Ajker Patrika

বন্যায় বিপর্যস্ত দক্ষিণ এশিয়া, চার দেশে ৬০০ জনের প্রাণহানি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ৩০ নভেম্বর ২০২৫, ১২: ০৯
দক্ষিণ এশিয়ায় সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অঞ্চলের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ছবি: এএফপি
দক্ষিণ এশিয়ায় সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অঞ্চলের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ছবি: এএফপি

টানা বৃষ্টিতে সৃষ্ট বন্যা ও ভূমিধসে দক্ষিণ এশিয়ায় প্রায় ৬০০ জনের মৃত্যু হয়েছে। বন্যার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ঘূর্ণিঝড়ও। যার ফলে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অঞ্চলের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কা—এই চার দেশে দুর্ভোগে পড়েছে লাখো মানুষ।

গতকাল শনিবার পর্যন্ত শুধু ইন্দোনেশিয়াতেই ৩০০ জনের বেশি এবং থাইল্যান্ডে ১৬০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। ঘূর্ণিঝড় ‘দিতওয়া’-এর আঘাতে বিপর্যস্ত শ্রীলঙ্কায় প্রাণ হারিয়েছেন ১৫৩ জনের বেশি মানুষ, নিখোঁজ প্রায় ১৯১ জন। মালয়েশিয়াতেও কয়েকজনের মৃত্যুর খবর মিলেছে।

অনেক মানুষ এখনো নিখোঁজ থাকায় আশঙ্কা করা হচ্ছে, মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। বন্যাদুর্গত এলাকাগুলোতে আটকে আছে বহু মানুষ।

ট্রপিক্যাল ঘূর্ণিঝড় ‘সেনিয়ার’ প্রভাবে দেশটিতে ভয়াবহ ভূমিধস ও বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। গত বুধবার ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা দ্বীপে প্রবল বর্ষণ শুরু হয়। এতে বহু বাড়িঘর ভেসে গেছে এবং হাজারো স্থাপনা পানিতে তলিয়ে আছে।

শনিবার ইন্দোনেশিয়ার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা জানায়, সুমাত্রায় বন্যায় ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের পর এখনো প্রায় ৩০০ জন নিখোঁজ।

সুমাত্রার আচেহ প্রদেশের বিরুন এলাকার এক বাসিন্দা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ‘বন্যায় সবকিছু শেষ হয়ে গেছে। কাপড়চোপড় বাঁচাতে চেয়েছিলাম, কিন্তু বাড়িটাই ভেঙে পড়ল।’

ইন্দোনেশিয়াতেই ৩০০ জনের বেশি মানুষ মারা গেছে। ছবি: এএফপি
ইন্দোনেশিয়াতেই ৩০০ জনের বেশি মানুষ মারা গেছে। ছবি: এএফপি

আচেহ প্রদেশের বাসিন্দা আরিনি আমালিয়া বিবিসিকে বলেন, ‘স্রোত এতটাই দ্রুত ছিল যে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই পানি রাস্তায় উঠে আসে, ঘরেও ঢুকে পড়ে।’

তিনি আরও জানান, তিনি ও তাঁর দাদি দ্রুত উঁচু স্থানে থাকা এক আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নেন। পরদিন কিছু জিনিসপত্র আনতে ফিরে এসে দেখেন, বন্যার পানিতে পুরো বাড়ি ডুবে গেছে।

পশ্চিম সুমাত্রায় বাসিন্দা মেরি ওসমান জানান, তিনি তীব্র স্রোতে ভেসে যাচ্ছিলেন। তারপর উদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত একটা কাপড় শুকানোর দড়িতে ঝুলে ছিলেন।

থাইল্যান্ডে ১৬০ জনের মৃত্যু নিশ্চিত হয়েছে। ছবি: এএফপি
থাইল্যান্ডে ১৬০ জনের মৃত্যু নিশ্চিত হয়েছে। ছবি: এএফপি

ইন্দোনেশিয়ার দুর্যোগ সংস্থা জানিয়েছে, লাখো মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হলেও এখনো শত শত মানুষ আটকে রয়েছেন। খারাপ আবহাওয়ার কারণে উদ্ধারকাজ ব্যাহত হচ্ছে।

অন্যদিকে থাইল্যান্ডের দক্ষিণাঞ্চলের সঙখলা প্রদেশে পানির স্তর তিন মিটার (১০ ফুট) পর্যন্ত বেড়ে গিয়েছে। গত এক দশকের অন্যতম ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েছে দেশটি। অন্তত ১৪৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।

শনিবার দেশটির সরকার জানায়, বন্যাকবলিত ১০টি প্রদেশে মোট ১৬০ জনের বেশি মানুষ মারা গেছেন। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৩৮ লাখের বেশি মানুষ।

হাত ইয়াই শহরে এক দিনে ৩৩৫ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে, যা গত ৩০০ বছরে সর্বোচ্চ। এএফপির প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, হাত ইয়াইয়ের একটি হাসপাতালে মরদেহের সংখ্যায় চাপ বেড়ে যাওয়ায় মর্গে জায়গা না থাকায় কর্মীদের সেগুলো হিমায়িত ট্রাকে স্থানান্তর করতে বাধ্য হতে হয়েছে।

শ্রীলঙ্কায় প্রাণ হারিয়েছেন ১৫৩ জনের বেশি মানুষ। ছবি: এএফপি
শ্রীলঙ্কায় প্রাণ হারিয়েছেন ১৫৩ জনের বেশি মানুষ। ছবি: এএফপি

বিবিসি থাইকে হাত ইয়াইয়ের বাসিন্দা থানিতা খিয়াওহম বলেন, ‘আমরা সাত দিন ধরে পানিতে আটকে ছিলাম, কিন্তু কেউ সাহায্য করতে আসেনি।’

আরও পড়ুন-

থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম ও ইন্দোনেশিয়ায় বন্যা, ভ্রমণের আগে পর্যটকদের যা জানা দরকার

থাইল্যান্ডে বন্যায় মৃত্যু বেড়ে ১৬২, ব্যর্থতা স্বীকার করলেন প্রধানমন্ত্রী

সরকার ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে। পরিবারের কেউ মারা গেলে সেই পরিবারকে সর্বোচ্চ ২০ লাখ বাত (৬২ হাজার ডলার) পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

শ্রীলঙ্কাও সাম্প্রতিক বছরের অন্যতম ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে লড়াই করছে। ঘূর্ণিঝড় ‘ডিতওয়াহ’-এর কারণে দেশটিতে সৃষ্ট ভূমিধস ও বন্যায় অন্তত ১৫৩ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে শনিবার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। আরও ১৯১ জন নিখোঁজ রয়েছেন এবং দেশজুড়ে আড়াই লাখের বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

দেশটির সরকার ইতিমধ্যে জরুরি অবস্থা জারি করেছে।

মালয়েশিয়াতেও কয়েকজনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। ছবি: এএফপি
মালয়েশিয়াতেও কয়েকজনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। ছবি: এএফপি

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কেন্দ্র জানিয়েছে, ১৫ হাজারের বেশি ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়েছে এবং প্রায় ৭৮ হাজার মানুষকে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তারা আরও জানায়, দেশের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ এলাকায় বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে।

পাশের দেশ মালয়েশিয়ায় মৃত্যুর সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম হলেও ক্ষয়ক্ষতি ভয়াবহ। দেশটিতে বন্যায় ব্যাপক বিপর্যয় নেমে এসেছে। দেশের উত্তরাঞ্চলীয় পেরলিস রাজ্যের বেশ কিছু অংশ এখনো পানির নিচে। দুজনের মৃত্যু হয়েছে এবং কয়েক হাজার মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে বাধ্য হয়েছে।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই চরম আবহাওয়ার পেছনে দুটি কারণ থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদেরা। ফিলিপাইনে সৃষ্ট টাইফুন ‘কোটো’ এবং মালাক্কা প্রণালীতে বিরলভাবে তৈরি হওয়া ঘূর্ণিঝড় ‘সেনিয়ার’-এর প্রভাবের কথা বলছেন তাঁরা।

অঞ্চলটির বার্ষিক মৌসুমি বৃষ্টির মৌসুম সাধারণত জুন থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে থাকে এবং এ সময় ভারী বৃষ্টি হয়। আর জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঝড়ের ধরনও বদলে গেছে। পাশাপাশি মৌসুমের তীব্রতা ও স্থায়িত্ব উভয়ই বেড়েছে। এর ফলে আরও ভারী বর্ষণ, হঠাৎ বন্যা এবং শক্তিশালী বাতাসের মতো পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...