Ajker Patrika

তিন বছর পর চিনির দাম ১০০ টাকার নিচে

  • এক সপ্তাহে চিনির দাম কমেছে ১০ টাকা
  • পেঁয়াজের দাম কমেনি, সবজির দামও চড়া
‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
তিন বছর পর চিনির দাম ১০০ টাকার নিচে

বাজারের অন্যতম জরুরি নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্য চিনির কেজি তিন বছর পর ১০০ টাকার নিচে নামল। ব্যবসায়ীরা বলেছেন, আমদানির শর্ত শিথিল হওয়া ও বিশ্ববাজারে দাম কমা এর কারণ। চলতি প্রবণতা অব্যাহত থাকলে দাম আরেকটু কমতে পারে।

দেশে সাধারণত রোজার মাস তিনেক আগে থেকেই দাম বাড়তে থাকে চিনির। প্রতিবছর পবিত্র রমজান মাস যত ঘনিয়ে আসে, চিনির বাজারে অস্থিরতা ততই বাড়ে। সে হিসেবে এবার কিছুটা ব্যতিক্রম দেখা যাচ্ছে বাজারে।

রোজার তিন মাসের কিছু বেশি বাকি রয়েছে। এর মধ্যে সম্প্রতি ধারাবাহিকভাবে কমছে চিনির দাম। সর্বশেষ গত এক সপ্তাহে দাম কমেছে কেজিপ্রতি ১০ টাকা। এর মধ্য দিয়ে দীর্ঘ তিন বছর পর পণ্যটির দাম ১০০ টাকার নিচে নেমে এসেছে। বাজারে এখন খোলা সাদা চিনি মিলছে ৯৫ টাকা কেজি। প্যাকেট চিনি পাওয়া যাচ্ছে ন্যূনতম ১০০ টাকা কেজিতেও।

দেশে চিনির দাম বাড়া শুরু হয় করোনা মহামারিতে ২০২০ সালের দিকে আমদানি রপ্তানি ব্যাহত হলে। এরপর ডলার সংকট ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবসহ নানা কারণে বাজার চড়া ছিল। ২০২২ সালের অক্টোবরে মাঝামাঝিতে চিনির কেজি ১০০ টাকা ছাড়ায়। সরকারের নানা চেষ্টায়ও দামের ঘোড়া নিয়ন্ত্রণে আসেনি। দাম সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠেছিল ২০২৩ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বরে খুচরায় ১৪৫ টাকা কেজি। দীর্ঘদিন এই দামেই বিক্রি হয়। এর পর থেকে ১২৫-১৩৫ টাকার মধ্যে ওঠানামা করে। চলতি বছরের জুলাই মাস থেকে দাম ধারাবাহিকভাবে কমতে থাকে।

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশে (টিসিবি) তথ্য বলছে, গত বছর এই সময় চিনির দাম ছিল ১৩৫ টাকা কেজি। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এখন আমদানি-রপ্তানি স্বাভাবিক, ডলারের সংকট দূর হয়েছে। আমদানির জন্য এলসি (ঋণপত্র) খোলায় শতভাগ মার্জিনের বাধ্যবাধকতা নেই। এ ছাড়া বিশ্ববাজারে চিনির দাম গত এক বছরে প্রায় ১৫ শতাংশ কমেছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর হাতিরপুল, সেগুনবাগিচা, মালিবাগ, মুগদাপাড়াসহ বিভিন্ন বাজারে খুচরায় খোলা চিনি বিক্রি হয়েছে ৯৫ থেকে ১০০ টাকা কেজি। এক সপ্তাহ আগে ছিল ১০০-১০৫ টাকা কেজি। প্যাকেট চিনি বিক্রি হচ্ছে ১০০-১১০ টাকা কেজি।

হাতিরপুল বাজারের আমির জেনারেল স্টোরের মালিক মো. আমির বলেন, ‘আগামী কয়েক দিনের মধ্যে প্যাকেটজাত চিনি ১০০ টাকা কেজি করে বিক্রি করতে পারব আমরা। আর খোলাটা ৯০ টাকায় হবে। কারণ পাইকারি বাজার ও কোম্পানির রেট কমেছে। আজকে কোম্পানিগুলো আমাকে আগের তুলনায় ১০ টাকা কমে চিনি দিয়েছে। তবে এখনো যাঁদের কাছে আগের কেনা চিনি রয়েছে, তাঁরা আগের দামেই বিক্রি করছেন।’

চিনির সঙ্গে কমেছে মোটা দানার ডালের দাম। প্রতি কেজিতে তা ৫ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ৯০-১০০ টাকায়। গত সপ্তাহে ছিল ৯৫-১০৫ টাকা কেজি। তবে ছোট দানার আমদানি করা ডালের দাম আগের মতোই কিছুটা বেশি ১৫৫-১৬০ টাকা কেজি।

দেশি পেঁয়াজের দাম এখনো কমেনি। গতকাল রাজধানীর বাজারগুলোতে বিক্রি হয়েছে ১২০-১২৫ টাকা কেজি করে। গত সপ্তাহে এই দামেই বিক্রি হয়েছিল। কয়েক দিন আগে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন দ্রুত দাম না কমলে আমদানি খুলে দেওয়ার ঘোষণাও দিয়েছেন। কিন্তু তার কোনো প্রভাব বাজারে নেই।

গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে পাইকারিতে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১০৮-১১০ টাকা কেজি।

জানতে চাইলে কারওয়ান বাজারের পাইকারি বিক্রেতা সৈয়দ পরান বললেন, ‘বছরের এই সময়টাতে পেঁয়াজের দাম কিছুটা বেশিই থাকে। কারণ এ সময় কৃষকের ঘরে পেঁয়াজ থাকে কম। এই সুযোগটা নেয় যাদের কাছে মজুত আছে, তারা। এখন যেদিন পেঁয়াজের সরবরাহ ভালো থাকে, সেদিন হয়তো দু-তিন টাকা কমে। আর সরবরাহ কম হলে কিছুটা বাড়ে।’

এ অবস্থায় সরকার কিছুটা বাধ্য হয়েই পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে গতকাল জানালেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবুর রহমান। তিনি বলেন, ‘আমরা এই সপ্তাহ অপেক্ষা করার কথা বলেছিলাম। সপ্তাহ শেষ হয়েছে, কিন্তু দাম কমেনি। সে কারণেই আমদানির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কর্মদিবস ছাড়া আমদানির অনুমতি প্রদান করা যায় না। যে কারণে আমরা রবিবার থেকে আমদানির অনুমতি প্রদান করব।’

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে, সরকার নানাভাবে চেষ্টা করার পরও বাজারে পেঁয়াজের দাম কমানো যায়নি। এর পেছনে রয়েছে একশ্রেণির ব্যবসায়ী। জানা গেছে, স্থলবন্দরগুলোর ওপারে ভারতীয় সীমান্তে প্রচুর পেঁয়াজ মজুত করা হয়েছে। এগুলো আমদানি করার অপেক্ষায় রয়েছেন দেশের ব্যবসায়ীরা।

তবে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেওয়া হলেও তা সীমিত পরিসরে দেওয়া হবে, যাতে মৌসুমি পেঁয়াজ ওঠার পর কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।

শীতের আগাম সবজি ওঠা শুরু হলেও চলতি সপ্তাহে সবজির বাজারও চড়া। গত সপ্তাহের তুলনায় প্রায় সব ধরনের সবজির দাম কেজিপ্রতি ১০-২০ টাকা বেশি। কোনো কোনো সবজির দাম কেজিতে ৩০ টাকাও বেড়েছে। গতকাল খুচরায় টমেটো বিক্রি হয়েছে ১৪০ টাকা কেজি, যা গত সপ্তাহ পর্যন্ত ১২০ টাকা কেজি ছিল। বেগুন, করলার দাম আবার ১০০ টাকায় উঠেছে, যা ছিল ৬০-৮০ টাকা। শিমের দাম বেড়ে প্রতি কেজি ৯০-১০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে, অথচ গত সপ্তাহ পর্যন্ত দাম ছিল ৬০-৮০ টাকা কেজি। কাঁচা মরিচের দামও কিছুটা বেড়ে ১৯০ টাকা হয়েছে। মুলা, ঢ্যাঁড়স, শসাসহ কিছু সবজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজি করে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ