Ajker Patrika

সেন্সর খাঁচায় আটকে থাকা একটি ‘শনিবার বিকেল’

মোস্তফা মনন
সেন্সর খাঁচায় আটকে থাকা একটি ‘শনিবার বিকেল’

‘এ খাঁচা ভাঙব আমি কেমন করে’—সত্তরের দশকে জহির রায়হানের ‘জীবন থেকে নেয়া’ চলচ্চিত্রে খান আতার গানটি এখনো প্রাসঙ্গিক মনে হয়। বিশেষ করে, চলচ্চিত্রের সেন্সর নামক খাঁচায় ফিল্ম ইন্ড্রাস্ট্রি আটকে আছে। বিভিন্ন সেক্টরে দেশ অনেক এগিয়ে গেলেও শিল্প-সংস্কৃতিতে আরও উন্নতি করার সুযোগ ছিল।

আমরা মনে করি, এই সেক্টরে সরকার যথেষ্ট ভূমিকা রাখতে পারে। গত এক দশকে সিনেমার বিশ্ববাজারের দিকে তাকালে দেখতে পাব, দক্ষিণ কোরিয়া, দক্ষিণ ভারত এবং তুরস্কের ফিল্ম/টিভি ইন্ডাষ্ট্রি বাণিজ্যিকভাবে বেশ সফল। যথাযথ পদক্ষেপ নিলে আমরাও বাণিজ্যিকভাবে সফল হতে পারব। বিশেষ করে, সময়োপযোগী সেন্সরবোর্ডের নীতিমালা না হলে ধ্বংস হওয়া চলচ্চিত্র ইন্ডাষ্ট্রি আর উঠে দাঁড়াতে পারবে না।

এই সেন্সর নীতিমালা জটিলতায় আটকে আছে মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ‘শনিবার বিকেল’। প্রায় তিন বছর ধরে সেন্সর ছাড়পত্র পাচ্ছে না। বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ চলচ্চিত্র উৎসবগুলোতে মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর প্রায় সব সিনেমাই দেখানো হয়েছে। বিশেষ করে ২০১৯ সালে ‘শনিবার বিকেল’ মস্কো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের ৪১তম আসরে দুটি পুরস্কার পেয়েছে। এছাড়া স্থান পেয়েছে বুসান ও সিডনি উৎসবের অফিসিয়াল সিলেকশনে।

দেশীয় নির্মাতাদের মধ্যে যাঁরা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে খ্যাতি অর্জন করেছেন, তাঁদের অন্যতম মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবগুলোতে তাঁর নির্মিত সিনেমাকে বিশেষ গুরুত্বের সাথে দেখে। ‘শনিবার বিকেল’ সিনেমার একটি বিশেষ দিক হলো সিঙ্গেলশট ফিল্ম (পুরো সিনেমা এক শটে নির্মিত), যা বাংলা সিনেমায় প্রথম। বাংলাদেশের জন্য খ্যাতি বয়ে আনা এমন একজন পরিচালকের সিনেমা সেন্সর বোর্ডের ছাড়পত্র পাচ্ছে না, এই সংবাদ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে এলে আমাদের লজ্জিত হতে হবে।

প্রশ্ন হলো, কেন সেন্সর ছাড়পত্র পাচ্ছে না? নির্মাতার বিভিন্ন সময়ের কথোপকথন থেকে জানা যায়, তাঁর কাছে বিষয়টি পরিস্কার না। তাহলে কি সেন্সরবোর্ড বিষয়টি পরিস্কার করতে পারছে না নাকি সেন্সরবোর্ডের কথার সাথে নির্মাতা একমত নন? তবে অন্যান্য সংবাদ মাধ্যমে জানা যায়, সেন্সরবোর্ড কী কারণে আটকে রেখেছে বা ছাড়পত্র দিচ্ছে না, এই বিষয় তারা এড়িয়ে যাচ্ছে। আবারও প্রশ্ন করা যায়, কেন?

আমার ধারণা, বিষয়টি রাজনৈতিক। এই রাজনৈতিক কারনে ‘শনিবার বিকেল’ সেন্সর ছাড়পত্র পাচ্ছে না। এখন খতিয়ে দেখার বিষয় হলো, শনিবার বিকেলে রাজনীতির কী আছে? আদৌ আছে কি না? আমি মনে করি, রাজনীতি হলো সময়ের। সরকার মনে করে, কোন সময়ে কী ধরণের সিনেমা মুক্তি পাওয়া দরকার বা কী ধরণের সিনেমা মুক্তি পেলে তাদের পরিকল্পনায় ব্যঘাত ঘটবে না, এই সব হিসাব-নিকাশ করে সিনেমা মুক্তি দেয়—যা মুক্তচিন্তার পরিপন্থি। একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র এই কাজটা করতে পারে না। এর উদাহরণ আমাদের পাশের দেশ ভারত, আরেকটু দূরে দক্ষিণ কোরিয়া। তারা তাদের সিনেমায় নিজেদের মতো করে গল্প বলতে পারে। এজন্য তাদের সিনেমা আমাদের কাছে পাঠ্য, আর আমাদের সিনেমা ক্রমশ ধ্বংসের পথে। তাদের দৃষ্টিতে আমাদের দেশের বেশিরভাগ মানুষ রোগ-শোকে আর বন্যার পানিতে সব সময় হাবুডুবু খাই। দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে বেশ কয়েকজন নির্মাতা চেষ্টা করে যাচ্ছেন, তার ধারাবাহিকতা অব্যহত থাকা প্রয়োজন।

যে কোনো সত্যি ঘটনা থেকে সিনেমার প্লট হতে পারে, এতে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয় না, বরং উজ্জল হয়। বিশ্ববাসী দেখতে পায়, সে দেশে কথা বলার স্বাধীনতা, শিল্পের স্বাধীনতা রয়েছে। তাছাড়া গল্পের দৃষ্টিকোণ থেকে ভাবলেও প্রতিটি ঘটে যাওয়া ঘটনায় কিছু ইউনিক দিক থাকে। অন্য দেশ আমাদের ইউনিক দিকগুলো নিয়ে সিনেমা দেখতে চায়, তারা আমাদের গল্প দেখতে চায়, এই অঞ্চলের কালচারের সাথে পরিচিত হতে চায়, তারা কখনোই আমাদের সিনেমায় তাদের গল্প দেখতে চাইবে না। সিনেমার রাজনীতিটা এখানেই।

যদিও বেশিরভাগ মানুষ মনে করে, সিনেমা বিনোদনের জন্য, এখানে রাজনীতি এল কোথা থেকে? আসলে জীবন-যাপনের কোনো অংশ, কোনো মুহূর্ত রাজনীতির বাইরে না। জীবন যাপনে, সমাজ ব্যবস্থায় রাজনৈতিক অর্থনৈতিক সিদ্ধান্তের একটা ক্ষুদ্র অংশ হলো বিনোদন। একজন নাগরিক কতটুকু বিনোদন পাবে, কী কী উপায়ে পাবে, কোন কোন মাধ্যমে পাবে, তা রাষ্ট্র ঠিক করে দেয়। কীভাবে দেয়?

ফ্রাংকফুর্ট স্কুলের দুই তাত্ত্বিক থিয়োডর এডর্নো এবং তাঁর সহকর্মী ম্যাক্স হর্কহেইমার ১৯৭৩ সালে ‘কালচারাল ইন্ডাস্ট্রি-এর ধারণা দেন। একে পুঁজিবাদ পরিচালিত বিনোদন কারখানা বলে অভিহিত করেন এবং এর আলোকে স্ট্যান্ডার্ডাইজেশন বা মানপ্রমিতকরণ তত্ত্বের ব্যাখ্যা দেন। (বিশেষ করে সিনেমা এবং সংগীতের ক্ষেত্রে)। কিন্তু এই কালচালার ইন্ড্রাস্ট্রি থেকে যা উৎপন্ন হচ্ছে, তা নিছকই জঞ্জাল বা  অর্থহীন ভাষা। (এডর্নো ও হর্কহেইমার, ১৯৭৩:১২১) 

তাঁরা বলেন, সংস্কৃতি কারখানা থেকে যা উৎপন্ন করে, ভোক্তারা তা গ্রহণ করতে বাধ্য হয়। এগুলো আবার সাধারণ মানুষকে দমন করতে ও সামাজিক এবং রাজনৈতিকভাবে নিস্ক্রিয় করে রাখতেও ব্যবহৃত হয়। এই সংস্কৃতি কারখানা হলো অসীম ক্ষমতা অধিকারী। এর ভোক্তারা হলেন কর্মজীবী, চাকুরীজীবী, কৃষক, নিম্নমধ্যবিত্ত শেণি। এই পুঁজিবাদী উৎপাদিত বস্তু তাঁদেরকে আত্মিকভাবে অবরোধ করে। তখন তাঁরা কেবল অসহায় ভোক্তাতে পরিণত হন। (এডর্নে ও হর্কহেইমার, ১৯৭৩:১৩৩)।

নিজের বই ‘আগুনকাল’ হাতে লেখক মোস্তফা মননপুজিঁবাদী গোষ্ঠী বিনোদনের নামে বিরাজমান সমাজকে স্বাভাবিক বলে চালায়। পুনরুৎপাদন ও পুনরাবৃত্তির কারণে সেগুলোকেই মানুষ স্বাভাবিক বলে মনে করে। একই পণ্যকে নানা স্তরের লোকের জন্য সামান্য পরিবর্তন করে উৎপন্ন করে, যা একটি মিথ্যা চৈতন্য সৃষ্টি করে তুষ্টি সঞ্চার করে এবং শাসক শ্রেণির সঙ্গে সহমত স্থাপন করে। এই ক্ষমতাশীল পুঁজিবাদ জনপ্রিয় ন্যারেটিভ ও মেলোড্রামা তৈরি করে, যার মধ্য দিয়ে সামাজিক দ্বন্দ্বের সমাধান দেওয়া হয়। এই বিষয়টিকে  থিয়োডর এডর্নো এবং ম্যাক্স হর্কহেইমার নাম দিয়েছেন মানপ্রমিতকরণ (স্ট্যান্ডার্ডাইজেশন)। তাঁদের মতে, সংস্কৃতি কারখানা অন্য সব কারখানা যেমন: স্টিল, পেট্রোলিয়াম, বিদ্যুৎ বা রাসায়নিক কারখানা থেকে অধিক ক্ষমতাশীল (এডর্নে ও হর্কহেইমার, ১৯৭৩:১২২)। 

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেখা যায়, কোন কোন পেশার মানুষ, কী কী বিষয় নিয়ে কথা বলতে পারবে, কতটুকু বলতে পারবে তা বিভিন্ন আইন দ্বারা সীমিত করা। কার্টুন হবে কি হবে না, চিত্রশিল্পীর চিত্রের বিষয় কী হবে, গায়কের গানে ফুল-লতা-পাতা-ভালোবাসা ছাড়া অন্য কোনো শব্দ থাকবে কি না, সিনেমার গল্প কেমন হবে, কবিতা কেমন হবে, তা রাষ্ট্র পরোক্ষভাবে ঠিক করে দেয়। সংস্কৃতিচর্চার একটি অনন্য মাধ্যম হলো সিনেমা। গত একশ বছরে এই মাধ্যম যত প্রভাব বিস্তার করেছে, আর কোনো মাধ্যম এত প্রভাবশালী ছিল না। সে হিসেবে বাংলাদেশে মৃতপ্রায় সিনেমা ইন্ড্রাষ্ট্রি সচলে যাঁরা মূখ্য ভূমিকা রাখবেন, তাঁদেরকে নানাভাবে বাধাগ্রস্ত করছে কোনো কোনো মহল বা গোষ্ঠী বা সংগঠন বা প্রতিষ্ঠান। তেমনি একটা প্রতিষ্ঠান বা ব্যবস্থাপনা হলো সেন্সরশীপ।

সারা দুনিয়ায় উন্নত সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিতে গ্রেডেশন পদ্ধতি চালু আছে, সেখানে বাংলাদেশে রয়েছে সেই পুরোনো আইন। বলা হয়ে থাকে সংস্কৃতিবান্ধব সরকার। গত চৌদ্দ বছরে এই সরকার সিনেমার সেন্সরশীপ পদ্ধতি বদলে কোনো ভূমিকা রাখলো না, তাহলে আমরা কার কাছে প্রত্যাশা করব?

দেশীয় চলচ্চিত্র উন্নত হওয়ার স্বার্থে আমরা অনতিবিলম্বে ‘শনিবার বিকেল’-এর সেন্সর ছাড়পত্রের দাবি জানাচ্ছি। তা না হলে একদিন ‘এ খাঁচা’ আমরাই ভেঙ্গে দেব।

লেখক: মোস্তফা মনন, চিত্রনাট্যকার ও নির্মাতা

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

তানজিন তিশার বিরুদ্ধে প্রতারণা ও প্রাণনাশের হুমকির অভিযোগ

বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকা
তানজিন তিশা। ছবি: সংগৃহীত
তানজিন তিশা। ছবি: সংগৃহীত

একদিকে প্রথম সিনেমার শুটিং, অন্যদিকে একের পর এক প্রতারণার অভিযোগ—সব মিলিয়ে আলোচনা-সমালোচনার কেন্দ্রে অভিনেত্রী তানজিন তিশা। তাঁর বিরুদ্ধে একটি অনলাইন ফ্যাশন হাউস থেকে শাড়ি নিয়ে প্রচার না করার অভিযোগ ওঠে গত মাসে। তবে অভিনেত্রীর দাবি, সেই শাড়ি উপহার হিসেবে পেয়েছেন তিনি। এ মাসের শুরুতে তিশার নামে মামলা করেছে ওই অনলাইনভিত্তিক ফ্যাশন হাউস অ্যাপোনিয়া। এবার শাড়ি নিয়ে ফেরত না দেওয়ার পাশাপাশি প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ার নতুন অভিযোগ উঠল তিশার বিরুদ্ধে।

আজ রাজধানীর গুলশান থানায় প্রতারণা ও প্রাণনাশের হুমকির অভিযোগে তিশার বিরুদ্ধে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন সানায়া কুটিয়র ফ্যাশন হাউসের কর্ণধার ও ফ্যাশন ডিজাইনার আয়েশাহ আনুম ফায়যাহ সানায়া চৌধুরী। জিডিতে এই উদ্যোক্তা উল্লেখ করেন, ২০২৪ সালের ১৩ ডিসেম্বর তাঁর কাছ থেকে ৭৫ হাজার টাকা দামের একটি শাড়ি অনুষ্ঠানে পরার জন্য নেন তানজিন তিশা। শাড়িটি পরা শেষে পরের দিন ফেরত দেওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত তিনি শাড়িটি ফেরত দেননি। ১৫ ডিসেম্বর তিশার ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে শাড়িটি ফেরত চাইলে ১৭ ডিসেম্বর তাঁকে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজসহ প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেন তিশা। এমনকি ডিবির মাধ্যমে হেনস্তা করবেন বলেও হুমকি দেন। এরপর এ বছরের ১৩ মার্চ এবং ১৮ মে এই উদ্যোক্তাকে তিশা জানান, তিনি শাড়ি ফেরত দেবেন না। সম্প্রতি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে তিশার বিরুদ্ধে একটি শাড়িবিষয়ক মামলার কথা জেনে ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে আবারও শাড়িটি ফেরত দেওয়ার অনুরোধ করেন এই উদ্যোক্তা। কিন্তু তিশা এবারও মামলার হুমকিসহ সম্মানহানি ও সমাজে হেয় করে ভাইরাল করার হুমকি দেন বলে জিডিতে উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া তিশার সঙ্গে কথোপকথনের রেকর্ড ও মেসেঞ্জারের স্ক্রিনশট তুলে রাখা আছে বলে জানিয়েছেন উদ্যোক্তা সানায়া।

তানজিন তিশা। ছবি: সংগৃহীত
তানজিন তিশা। ছবি: সংগৃহীত

সানায়া বলেন, ‘তিশা আগেও আমার কাছ থেকে পোশাক নিয়েছেন, তবে ফেরত পেতে সব সময় অনেক অনুরোধ করতে হয়েছে। এবার ৭৫ হাজার টাকার একটি শাড়ি নিয়ে আর ফেরত দিচ্ছেন না; বরং উল্টো হুমকি দিচ্ছেন। এখন নিজের নিরাপত্তা নিয়ে আমি শঙ্কিত।’

এ বিষয়ে গণমাধ্যমে তিশা জানান, একটি চক্র ইচ্ছা করে তাঁর বিরুদ্ধে এসব করছে। সবকিছু জেনে বিস্তারিত কথা বলবেন তিনি।

নারী উদ্যোক্তাদের অভিযোগে তিশা যখন সমালোচিত, সেই সময়ে অভিনেত্রী ব্যস্ত তাঁর প্রথম সিনেমার শুটিংয়ে। সাকিব ফাহাদের পরিচালনায় ‘সোলজার’ নামের সিনেমায় তিশার বিপরীতে আছেন শাকিব খান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

রিয়াদ সিজনে শুরু হয়েছে বাংলাদেশ পর্ব: দর্শক মাতাবেন মনির খান, আসিফ আকবর, দীঘিরা

বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১২ নভেম্বর ২০২৫, ০৮: ৫৩
(বাঁ থেকে) আসিফ আকবর, দীঘি ও মনির খান। ছবি: সংগৃহীত
(বাঁ থেকে) আসিফ আকবর, দীঘি ও মনির খান। ছবি: সংগৃহীত

সৌদি আরবের রিয়াদ শহরে ষষ্ঠবারের মতো শুরু হয়েছে রিয়াদ সিজন। গত ১০ অক্টোবর শুরু হওয়া এই আয়োজনে অংশ নিচ্ছে ১৪টি দেশ। প্রতিটি দেশের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে বিশেষ কয়েকটি দিন। ওই দিনগুলোয় নির্দিষ্ট দেশ তাদের সংগীত, নৃত্য, ঐতিহ্যবাহী পোশাক ও খাবার উপস্থাপন করবে। গতকাল শুরু হয়েছে বাংলাদেশ পর্ব। ‘বাংলাদেশ কালচার’ শিরোনামে এই আয়োজন চলবে ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত।

গত বছর রিয়াদ সিজনের কনসার্টে প্রথম অংশ নিয়েছিলেন ব্যান্ড তারকা নগর বাউল জেমস। শুধু রিয়াদ নয়, দেশটির বিভিন্ন শহরে থাকা বাংলাদেশিরা ভিড় করেছিলেন প্রিয় শিল্পীর কনসার্ট উপভোগ করতে। জেমস ছাড়া পারফর্ম করেছেন হাবিব ওয়াহিদ, পড়শিসহ অনেকে। এবারও থাকছে বাংলাদেশের জনপ্রিয় তারকাদের উপস্থিতি। অংশগ্রহণ করছেন সংগীতশিল্পী আসিফ আকবর, মনির খান, বেলাল খান, আকাশ মাহমুদ, ইশরাত জাহান জুঁই, পুষ্পিতা মিত্র, হুমায়রা ইশিকা, ডিজে তুরিন, অভিনেত্রী প্রার্থনা ফারদিন দীঘিসহ অনেকে।

গতকাল প্রথম দিনে রিয়াদের আল সুওয়াইদি পার্কে গান শোনান আকাশ মাহমুদ, মুহাম্মদ ইমরান, হুমায়রা ঈশিকা ও ডিজে তুরিন এমএনআর। আজ গান শোনাবেন বেলাল খান, পুষ্পিতা মিত্র, ইশরাত জাহান জুঁই এবং ডিজে তুরিন এমএনআর।

১৩ নভেম্বরও মঞ্চে থাকবেন বেলাল খান, মুহাম্মদ ইমরান, হুমায়রা ঈশিকা ও ডিজে তুরিন এমএনআর। ওই দিনের বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে গাইবেন মনির খান।

শেষ দিনের বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে গান শোনাবেন আসিফ আকবর। যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় দুই মাসের সংগীত সফর করে এসেছেন তিনি। এবার সৌদি আরবে মুগ্ধতা ছড়াবেন। শেষ দিনের আয়োজনে আরও গাইবেন আকাশ মাহমুদ, ডিজে তুরিন এমএনআর, পুষ্পিতা মিত্র ও ইশরাত জাহান জুঁই। এই আয়োজনে বিশেষ পারফর্মে অংশ নেবেন বলে নিশ্চিত করেছেন অভিনেত্রী দীঘি। তবে তিনি কোন ইভেন্টে পারফর্ম করবেন, তা জানা যায়নি।

১১ থেকে ১৪ নভেম্বর বাংলাদেশ কালচার পর্বে সংগীত ছাড়া তুলে ধরা হবে বাংলাদেশের নানা ঐতিহ্য। থাকছে নৃত্য, বাদ্যযন্ত্র, পোশাক, খাবারসহ নানা শিল্প ও সাংস্কৃতিক প্রদর্শনী।

২০১৯ সাল থেকে সৌদি সরকার নিয়মিত আয়োজন করে আসছে ‘রিয়াদ সিজন’। বিনোদন, সংস্কৃতি, খেলাসহ নানা আয়োজনে অংশ নিতে প্রতিবছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে রিয়াদে একত্র হন বিনোদনপ্রেমীরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

‘দেনা পাওনা’ সিনেমায় যুক্ত হলেন শিপন বাদ পড়লেন ইমন

বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকা
শিপন মিত্র। ছবি: সংগৃহীত
শিপন মিত্র। ছবি: সংগৃহীত

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছোটগল্প ‘দেনা পাওনা’ অবলম্বনে একই নামে সিনেমা বানাচ্ছেন সাদেক সিদ্দিকী। সরকারি অনুদানের এই সিনেমায় জুটি হয়ে অভিনয় করার কথা ছিল মামনুন ইমন ও প্রার্থনা ফারদিন দীঘির। তবে শুটিংয়ের আগে বদলে যায় নায়িকা। দীঘির পরিবর্তে সাদিয়া জাহান প্রভাকে নিয়ে গত আগস্টে শুরু হয় শুটিং। এবার দ্বিতীয় লটের শুটিং শুরুর আগে জানা গেল নায়ক পরিবর্তনের খবর। ইমনের পরিবর্তে দেনা পাওনা সিনেমায় যুক্ত হয়েছেন শিপন মিত্র। বিষয়টি আজকের পত্রিকাকে নিশ্চিত করেছেন নির্মাতা সাদেক সিদ্দিকী।

প্রথম লটের শুটিংয়ের সময় নির্মাতা জানিয়েছিলেন, দীঘি না থাকলেও ইমন থাকছেন নায়ক হিসেবে। তবে গতকাল ইমনের জায়গায় শিপন মিত্রের সঙ্গে চুক্তি সম্পন্ন করেন নির্মাতা। ইমনকে বাদ দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে নির্মাতা জানান, বিদেশে থাকায় শিডিউলজনিত সমস্যায় শুটিং করতে পারছেন না ইমন, তাঁর পরিবর্তে নেওয়া হয়েছে শিপনকে।

সাদেক সিদ্দিকী বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রে আছেন ইমন। এ কারণে প্রথম লটের শুটিং তাঁকে ছাড়া করতে হয়েছে। এখন দ্বিতীয় লটের শুটিং শুরু করতে হবে। এটি সরকারি অনুদানের সিনেমা। তাই নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করার তাড়া থাকে। ইতিমধ্যে দ্বিতীয় লটের শুটিংয়ের পরিকল্পনা করা হয়েছে। কিন্তু ইমন জানিয়েছেন, ওই সময়ের মধ্যে দেশে ফিরতে পারছেন না তিনি। তাই তাঁর সঙ্গে আলাপ করেই নায়ক পরিবর্তন করা হয়েছে। ইতিমধ্যে শিপনের সঙ্গে আমাদের চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে। আশা করছি এ সিনেমায় সে ভালো করবে।’

মামনুন ইমনের মতো একই কারণে এই সিনেমায় দীঘির পরিবর্তে প্রভাকে চুক্তিবদ্ধ করা হয়। সে সময় নির্মাতা জানিয়েছিলেন, দেশের বাইরে থাকার কারণে সময় দিতে না পারায় দীঘিকে পরিবর্তন করা হয়েছে।

দেনা পাওনা সিনেমায় শিপন অভিনয় করবেন জমিদারের ছেলের চরিত্রে। যে কলকাতায় ম্যাজিস্ট্রেটের চাকরি করে। গ্রামের মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়ে নিরুপমার সঙ্গে তার বিয়ে ঠিক হয়। কিন্তু অসচ্ছল পিতা বিয়ের পণ দিতে না পারায় লজ্জায় আত্মহত্যা করে নিরুপমা। নিরুপমার চরিত্রে অভিনয় করছেন প্রভা। এতে আরও অভিনয় করছেন ইরা শিকদার, তানিন সুবাহ, সুমনা সোমা, রিপা, অভি, সাব্বির প্রমুখ। নির্মাতা জানিয়েছেন, এ মাসের শেষ দিকে শুরু হবে দেনা পাওনা সিনেমার দ্বিতীয় লটের শুটিং।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

কোরিয়ান ড্রামায় অভিনয়ের আগ্রহ রাশমিকার

বিনোদন ডেস্ক
রাশমিকা মান্দানা। ছবি: ইনস্টাগ্রাম
রাশমিকা মান্দানা। ছবি: ইনস্টাগ্রাম

রহস্য, রোমান্স কিংবা অ্যাকশন—সব গল্পেই সমানভাবে মানিয়ে যান রাশমিকা মান্দানা। কন্নড়, তেলুগু, তামিল, হিন্দি—বিভিন্ন ভাষার নানা ঘরানার সিনেমায় অভিনয় করে অভ্যস্ত তিনি। রাশমিকার নজর এবার কোরিয়ান ভাষার দিকে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয়তা বেড়েছে কোরিয়ান ড্রামার। রাশমিকা নিজেও এসব সিরিজের ভক্ত। তাঁর খুব ইচ্ছা কোরিয়ান ড্রামায় অভিনয় করার।

সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে রাশমিকা বলেন, ‘কোভিডের সময় কোরিয়ান ড্রামার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছিল আমার। ওই সময় থেকে কে-ড্রামা দেখা শুরু করেছিলাম। হাতে তখন অনেক সময় ছিল। প্রতিটি কে-ড্রামা সাধারণত ১৬ পর্বের। ফলে ১৬ ঘণ্টা খুব আনন্দে কাটানো যেত।’ অভিনেত্রী জানান, ‘ইটস ওকে টু নট বি ওকে’, ‘লাভ স্কাউট’, ‘আন্ডারকভার হাইস্কুল’, ‘হোয়েন লাইফ গিভস ইউ ট্যানজারিন’সহ অনেক কোরিয়ান সিরিজ রয়েছে তাঁর পছন্দের তালিকায়।

কোরিয়ান সিরিজে অভিনয়ের সুযোগ পেলে লুফে নেবেন বলে জানান রাশমিকা। তিনি বলেন, ‘যদি সুযোগ পাই, ব্যাপারটা খুব মজার হবে। সেই অপেক্ষায় আছি। তবে কোন ধরনের চরিত্রে অফার পাচ্ছি, সেটাও দেখার বিষয়। কারণ, সবাই জানে, চরিত্র নিয়ে আমি কতটা খুঁতখুঁতে।’

কোরিয়ান সিরিজ ছাড়াও জাপানি অ্যানিমের ভীষণ ভক্ত রাশমিকা। ছোটবেলা থেকে এখনো নিয়ম করে অ্যানিমে দেখেন তিনি। ‘নারুতো শিপুডেন’ দেখে বড় হয়েছেন। ২২টি সিজনে ৬০০-র বেশি পর্ব আছে এ অ্যানিমে সিরিজে। সবই দেখেছেন। নারুতো উজুমাকি তাঁর খুবই পছন্দের চরিত্র। এ ছাড়া ‘জুজুৎসু কাইসেন’, ‘ডিমন স্লেয়ার’, ‘উইন্ড ব্রেকার’, ‘দ্য অ্যাপোথেক্যারি ডায়েরিজ’ অ্যানিমেগুলোও নিয়মিত দেখেন। তাঁর ভাষায়, ‘অ্যানিমে দেখেই বড় হয়েছি। এটা আমার কমফোর্ট জোন’।

সিনেমা আর ব্যক্তিজীবন—সব মিলিয়ে বছরজুড়ে আলোচনায় আছেন রাশমিকা মান্দানা। বিজয় দেবরাকোন্ডার সঙ্গে বাগদান নিয়ে আলোচনা তো আছেই। প্রেক্ষাগৃহেও একের পর এক সিনেমা মুক্তি পাচ্ছে তাঁর। গত ২১ অক্টোবর মুক্তি পাওয়া ভৌতিক সিনেমা ‘থাম্মা’ এরই মধ্যে বক্স অফিসে ২০৬ কোটি রুপি পেরিয়েছে। এতে রাশমিকা ছাড়াও আছেন আয়ুষ্মান খুরানা ও নওয়াজুদ্দিন সিদ্দিকী। এ সাফল্যের মাঝেই ৭ নভেম্বর হলে এসেছে তাঁর আরও এক সিনেমা ‘দ্য গার্লফ্রেন্ড’। এটিও ভালো সাড়া পাচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত