতে নিজেদের একটি ‘বিকল্প প্রস্তাব’ হাজির করেছে।

জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্র মিশনের এক মুখপাত্র গতকাল বৃহস্পতিবার বলেন, ওয়াশিংটনের প্রস্তাবকে ঘিরে ‘বিভ্রান্তি তৈরি করার যেকোনো চেষ্টা’ গাজার ফিলিস্তিনিদের জন্য ‘গুরুতর, বাস্তব ও পুরোপুরি এড়ানো অসম্ভব এমন পরিণতি’ ডেকে আনতে পারে। বিশেষ করে, এ কারণে যুদ্ধবিরতি ভেঙে যেতে পারে এবং ইসরায়েল আবারও হামলা শুরু করতে পারে।

গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র ১৫ সদস্যের নিরাপত্তা পরিষদের কাছে খসড়া প্রস্তাবটি পাঠায়। এর ভাষা ও বিষয়বস্তু নিয়ে এখনো আলোচনা চলছে। বার্তা সংস্থা এএফপির পাওয়া খসড়া অনুযায়ী, এই প্রস্তাবে গাজায় একটি অন্তর্বর্তীকালীন শাসনকাঠামো ‘বোর্ড অব পিস বা শান্তি পরিষদকে’ ২০২৭ সালের শেষ পর্যন্ত দুই বছরের ম্যান্ডেট দেওয়ার কথা রয়েছে। এই পরিষদের চেয়ারম্যান থাকবেন ট্রাম্প।

খসড়ায় আরও বলা হয়েছে, সদস্য রাষ্ট্রগুলো একটি ‘অস্থায়ী আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনী (আইএসএফ)’ গঠন করবে। এই বাহিনী গাজার অ-রাষ্ট্রীয় সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর হাতে থাকা অস্ত্র স্থায়ীভাবে নিষ্ক্রিয় করতে কাজ করবে, বেসামরিক মানুষকে রক্ষা করবে এবং মানবিক করিডরগুলোকে নিরাপদ রাখবে।

আইএসএফ ইসরায়েল, মিসর ও নবগঠিত ফিলিস্তিনি পুলিশ বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে সীমান্ত এলাকা সুরক্ষায় কাজ করবে এবং গাজাকে সামরিকীকরণমুক্ত করতে ভূমিকা রাখবে। ট্রাম্প জানিয়েছেন, প্রস্তাবিত ২০ হাজার সদস্যের এই বাহিনীতে যুক্তরাষ্ট্র কোনো সেনা পাঠাবে না।

ওয়াশিংটন বলছে, ইন্দোনেশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মিসর, কাতার, তুরস্ক ও আজারবাইজানের সঙ্গে বাহিনীতে যোগদানের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে হামাসের সঙ্গে সরাসরি সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় এসব দেশ এখনো সেনা পাঠানো নিয়ে দ্বিধায় রয়েছে।

আগের খসড়াগুলোর তুলনায় সর্বশেষ প্রস্তাবে ভবিষ্যৎ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের প্রসঙ্গ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ (পিএ) প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করলে ‘ফিলিস্তিনিদের আত্মনিয়ন্ত্রণ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য বাস্তবসম্মত পথ খুলে যেতে পারে’। প্রস্তাবে আরও বলা হয়েছে, ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে রাজনৈতিক সম্ভাবনার একটি দিগন্ত নির্ধারণ করতে যুক্তরাষ্ট্র সংলাপ শুরু করবে, যাতে শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ সহাবস্থান নিশ্চিত হয়।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও গত বুধবার বলেছেন, প্রস্তাবটি পাস হবে বলে তিনি আশাবাদী। ভাষা নিয়ে আলোচনায় ‘ভালো অগ্রগতি’ হয়েছে। তবে নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যদের মধ্যে ‘বোর্ড অব পিস’ ধারণাটি সমর্থন পেলেও খসড়ায় বেশ কিছু গুরুতর প্রশ্নের উত্তর নেই বলে জানিয়েছে এএফপি। যেমন, পরিষদের কোনো তদারকি কাঠামোর উল্লেখ নেই, পিএর ভবিষ্যৎ ভূমিকা অস্পষ্ট এবং আইএসএফের ম্যান্ডেট সম্পর্কেও বিস্তারিত তথ্য নেই।

এই প্রশ্নগুলো অমীমাংসিত থাকতেই রাশিয়া গতকাল বৃহস্পতিবার তাদের নিজস্ব পাল্টা প্রস্তাব নিরাপত্তা পরিষদের সামনে তোলে। রাশিয়ার নোটে বলা হয়েছে, ‘আমাদের খসড়ার উদ্দেশ্য হলো নিরাপত্তা পরিষদকে এমন একটি ভারসাম্যপূর্ণ, গ্রহণযোগ্য ও ঐক্যবদ্ধ অবস্থান নির্ধারণে সক্ষম করা, যা স্থায়ীভাবে যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করতে পারে।’

৮ অক্টোবর ট্রাম্প ঘোষণা করেন, ইসরায়েল ও হামাস তাঁর প্রচারিত ২০ দফার গাজা শান্তি পরিকল্পনার প্রথম পর্যায়ে সম্মত হয়েছে। এতে দুই বছরের সংঘাত থেমে গেছে, যে সংঘাতে ইসরায়েলি বাহিনী গাজায় কমপক্ষে ৬৯ হাজার ১৭৯ জনকে হত্যা করেছে। এই চুক্তির মাধ্যমে গাজায় আটক থাকা ইসরায়েলি বন্দীদের, জীবিত ও মৃত, ফিলিস্তিনি বন্দীদের সঙ্গে বিনিময় করা হচ্ছে। ইসরায়েলি সেনাদের আংশিক প্রত্যাহার করা হয়েছে এবং কিছু মানবিক সহায়তা প্রবেশও সম্ভব হয়েছে।

যুদ্ধবিরতি এখনো কার্যকর থাকলেও ইসরায়েল চুক্তি লঙ্ঘন করে প্রায় প্রতিদিন হামলা চালাচ্ছে, এতে শত শত ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এই ‘অতিমাত্রায় নাজুক’ যুদ্ধবিরতিকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্র গতকাল নিরাপত্তা পরিষদকে আহ্বান জানায়, ওয়াশিংটনের প্রস্তাব সমর্থন করে ‘মধ্যপ্রাচ্যে বহুল প্রতীক্ষিত শান্তির পথে এগোতে’ হবে। তাদের ভাষায়, এটি ‘মধ্যপ্রাচ্যে দীর্ঘস্থায়ী শান্তির পথে এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত’।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বিহারে ভূমিধস জয়ের পথে বিজেপির জোট

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৪ নভেম্বর ২০২৫, ১৭: ১৩
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

বিহারে বিজেপি নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স বা জাতীয় গণতান্ত্রিক জোট (এনডিএ) প্রায় ঝড় তুলেছে। বিরোধী জোট মহাগাঠবন্ধনকে একপ্রকার ঘূর্ণিতে ফেলে দিয়ে বিধানসভা নির্বাচনে ভূমিধস জয়ের পথে এনডিএ। ভোট গণনা চলছে এবং শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এই জোট এগিয়ে আছে ১৮৯টি আসনে। সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য দরকার ১২২ টি। এনডিএ জোট সেই মাপকাঠি অনেক পেছনে ফেলে এসেছে।

ভারতের নির্বাচন কমিশনের ভোট গণনার হালনাগাদ তথ্যে দেখা যাচ্ছে, ২৪৩ সদস্যের বিহার বিধানসভায় বিজেপি এগিয়ে আছে ৮৯ আসনে। মুখ্যমন্ত্রী নিতীশ কুমারের জনতা দল–ইউনাইটেড (জেডি–ইউ) এগিয়ে ৭৯ আসনে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী চিরাগ পাসওয়ানের লোক জনশক্তি পার্টি (রামবিলাস) এগিয়ে আছে ২১টি আসনে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জিতন রাম মাঞ্জির হিন্দুস্তানি আওয়াম মোর্চা চারটিতে এবং রাজ্যসভা সদস্য উপেন্দ্র কুশওয়াহার রাষ্ট্রীয় লোক মোর্চা দুটিতে এগিয়ে আছে।

বিরোধী জোট মহাগাঠবন্ধন বলা যায় ধুঁকছে। তারা এখন পর্যন্ত এগিয়ে আছে মাত্র ৫০টি আসনে। তেজস্বী যাদবের রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি) ৩৪ টিতে এবং কংগ্রেস মাত্র ৪ টিতে এগিয়ে। সিপিআই (এমএল-লিবারেশন) পাঁচটিতে এবং সিপিএম একটি আসনে এগিয়ে আছে।

ভারতের ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারখ্যাত প্রশান্ত কিশোরের জন সুরাজ দল শুরুতে চারটি আসনে এগোলেও এখন সেই লিড হারিয়ে ফেলেছে। আসাদউদ্দিন ওয়াইসির অল ইন্ডিয়া ইত্তেহাদুল মুসলেমিন এগিয়ে আছে পাঁচটি আসনে। সীমাঞ্চলের মুসলিম ভোট তাদের পকেটে যাচ্ছে বলেই মনে হচ্ছে।

মহাগাঠবন্ধনের মুখ্যমন্ত্রী প্রার্থী তেজস্বী যাদব তার পারিবারিক দুর্গ রঘুপুরে এবার অস্বস্তিকর লড়াইয়ে আটকা পড়েছেন। এটি এমন এক আসন, যেখানে তাঁর জয়কে নিশ্চিত ধরে নেওয়া হয়েছিল। তিনি ২০১৫ সাল থেকে টানা এই আসনেরই বিধায়ক।

২৫ বছরের গায়িকা মৈথিলী ঠাকুর বিজেপির প্রার্থী হিসেবে প্রথমবার নির্বাচনে দাঁড়িয়ে এগিয়ে আছেন আলীনগর আসনে। তেজস্বীর ভাই তেজ প্রতাপ যাদব—যিনি ভোটের আগে নতুন দল জনশক্তি জনতা দল গঠন করেছেন—পিছিয়ে আছেন ১২ হাজার ভোটের বেশি ব্যবধানে।

এর আগের নির্বাচনে, অর্থাৎ, ২০২০ সালে আরজেডি জিতেছিল ৭৫ আসন। একক বৃহত্তম দল ছিল তারা। কংগ্রেসও জিতেছিল ১৯টি আসন। সংখ্যা সামান্য হলেও তা বিরোধী শিবিরকে শক্তি জোগাতেই সাহায্য করেছিল। সেই নির্বাচনে বিরোধী জোট মাত্র ১২ আসনের ঘাটতিতে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারায়। তবু তাদের ভেতরে একটি ক্ষীণ আশার আলো জ্বলে ছিল যে এবারের ভোটে হয়তো সামান্য ব্যবধানে হলেও জয়ের দেখা পাওয়া যাবে।

বিজেপির যাত্রাপথ বরং ২০২০ সালের সুরেই এগোচ্ছে। তখন সমস্ত প্রতিকূলতা পেরিয়ে বিজেপি নিতীশ কুমারের জেডিইউ-র চেয়ে বেশি আসনে জিতে জোট রাজনীতিতে নিজস্ব আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে। এবারও দুই দলই লড়েছে ১০১টি আসনে। জেডিইউ অবশ্য ২০২০ সালের ৪৩ থেকে উন্নতি করে অনেক বেশি আসনে এগোচ্ছে, কিন্তু তবু বিজেপির চেয়ে প্রায় ১০ আসন পেছনে।

এনডিএ-এর এই এগিয়ে থাকা আংশিকভাবে নারীদের ব্যাপক অংশগ্রহণের ফল বলেই বিশ্লেষকদের ধারণা। প্রশান্ত কিশোরের জন সুরাজ দলকে নিয়ে আশা ছিল তারা এনডিএ জোটের বাইরের ভোট ভাগ করে দেবে। কিন্তু তথ্য বলছে, দলটি জামানতের জন্য প্রয়োজনীয় ভোটের চেয়েও কম ভোট পেয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভাষণ বিকৃতি: ট্রাম্পের কাছে ক্ষমা চাইল বিবিসি, ক্ষতিপূরণে অস্বীকৃতি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ট্রাম্প বিবিসির বিরুদ্ধে বিলিয়ন ডলারের মানহানি মামলা করার কথা ভাবছেন বলে জানা গেছে। ছবি: সংগৃহীত
ট্রাম্প বিবিসির বিরুদ্ধে বিলিয়ন ডলারের মানহানি মামলা করার কথা ভাবছেন বলে জানা গেছে। ছবি: সংগৃহীত

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে ক্ষমা চেয়েছে। ট্রাম্পের ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারির ভাষণকে ভুলভাবে এডিট করার দায় স্বীকার করে তারা ক্ষমা চেয়ে ট্রাম্পের কাছে চিঠি পাঠিয়েছিল। তবে ট্রাম্পের মানহানির বিপরীতে ক্ষতিপূরণের দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে বিবিসি।

বিবিসি বলেছে, এই এডিটিং ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সরাসরি সহিংস কার্যক্রমের আহ্বান জানিয়েছেন—এই বিষয়ে ভুল বোঝাপড়া সৃষ্টি করেছিল।’ তারা জানিয়েছে, তারা এই ২০২৪ সালের প্রোগ্রামটি পুনরায় আর সম্প্রচার করবে না। এই দায় নিয়ে বিবিসি মহাপরিচালক টিম ডেভি এবং হেড অব নিউজ ডেবোরা টারনেস পদত্যাগ করেছেন।

এদিকে, ট্রাম্পের আইনজীবীরা হুমকি দিয়েছেন যে, বিবিসি যদি ট্রাম্পকে ১০০ কোটি ডলার ক্ষতিপূরণ না দেয়, ভুলের জন্য ক্ষমা না চায়—তাহলে তারা প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করবে।

বিবিসি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় প্রকাশিত ‘কারেকশনস অ্যান্ড ক্লারিফিকেশনস’ বিভাগে জানিয়েছে, ট্রাম্পের ভাষণ কীভাবে সম্পাদিত হয়েছে তা নিয়ে সমালোচনার পর তাদের ‘প্যানোরোমা’ প্রোগ্রামটি পর্যালোচনা করা হয়েছে। বিবিসি জানিয়েছে, ‘আমরা স্বীকার করছি যে, আমাদের সম্পাদনা অনিচ্ছাকৃতভাবে এমন ধারণা সৃষ্টি করেছে যে—আমরা ভাষণের একটি একক ধারাবাহিক অংশ দেখাচ্ছি, যখন প্রকৃতপক্ষে এটি বিভিন্ন স্থানের উদ্ধৃতাংশ ছিল। এই সম্পাদনা, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সরাসরি সহিংস কার্যক্রমের আহ্বান জানিয়েছিলেন—এমন ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি করেছিল।’

বিবিসির এক মুখপাত্র বলেছে, ‘বিবিসি আইনজীবীরা রোববার প্রাপ্ত এক চিঠির জবাব প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আইনজীবী দলকে চিঠি পাঠিয়েছেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘বিবিসির চেয়ার সামির শাহ আলাদাভাবে হোয়াইট হাউসকে একটি ব্যক্তিগত চিঠি পাঠিয়েছেন, যাতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে পরিষ্কারভাবে জানানো হয়েছে যে—তিনি এবং করপোরেশন ক্ষমা চাচ্ছে, ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারির ভাষণ সম্পাদনার জন্য।’

বিবিসির মুখপাত্র আরও বলেছেন, ‘যদিও ভিডিও ক্লিপটি যেভাবে সম্পাদনা করা হয়েছে, তা নিয়ে বিবিসি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। কিন্তু আমরা দৃঢ়ভাবে মনে করি যে—মিথ্যা বিজ্ঞাপন বা মানহানির ভিত্তি নেই।’

এর আগে, গত রোববার বিবিসি ট্রাম্পের আইনজীবীদের চিঠি পায়। সেখানে বলা হয়, উল্লিখিত ভিডিওটির ‘সম্পূর্ণ ও সুষ্ঠু পুনঃপ্রকাশ’ করতে হবে, ক্ষমা চাইতে হবে এবং ট্রাম্পকে ‘উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ’ দিতে হবে।

বিবিসি মনে করে এই বিষয়ে কোনো মামলা হওয়া উচিত নয়। এই বিষয়ে তারা পাঁচটি যুক্তি তুলে ধরেছে। প্রথমত, বিবিসির ইউএস চ্যানেলে ‘প্যানোরোমার’ ভিডিও সম্প্রচার বা বিতরণের অধিকার ছিল না এবং তারা তা করেনি। দ্বিতীয়ত, ডকুমেন্টারি ট্রাম্পের কোনো ক্ষতি করেনি। কারণ, তিনি ভিডিও প্রকাশের পরও পুনঃনির্বাচিত হয়েছেন। তৃতীয়ত, ক্লিপটি বিভ্রান্ত করার উদ্দেশ্যে করা হয়নি, বরং দীর্ঘ ভাষণ সংক্ষিপ্ত করার জন্য করা হয়েছিল এবং সম্পাদনা শত্রুতার সঙ্গে করা হয়নি। চতুর্থত, ক্লিপটি কখনো আলাদাভাবে বিবেচিত হওয়ার উদ্দেশ্যে ছিল না। এটি ছিল এক ঘণ্টার প্রোগ্রামের ১২ সেকেন্ড, যেখানে ট্রাম্পের সমর্থনে অন্যান্য অনেক আলাপও ছিল। পঞ্চমত, জনসাধারণের বিষয় এবং রাজনৈতিক বক্তৃতার ওপর মতামত মার্কিন মানহানির আইনের অধীনে ব্যাপকভাবে সুরক্ষিত।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত