হাসান মামুন
ভরা মৌসুমেও এবার দেশে ইলিশ আহরণ কম বলে খবর মিলছে। দামও গেলবারের তুলনায় বেশি। এ অবস্থায় দুর্গাপূজা উপলক্ষে ভারতে ইলিশ রপ্তানি হবে না বলে জানিয়েছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা। এটাকে গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী সরকারের রাজনৈতিক অবস্থান বলেও অনেকে ভাবছিলেন। ভারতে ইলিশ না দেওয়ার পক্ষে এটাও বলা হয়েছিল, এ দেশের হিন্দু সম্প্রদায়ও দুর্গাপূজা পালন করবে। এ অবস্থায় রপ্তানি হলে ‘দামি মাছ’টি আরও দুষ্প্রাপ্য হয়ে উঠবে দেশে। সরকারের এমন অবস্থানের মধ্যেই অবশ্য ভারতের ব্যবসায়ীরা ইলিশ আমদানির আবেদন জানান। শেষে সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানাল, এবারও ৩ হাজার টন ইলিশ ভারতে রপ্তানির অনুমতি তারা দিচ্ছে।
পাঁচ বছর ধরেই পূজার সময়টায় বিশেষত ভারতীয় বাঙালিদের আগ্রহের পরিপ্রেক্ষিতে কিছু ইলিশ ওখানে রপ্তানি হচ্ছে। এটাকে বিগত সরকারের ‘রাজনৈতিক বিবেচনার প্রকাশ’ বলেও মনে করা হচ্ছিল। ভারতও এতে হয়ে পড়ে অভ্যস্ত। তাই ইলিশ না পাঠানোর পক্ষে যখন অবস্থান নেয় নতুন সরকার, তখন বেশ হতাশার সৃষ্টি হয়, বিশেষত পশ্চিমবঙ্গে। এরই মধ্যে কিছু ইলিশ যে চোরাইপথে যাচ্ছিল না, তা নয়। বাংলাদেশে আহরিত ইলিশ মিয়ানমার হয়ে ভারতে চলে যাওয়ার ঘটনাও কম নেই। ইলিশে ইলিশে তফাত করা অবশ্য কঠিন। তবু ‘পদ্মার ইলিশ’ নিয়ে ভারতীয় বাঙালিদের আলাদা আকর্ষণ রয়েছে। একটু বেশি দাম দিয়েও, বিশেষত পূজার সময় সেটা কিনতে তারা প্রস্তুত। তবে ওখানে যেসব নিম্ন আয়ের মানুষ আছে, তারা নিশ্চয়ই ভারতে আহরিত ইলিশ কিনতেও হিমশিম খায়। তাদের সবারই কিছুটা সুবিধা হয় বাংলাদেশ থেকে অন্তত পূজার সময় কিছু ইলিশ গেলে। তাতে উৎসবে দাম আরও বেড়ে যাওয়ার প্রবণতাটা হয়তো কমে। এবারও সেই সুযোগ থেকে তাদের বঞ্চিত হতে হচ্ছে না। ভারতের ইলিশ আমদানিকারকেরাও সরকারের নতুন সিদ্ধান্তে খুশি হবেন। এ ‘সাপ্লাই চেইনে’ অন্তর্ভুক্ত অন্যরাও।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে বাংলাদেশ-ভারতের বাণিজ্যও কিন্তু হঠাৎ ধাক্কা খায়। জুলাই-আগস্টে এটা দুই দিক থেকেই কমে উল্লেখযোগ্যভাবে। প্রতিবেশী এ দুই দেশের বাণিজ্যের সিংহভাগই সম্পন্ন হয় বেনাপোলসহ কয়েকটি স্থলবন্দর দিয়ে। এগুলো স্তিমিত হয়ে পড়ে লোকজনের যাওয়া-আসা কমে যাওয়ায়ও। এর প্রভাব মূলত পড়ে ভারতের পর্যটন, চিকিৎসা ও শপিংয়ে। তবে দুই দেশে বাণিজ্যের যে বাস্তবতা, তাতে ধাক্কা এলেও এটা স্থায়ীভাবে কমে যাওয়ার সুযোগ সীমিত। ভারত থেকে ইতিমধ্যে কিছু মুরগির ডিম এসেছে। এতে বাজারে তেমন প্রভাব না পড়লেও অপেক্ষাকৃত কম দামে ডিম আনার ক্ষেত্রে আমাদের সুবিধাজনক উৎস হলো ভারত। আরও বেশি পরিমাণ ডিম একযোগে আনলে বাজারে হয়তো একটা প্রভাব পড়বে। এদিকে ভারত থেকে কম ব্যয়ে পেঁয়াজ আনার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে সম্প্রতি। এ ক্ষেত্রে ন্যূনতম রপ্তানিমূল্য প্রত্যাহার ও শুল্ক অর্ধেক কমিয়ে দিয়েছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। তাতে পাকিস্তান বা মিসরের বদলে এখন আমরা হয়তো ভারত থেকেই বেশি পেঁয়াজ আনতে চাইব। এতে স্থলবন্দরে কর্মতৎপরতা বাড়বে। ভারত থেকে তুলা, সুতা আর মেশিনারিজ আমদানিও চট করে কমবে না। কাঁচা মরিচের সংকট হলেও দ্রুত ওখান থেকেই আনতে চাই। এখন কিছু ইলিশ রপ্তানি হবে ভারতে। আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়েও যাবে। ওখান দিয়ে আমরা আমদানির বদলে বেশি রপ্তানি করি ভারতে। মাঝে ভয়াবহ বন্যায় এর কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছিল। এখন ইলিশসহ পণ্য রপ্তানি বাড়ানোর প্রয়াস নিতে হবে। রপ্তানি মানেই ডলার উপার্জনের সুযোগ। কেমন দামে আর কতটা ইলিশ রপ্তানি হবে, সেটাও দেখার বিষয়। দেশে ইলিশের দাম এবার আরও বেশি বলে ভারত বেশি আমদানিতে উৎসাহী নাও হতে পারে। এই নিবন্ধ লেখার সময় পর্যন্ত জানা নেই, বাংলাদেশ ন্যূনতম রপ্তানি মূল্য বেঁধে দিচ্ছে কি না। সেটি করা হলে তাতেও ভারতে কম ইলিশ যাবে।
দেশে ইলিশের দাম বাড়তে বাড়তে এমন এক জায়গায় পৌঁছেছে যে, এটা মধ্যবিত্তের জন্যও হয়ে উঠেছে শখ করে খাওয়ার বস্তু। এ অবস্থায় একবারে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ইলিশ রপ্তানির সুযোগ দেওয়া হলে বাজারে কিছুটা হলেও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। ‘৩ হাজার টন ইলিশ রপ্তানি’র খবরেই দাম আরও কিছুটা বেড়ে যাওয়ার কথা। তবে অনুমোদিত পরিমাণ ইলিশ রপ্তানি হতে সাধারণত দেখা যায় না। বাস্তবে রপ্তানি হয়ে থাকে এর অর্ধেক কিংবা আরও কম। এর একটা কারণ হয়তো এরই মধ্যে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ইলিশ পাচার হয়ে যাওয়া। পাচারের জন্য প্রস্তুত ইলিশের একাধিক বড় চালান আটকের খবর রয়েছে মিডিয়ায়। প্রতিবারই এসব খবর থাকে। রপ্তানির অনুমতি না দিলে এই সময়ে ইলিশ পাচার আরও বাড়বে, এই বাস্তবতাও হয়তো বিবেচনায় নেওয়া হয়। পাচার হলে তো রাজস্বও মেলে না। তার চেয়ে রপ্তানি ভালো। চলমান সংকটে এতে কিছু ডলারও এসে যুক্ত হবে। সহৃদয়তাও দেখানো গেল প্রতিবেশী দেশের জনগণের প্রতি, যারা আমাদের এই ‘জিআই’ পণ্যের ব্যাপারে বিশেষভাবে আগ্রহী। দুর্গাপূজায় এবার আর ইলিশ দেওয়া হবে না বলে বক্তব্য প্রচারের পর অন্তর্বর্তী সরকারের সমর্থক বলে পরিচিত অনেকেও এ উপলক্ষে কিছু ইলিশ রপ্তানির পক্ষে ফেসবুকে মত দিয়েছিলেন। সরকার হয়তো এটিও বিবেচনায় নিয়েছে।
এটাও ঠিক, ভারতে রপ্তানি না হলেও ইলিশের দাম কমত না। তেমন কোনো প্রবণতাই নেই বাজারে। দেশের বিরাট জনগোষ্ঠী ইলিশের ব্যাপারে আগ্রহ হারিয়েও বসে আছে। তারা হয়তো এর দাম জানতেও আর আগ্রহী নয়। বরং জানতে চায়—খামারে উৎপাদিত রুই, কই, পাঙাশ, তেলাপিয়া প্রভৃতির দাম কেমন। কিছু ছোট মাছও চাষ হচ্ছে। বাজারে মেলে কিছু সামুদ্রিক মাছও। কিছু আসে ভারত ও মিয়ানমার থেকে। ঘুরেফিরে এগুলোই দেশের সিংহভাগ মানুষের মৎস্য আমিষের উৎস। তারা হয়তো ভারতে ইলিশ রপ্তানির পরিবর্তিত সিদ্ধান্তে বড়জোর কিছু ‘রাজনৈতিক তাৎপর্য’ খুঁজে পাবে। এরা তো জানে, ভারতে ইলিশ না গেলেও এটা কিনতে পারত না। সুদীর্ঘ সময় ধরে ইলিশ কিন্তু সাধারণভাবে রপ্তানি হচ্ছে না। দেশের চাহিদা মিটিয়ে তবেই রপ্তানি—এ নীতিই চলে আসছে। ইলিশের উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টাও কম চলছে না। তাতে এর আহরণ বাড়তে বাড়তে দ্বিগুণ হয়ে উঠেছে বলেও দাবি করা হচ্ছে। এর পাশাপাশি অব্যাহতভাবে বেড়ে চলেছে ইলিশের দাম। প্রশ্ন উঠতে পারে, তবে কি এর চাহিদা বেড়ে চলেছে অধিকতর হারে? জেলেদের মজুরি, জ্বালানি ব্যয়, বরফের দাম ইত্যাদি বাবদ ইলিশ আহরণ ব্যয় দ্রুত বেড়ে যাওয়ার যুক্তি অনেকে দিয়ে থাকেন। পণ্যটির বিপণনে হাতবদল বেশি; উচ্চবিত্তরা একবারে অনেক মাছ কিনে ফ্রিজে মজুত করেন—এসব যুক্তিও জোগানো হয়। এর মধ্যে এই প্রশ্নও তীব্র হয়ে ওঠে যে, ইলিশ আহরণসংক্রান্ত তথ্যটি অতিরঞ্জিত নয় তো?
একটা সময় ছিল, যখন ইলিশ মৌসুমে এর সরবরাহের চাপে অন্যান্য মাছের দামও যেত কমে। ইলিশ একটা বিশেষ ধরনের পণ্য হয়ে ওঠায় বাজারে এর সেই প্রভাবও আর নেই। এই মুহূর্তে অন্যান্য মাছের চড়া দাম নিয়েও কিন্তু চলছে আলোচনা। মাঝে গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএসের মহাপরিচালক বিবিএস পরিবেশিত মূল্যস্ফীতির তথ্যের সঙ্গে দ্বিমত জানিয়ে বলেছিলেন, বাস্তবে এর হার আরও বেশি। এ জন্য তিনি মাছের মূল্যবৃদ্ধিকে বিশেষভাবে দায়ী করেছিলেন। গত জুলাইয়ে মূল্যস্ফীতি কিন্তু লাফিয়ে বেড়েছিল। এর প্রধান কারণ অবশ্য ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পণ্যের সাপ্লাই চেইন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া। তখন সবজি, ডিম, এমনকি চালের সঙ্গে মাছের দামও বেড়েছিল। আগস্টে অবশ্য মূল্যস্ফীতি কমে আসার প্রবণতা রয়েছে। কিন্তু ইলিশের কোনো প্রভাব এতে আছে বলা যাবে না। ইলিশের দাম তো এই সময়ে বেড়েছে আরও। ভারতে রপ্তানি হবে বলে খবরে এর দাম আরও বাড়বে বলেই শঙ্কা। এমন খবরে দেশীয় ক্রেতাদের মধ্যে আরও বেশি করে ইলিশ কিনে রাখার প্রবণতা বাড়ার কারণেও এর দাম হয়তো আরও বাড়বে।
ডিমওয়ালা ইলিশ ধরা বন্ধের সময়টাও এসে যাচ্ছে সামনেই। এরপর জাটকা ধরা বন্ধের সময় আসবে। এসব তো আমরা করে যাচ্ছি অনেক দিন ধরেই। তাতেও সিংহভাগ মানুষের কাছে ইলিশ আরও দুষ্প্রাপ্য হয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়াটি ঠেকানো যাচ্ছে না। এর রপ্তানি মূল্যও কিন্তু বাড়ছে। নিজেরা সহনীয় দামে খেয়ে ইলিশের একাংশ রপ্তানি করতে পারলে তো মন্দ ছিল না। এটাই হতো আদর্শ পরিস্থিতি। সেটা নেই বলে ইলিশ রপ্তানির খবর শুনলে আরও বেশি মন খারাপ করে মানুষ। সঙ্গে বাড়ে নেতিবাচক আলোচনা।
লেখক: হাসান মামুন
সাংবাদিক, বিশ্লেষক
ভরা মৌসুমেও এবার দেশে ইলিশ আহরণ কম বলে খবর মিলছে। দামও গেলবারের তুলনায় বেশি। এ অবস্থায় দুর্গাপূজা উপলক্ষে ভারতে ইলিশ রপ্তানি হবে না বলে জানিয়েছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা। এটাকে গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী সরকারের রাজনৈতিক অবস্থান বলেও অনেকে ভাবছিলেন। ভারতে ইলিশ না দেওয়ার পক্ষে এটাও বলা হয়েছিল, এ দেশের হিন্দু সম্প্রদায়ও দুর্গাপূজা পালন করবে। এ অবস্থায় রপ্তানি হলে ‘দামি মাছ’টি আরও দুষ্প্রাপ্য হয়ে উঠবে দেশে। সরকারের এমন অবস্থানের মধ্যেই অবশ্য ভারতের ব্যবসায়ীরা ইলিশ আমদানির আবেদন জানান। শেষে সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানাল, এবারও ৩ হাজার টন ইলিশ ভারতে রপ্তানির অনুমতি তারা দিচ্ছে।
পাঁচ বছর ধরেই পূজার সময়টায় বিশেষত ভারতীয় বাঙালিদের আগ্রহের পরিপ্রেক্ষিতে কিছু ইলিশ ওখানে রপ্তানি হচ্ছে। এটাকে বিগত সরকারের ‘রাজনৈতিক বিবেচনার প্রকাশ’ বলেও মনে করা হচ্ছিল। ভারতও এতে হয়ে পড়ে অভ্যস্ত। তাই ইলিশ না পাঠানোর পক্ষে যখন অবস্থান নেয় নতুন সরকার, তখন বেশ হতাশার সৃষ্টি হয়, বিশেষত পশ্চিমবঙ্গে। এরই মধ্যে কিছু ইলিশ যে চোরাইপথে যাচ্ছিল না, তা নয়। বাংলাদেশে আহরিত ইলিশ মিয়ানমার হয়ে ভারতে চলে যাওয়ার ঘটনাও কম নেই। ইলিশে ইলিশে তফাত করা অবশ্য কঠিন। তবু ‘পদ্মার ইলিশ’ নিয়ে ভারতীয় বাঙালিদের আলাদা আকর্ষণ রয়েছে। একটু বেশি দাম দিয়েও, বিশেষত পূজার সময় সেটা কিনতে তারা প্রস্তুত। তবে ওখানে যেসব নিম্ন আয়ের মানুষ আছে, তারা নিশ্চয়ই ভারতে আহরিত ইলিশ কিনতেও হিমশিম খায়। তাদের সবারই কিছুটা সুবিধা হয় বাংলাদেশ থেকে অন্তত পূজার সময় কিছু ইলিশ গেলে। তাতে উৎসবে দাম আরও বেড়ে যাওয়ার প্রবণতাটা হয়তো কমে। এবারও সেই সুযোগ থেকে তাদের বঞ্চিত হতে হচ্ছে না। ভারতের ইলিশ আমদানিকারকেরাও সরকারের নতুন সিদ্ধান্তে খুশি হবেন। এ ‘সাপ্লাই চেইনে’ অন্তর্ভুক্ত অন্যরাও।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে বাংলাদেশ-ভারতের বাণিজ্যও কিন্তু হঠাৎ ধাক্কা খায়। জুলাই-আগস্টে এটা দুই দিক থেকেই কমে উল্লেখযোগ্যভাবে। প্রতিবেশী এ দুই দেশের বাণিজ্যের সিংহভাগই সম্পন্ন হয় বেনাপোলসহ কয়েকটি স্থলবন্দর দিয়ে। এগুলো স্তিমিত হয়ে পড়ে লোকজনের যাওয়া-আসা কমে যাওয়ায়ও। এর প্রভাব মূলত পড়ে ভারতের পর্যটন, চিকিৎসা ও শপিংয়ে। তবে দুই দেশে বাণিজ্যের যে বাস্তবতা, তাতে ধাক্কা এলেও এটা স্থায়ীভাবে কমে যাওয়ার সুযোগ সীমিত। ভারত থেকে ইতিমধ্যে কিছু মুরগির ডিম এসেছে। এতে বাজারে তেমন প্রভাব না পড়লেও অপেক্ষাকৃত কম দামে ডিম আনার ক্ষেত্রে আমাদের সুবিধাজনক উৎস হলো ভারত। আরও বেশি পরিমাণ ডিম একযোগে আনলে বাজারে হয়তো একটা প্রভাব পড়বে। এদিকে ভারত থেকে কম ব্যয়ে পেঁয়াজ আনার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে সম্প্রতি। এ ক্ষেত্রে ন্যূনতম রপ্তানিমূল্য প্রত্যাহার ও শুল্ক অর্ধেক কমিয়ে দিয়েছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। তাতে পাকিস্তান বা মিসরের বদলে এখন আমরা হয়তো ভারত থেকেই বেশি পেঁয়াজ আনতে চাইব। এতে স্থলবন্দরে কর্মতৎপরতা বাড়বে। ভারত থেকে তুলা, সুতা আর মেশিনারিজ আমদানিও চট করে কমবে না। কাঁচা মরিচের সংকট হলেও দ্রুত ওখান থেকেই আনতে চাই। এখন কিছু ইলিশ রপ্তানি হবে ভারতে। আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়েও যাবে। ওখান দিয়ে আমরা আমদানির বদলে বেশি রপ্তানি করি ভারতে। মাঝে ভয়াবহ বন্যায় এর কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছিল। এখন ইলিশসহ পণ্য রপ্তানি বাড়ানোর প্রয়াস নিতে হবে। রপ্তানি মানেই ডলার উপার্জনের সুযোগ। কেমন দামে আর কতটা ইলিশ রপ্তানি হবে, সেটাও দেখার বিষয়। দেশে ইলিশের দাম এবার আরও বেশি বলে ভারত বেশি আমদানিতে উৎসাহী নাও হতে পারে। এই নিবন্ধ লেখার সময় পর্যন্ত জানা নেই, বাংলাদেশ ন্যূনতম রপ্তানি মূল্য বেঁধে দিচ্ছে কি না। সেটি করা হলে তাতেও ভারতে কম ইলিশ যাবে।
দেশে ইলিশের দাম বাড়তে বাড়তে এমন এক জায়গায় পৌঁছেছে যে, এটা মধ্যবিত্তের জন্যও হয়ে উঠেছে শখ করে খাওয়ার বস্তু। এ অবস্থায় একবারে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ইলিশ রপ্তানির সুযোগ দেওয়া হলে বাজারে কিছুটা হলেও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। ‘৩ হাজার টন ইলিশ রপ্তানি’র খবরেই দাম আরও কিছুটা বেড়ে যাওয়ার কথা। তবে অনুমোদিত পরিমাণ ইলিশ রপ্তানি হতে সাধারণত দেখা যায় না। বাস্তবে রপ্তানি হয়ে থাকে এর অর্ধেক কিংবা আরও কম। এর একটা কারণ হয়তো এরই মধ্যে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ইলিশ পাচার হয়ে যাওয়া। পাচারের জন্য প্রস্তুত ইলিশের একাধিক বড় চালান আটকের খবর রয়েছে মিডিয়ায়। প্রতিবারই এসব খবর থাকে। রপ্তানির অনুমতি না দিলে এই সময়ে ইলিশ পাচার আরও বাড়বে, এই বাস্তবতাও হয়তো বিবেচনায় নেওয়া হয়। পাচার হলে তো রাজস্বও মেলে না। তার চেয়ে রপ্তানি ভালো। চলমান সংকটে এতে কিছু ডলারও এসে যুক্ত হবে। সহৃদয়তাও দেখানো গেল প্রতিবেশী দেশের জনগণের প্রতি, যারা আমাদের এই ‘জিআই’ পণ্যের ব্যাপারে বিশেষভাবে আগ্রহী। দুর্গাপূজায় এবার আর ইলিশ দেওয়া হবে না বলে বক্তব্য প্রচারের পর অন্তর্বর্তী সরকারের সমর্থক বলে পরিচিত অনেকেও এ উপলক্ষে কিছু ইলিশ রপ্তানির পক্ষে ফেসবুকে মত দিয়েছিলেন। সরকার হয়তো এটিও বিবেচনায় নিয়েছে।
এটাও ঠিক, ভারতে রপ্তানি না হলেও ইলিশের দাম কমত না। তেমন কোনো প্রবণতাই নেই বাজারে। দেশের বিরাট জনগোষ্ঠী ইলিশের ব্যাপারে আগ্রহ হারিয়েও বসে আছে। তারা হয়তো এর দাম জানতেও আর আগ্রহী নয়। বরং জানতে চায়—খামারে উৎপাদিত রুই, কই, পাঙাশ, তেলাপিয়া প্রভৃতির দাম কেমন। কিছু ছোট মাছও চাষ হচ্ছে। বাজারে মেলে কিছু সামুদ্রিক মাছও। কিছু আসে ভারত ও মিয়ানমার থেকে। ঘুরেফিরে এগুলোই দেশের সিংহভাগ মানুষের মৎস্য আমিষের উৎস। তারা হয়তো ভারতে ইলিশ রপ্তানির পরিবর্তিত সিদ্ধান্তে বড়জোর কিছু ‘রাজনৈতিক তাৎপর্য’ খুঁজে পাবে। এরা তো জানে, ভারতে ইলিশ না গেলেও এটা কিনতে পারত না। সুদীর্ঘ সময় ধরে ইলিশ কিন্তু সাধারণভাবে রপ্তানি হচ্ছে না। দেশের চাহিদা মিটিয়ে তবেই রপ্তানি—এ নীতিই চলে আসছে। ইলিশের উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টাও কম চলছে না। তাতে এর আহরণ বাড়তে বাড়তে দ্বিগুণ হয়ে উঠেছে বলেও দাবি করা হচ্ছে। এর পাশাপাশি অব্যাহতভাবে বেড়ে চলেছে ইলিশের দাম। প্রশ্ন উঠতে পারে, তবে কি এর চাহিদা বেড়ে চলেছে অধিকতর হারে? জেলেদের মজুরি, জ্বালানি ব্যয়, বরফের দাম ইত্যাদি বাবদ ইলিশ আহরণ ব্যয় দ্রুত বেড়ে যাওয়ার যুক্তি অনেকে দিয়ে থাকেন। পণ্যটির বিপণনে হাতবদল বেশি; উচ্চবিত্তরা একবারে অনেক মাছ কিনে ফ্রিজে মজুত করেন—এসব যুক্তিও জোগানো হয়। এর মধ্যে এই প্রশ্নও তীব্র হয়ে ওঠে যে, ইলিশ আহরণসংক্রান্ত তথ্যটি অতিরঞ্জিত নয় তো?
একটা সময় ছিল, যখন ইলিশ মৌসুমে এর সরবরাহের চাপে অন্যান্য মাছের দামও যেত কমে। ইলিশ একটা বিশেষ ধরনের পণ্য হয়ে ওঠায় বাজারে এর সেই প্রভাবও আর নেই। এই মুহূর্তে অন্যান্য মাছের চড়া দাম নিয়েও কিন্তু চলছে আলোচনা। মাঝে গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএসের মহাপরিচালক বিবিএস পরিবেশিত মূল্যস্ফীতির তথ্যের সঙ্গে দ্বিমত জানিয়ে বলেছিলেন, বাস্তবে এর হার আরও বেশি। এ জন্য তিনি মাছের মূল্যবৃদ্ধিকে বিশেষভাবে দায়ী করেছিলেন। গত জুলাইয়ে মূল্যস্ফীতি কিন্তু লাফিয়ে বেড়েছিল। এর প্রধান কারণ অবশ্য ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পণ্যের সাপ্লাই চেইন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া। তখন সবজি, ডিম, এমনকি চালের সঙ্গে মাছের দামও বেড়েছিল। আগস্টে অবশ্য মূল্যস্ফীতি কমে আসার প্রবণতা রয়েছে। কিন্তু ইলিশের কোনো প্রভাব এতে আছে বলা যাবে না। ইলিশের দাম তো এই সময়ে বেড়েছে আরও। ভারতে রপ্তানি হবে বলে খবরে এর দাম আরও বাড়বে বলেই শঙ্কা। এমন খবরে দেশীয় ক্রেতাদের মধ্যে আরও বেশি করে ইলিশ কিনে রাখার প্রবণতা বাড়ার কারণেও এর দাম হয়তো আরও বাড়বে।
ডিমওয়ালা ইলিশ ধরা বন্ধের সময়টাও এসে যাচ্ছে সামনেই। এরপর জাটকা ধরা বন্ধের সময় আসবে। এসব তো আমরা করে যাচ্ছি অনেক দিন ধরেই। তাতেও সিংহভাগ মানুষের কাছে ইলিশ আরও দুষ্প্রাপ্য হয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়াটি ঠেকানো যাচ্ছে না। এর রপ্তানি মূল্যও কিন্তু বাড়ছে। নিজেরা সহনীয় দামে খেয়ে ইলিশের একাংশ রপ্তানি করতে পারলে তো মন্দ ছিল না। এটাই হতো আদর্শ পরিস্থিতি। সেটা নেই বলে ইলিশ রপ্তানির খবর শুনলে আরও বেশি মন খারাপ করে মানুষ। সঙ্গে বাড়ে নেতিবাচক আলোচনা।
লেখক: হাসান মামুন
সাংবাদিক, বিশ্লেষক
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
৬ দিন আগেপাকিস্তানে ভারতের হামলার সমালোচনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। চীনও এই হামলাকে ‘দুঃখজনক’ বলে অভিহিত করেছে। উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘও। উত্তেজনা যেন আরও না বাড়ে, সে জন্য দুই পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশ। এদিকে ভারতের অবস্থানকে সমর্থন করেছে...
৬ দিন আগেভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলা নিয়ে দুই চিরবৈরী প্রতিবেশীর মধ্যে উত্তেজনার পারদ ক্রমেই চড়ছিল। তা তুঙ্গে উঠল এবার পাকিস্তানের ভূখণ্ডে ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামের ক্ষেপণাস্ত্র ও বিমান হামলা দিয়ে। পাশাপাশি সীমান্তেও দুই দেশের সামরিক বাহিনীর মধ্যে ব্যাপক গোলাগুলি হয়েছে...
৬ দিন আগেঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা এলাকায় যাত্রীবাহী বাসে ডাকাতি বেড়েই চলছে। এ কারণে চালক ও যাত্রীদের কাছে আতঙ্কের নাম হয়ে উঠছে এই সড়ক। ডাকাতির শিকার বেশি হচ্ছেন প্রবাসফেরত লোকজন। ডাকাতেরা অস্ত্র ঠেকিয়ে লুট করে নিচ্ছে সর্বস্ব। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়েও ঘটছে ডাকাতির ঘটনা।
০২ মার্চ ২০২৫