Ajker Patrika

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর: সাঁকো বেয়ে উঠতে হয় চার কোটির সেতুতে

  • দুই পাশে ২০-২৫ ফুট দৈর্ঘ্যের বাঁশের সাঁকো বেয়ে উঠতে হয় সেতুতে
  • চরম ভোগান্তিতে তিনটি ইউনিয়নের ১৪টি গ্রামের মানুষ
ফরিদ আহমেদ চঞ্চল, শাহজাদপুর (সিরাজগঞ্জ)
আপডেট : ০২ নভেম্বর ২০২৫, ০৮: ১৮
সংযোগ সড়ক না থাকায় ঝুঁকিপূর্ণ সাঁকো বেয়ে উঠতে হয় সেতুতে। সম্প্রতি সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার ক্যাইজা বিশ্বনাথপুর নতুনপাড়া এলাকায়।	ছবি: আজকের পত্রিকা
সংযোগ সড়ক না থাকায় ঝুঁকিপূর্ণ সাঁকো বেয়ে উঠতে হয় সেতুতে। সম্প্রতি সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার ক্যাইজা বিশ্বনাথপুর নতুনপাড়া এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলায় পৌনে ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে সেতু নির্মাণ করা হলেও সংযোগ সড়ক না থাকায় স্থানীয় লোকজনকে প্রতিদিন চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের ১৪টি গ্রামের প্রায় ৩০ হাজার মানুষ সেতুর দুই পাশে ২০-২৫ ফুট দৈর্ঘ্যের সাঁকো বেয়ে ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করতে বাধ্য হচ্ছে।

এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড উপজেলার কৈজুরী ইউনিয়নের হাট পাচিল থেকে এনায়েতপুর মণ্ডলের মোড় পর্যন্ত যমুনা তীর রক্ষা বাঁধ সংস্কারের কাজ চলায় পূর্ব ও দক্ষিণ অঞ্চলের মানুষদের বাধ্য হয়ে প্রতিদিন মালামালসহ সেতু পারাপার হতে হচ্ছে। এতে ছোট-বড় দুর্ঘটনাও ঘটছে।

জানা গেছে, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) অর্থায়নে সিরাজগঞ্জ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ২০২১-২২ অর্থবছরে উপজেলার খুকনি ইউনিয়নের ক্যাইজা বিশ্বনাথপুর নতুনপাড়া পোরাকুম বিলের ওপর ৬০ মিটার সেতু নির্মাণে ৩ কোটি ৭৪ লাখ ৮৫ হাজার ৩৭ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। সেতুটি নির্মাণের কাজ পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স ইউনুস অ্যান্ড ব্রাদার্স প্রাইভেট লিমিটেড।

স্থানীয়রা জানান, সেতুর নির্মাণকাজ প্রায় ৮ মাস আগে শেষ হলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সংযোগ সড়ক তৈরি করেনি। এ কারণে সেতুতে উঠতে স্থানীয়রা বাঁশ ও কাঠ দিয়ে বানানো সাঁকো ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছেন। এই সাঁকো দিয়েই প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে বাইসাইকেল, মোটরসাইকেল ও ভ্যান চলাচল করছে। ভ্যানচালকেরা মালামাল মাথায় নিয়ে সাঁকো পার হয়ে পরে আবার ভ্যান নিয়ে গিয়ে মালামাল পরিবহন করছেন। সাঁকো পার হতে অনেকে একে অপরের ওপর নির্ভর করতে হয়।

সরেজমিনে দেখা গেছে, স্থানীয় মানুষদের পাশাপাশি কৃষকেরা তাঁদের ধান-চালসহ উৎপাদিত পণ্য বাজারে নিতে চরম দুর্ভোগে পড়ছেন। গর্ভবতী মা, শিশু ও অন্য রোগীদের হাসপাতালে আনা-নেওয়া করতে বিপদে পড়ছেন স্বজনেরা। স্থানীয় ভ্যানচালক মোজাম সরকার বলেন, বিকল্প কোনো সড়ক না থাকায় মালামাল মাথায় করে সেতু পার হতে হয়। অপর ভ্যানচালক হামিদ ভাঙারি বলেন, সেতুর সংযোগ সড়ক নির্মাণ না হওয়ায় প্রতিনিয়ত ঝুঁকি নিতে হচ্ছে। তারা অ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্রুত পদক্ষেপ কামনা করেছেন।

স্থানীয়রা আরও জানায়, সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার পরও সংযোগ সড়ক না হওয়ায় খুকনি, বিশ্বনাথপুর, ক্যাইজা, নতুন ঘাটাবাড়ী, সড়াতৈল, রুপসি, সৈয়দপুর, চ্যাংটাপাড়াসহ পূর্ব ও দক্ষিণ অঞ্চলের প্রায় ৩০ হাজার মানুষ চরম দুর্ভোগ ও ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। এতে ধান-চালসহ উৎপাদিত কৃষিপণ্য বাজারজাতসহ দৈনন্দিন যাতায়াতে চরম অসুবিধা হচ্ছে।

জানতে চাইলে প্রকল্পের তদারকি কর্মকর্তা নকশাকার (উপসহকারী প্রকৌশলী) আমির ফারুক সরকার বলেন, ‘দীর্ঘদিন যাবৎ ঠিকাদারকে চিঠি দিয়েও কাজ করানো সম্ভব হয়নি।’ তবে বিভাগীয় চিঠি দেওয়াসহ অতি দ্রুত সমস্যার সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।

এ বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী এ এইচ এম কামরুল হাসান রনি বলেন, ‘ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে সেতুর অ্যাপ্রোচ সড়ক দ্রুত নির্মাণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিলের টাকা আটকে রাখা হয়েছে। অ্যাপ্রোচ সড়ক তৈরি না করলে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

১ হাজার টাকায় ৪ থ্রি-পিস দেওয়ার বিজ্ঞাপন দেখে নারীদের ভিড়, বেকায়দায় শোরুম কর্তৃপক্ষ

একাত্তরের হত্যাযজ্ঞে সম্পৃক্ততার অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন: জামায়াত

মার্কিন প্রেসিডেন্টের কাছে ক্ষমা চেয়েছি: কানাডার প্রধানমন্ত্রী

আ.লীগ-জাপাকে ভোটের বাইরে রাখলে গৃহযুদ্ধের সূত্রপাত হতে পারে: শামীম পাটোয়ারী

আ.লীগ নেতার মরদেহ উদ্ধার, ছেলেকে ৫ দিনের রিমান্ডে চায় পুলিশ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মাদকের বিনিময়ে সার পাচারকালে ৯ জন আটক

হাতিয়া (নোয়াখালী) প্রতিনিধি
সারসহ আটক ব্যক্তিরা। ছবি: সংগৃহীত
সারসহ আটক ব্যক্তিরা। ছবি: সংগৃহীত

মিয়ানমার থেকে মাদকের বিনিময়ে অবৈধভাবে সারসহ বাংলাদেশি পণ্য পাচারকালে ৯ জনকে আটক করেছে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড। এ সময় পাচারের কাজে ব্যবহৃত তিনটি বোট এবং প্রায় ১৪ লাখ ২৮ হাজার টাকা মূল্যের রাসায়নিক সার জব্দ করা হয়। শনিবার (১ নভেম্বর) রাতে এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করেন কোস্ট গার্ড সদর দপ্তরের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সিয়াম-উল-হক।

কোস্ট গার্ডের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সিয়াম-উল-হক জানান, একটি চক্র বাংলাদেশি পণ্যের বিনিময়ে মিয়ানমার থেকে ইয়াবা, বিদেশি মদসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য দেশে আনছে—এমন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে এই অভিযান চালানো হয়।

প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে শনিবার রাত ১টার দিকে কোস্ট গার্ড স্টেশন হাতিয়া নোয়াখালীর হাতিয়া থানাধীন সূর্যমুখী ঘাট-সংলগ্ন মেঘনা নদীতে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে।

অভিযান চলাকালে সন্দেহজনক তিনটি বোটে তল্লাশি চালিয়ে অবৈধভাবে শুল্ক ও কর ফাঁকি দিয়ে পাচারের উদ্দেশ্যে বহন করা ১ হাজার ১৯৪ বস্তা রাসায়নিক সারসহ ৯ জনকে হাতেনাতে আটক করা হয়। জব্দ সারগুলোর আনুমানিক মূল্য প্রায় ১৪ লাখ ২৮ হাজার টাকা।

আটক ব্যক্তিরা হলেন কক্সবাজারের পিত্তমখালী গ্রামের আব্দুল বারেকের ছেলে আবুল কাশেম (৪৫), সন্দ্বীপ উপজেলার উরিরচর এলাকার মুন্সি মাঝির ছেলে মো. সালাউদ্দিন (২৮), চট্টগ্রাম খুলশী থানার দামপাড়া টাইগার পাস এলাকার আব্দুর রহিমের ছেলে মো. সোহেল (৩৫), নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার সূর্যমুখী শূন্যের চর গ্রামের মৃত মোজাম্মেল হোসেনের ছেলে মো. বাহার (৫৭), ঢাকা দোহার উপজেলার মেথুলা বাজার দক্ষিণ শিমুলিয়া গ্রামের আলাউদ্দিন মোল্লার ছেলে মো. আক্তার হোসেন (২৮), লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার আঠিয়া তলি গ্রামের আব্দুস সাত্তারের ছেলে আনোয়ার হোসেন (৩৭), ফেনী সদর উপজেলার ফাজিলপুর গ্রামের সালেহ আহাম্মদের ছেলে মো. সাহেল (২৮), পিরোজপুর নেছারাবাদের (স্বরূপকাঠি) রাজাবাড়ী গ্রামের নুরুল হুদার ছেলে মো. নেছার উদ্দিন (৩৭) ও তাঁর ছেলে মো. সম্রাট মিয়া (১৬)।

লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সিয়াম-উল-হক বলেন, আটক পাচারকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। চোরাচালান, মাদক ও অবৈধ বাণিজ্য রোধে কোস্ট গার্ডের অভিযান অব্যাহত থাকবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

১ হাজার টাকায় ৪ থ্রি-পিস দেওয়ার বিজ্ঞাপন দেখে নারীদের ভিড়, বেকায়দায় শোরুম কর্তৃপক্ষ

একাত্তরের হত্যাযজ্ঞে সম্পৃক্ততার অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন: জামায়াত

মার্কিন প্রেসিডেন্টের কাছে ক্ষমা চেয়েছি: কানাডার প্রধানমন্ত্রী

আ.লীগ-জাপাকে ভোটের বাইরে রাখলে গৃহযুদ্ধের সূত্রপাত হতে পারে: শামীম পাটোয়ারী

আ.লীগ নেতার মরদেহ উদ্ধার, ছেলেকে ৫ দিনের রিমান্ডে চায় পুলিশ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বাঘায় শরীরে ডিজেল ঢেলে দগ্ধ গৃহবধূর মৃত্যু, স্বামী-ভাইয়ের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ

বাঘা (রাজশাহী) প্রতিনিধি    
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

রাজশাহীর বাঘায় শরীরে ডিজেল ঢেলে আগুনে দগ্ধ হয়ে মুন্নি খাতুন (২৮) নামের এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে। শনিবার (১ নভেম্বর) সন্ধ্যায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। নিহত মুন্নি খাতুন বাঘা পৌরসভার চক নারায়ণপুর গ্রামের সুরুজ আলীর স্ত্রী এবং একই পৌরসভার মিলিক বাঘা গ্রামের নাজিমুদ্দীনের মেয়ে। তাঁদের সাত বছরের এক ছেলে ও চার বছরের এক মেয়ে রয়েছে।

পারিবারিক কলহের জেরে মুন্নি খাতুন নিজের শরীরে ডিজেল ঢেলে আগুন ধরিয়ে আত্মহত্যা করেছেন বলে তাঁর স্বামীর পরিবার দাবি করেছে।

অন্যদিকে মুন্নির ভাই আসলাম আলী এই দাবি পুরোপুরি অস্বীকার করেছেন। তিনি অভিযোগ করেন, ‘আমার বোনের স্বামীই তার শরীরে ডিজেল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।’ তিনি জানান, ১০ বছর আগে প্রেমের সম্পর্কের মাধ্যমে তাঁদের বিয়ে হলেও সুরুজের পরিবার শুরু থেকেই এই সম্পর্ক মেনে নেয়নি।

মুন্নির স্বামী সুরুজ আলীর বক্তব্য না পাওয়া গেলেও তাঁর ভাতিজা সাব্বির আলী জানান, শুক্রবার রাতে পারিবারিক বিষয় নিয়ে মুন্নি ও সুরুজের মধ্যে ঝগড়া হয়। তাঁর দাবি, সুরুজ যখন ঘুমন্ত ছিল, তখন ভোররাতে মুন্নি নিজেই নিজের শরীরে ডিজেল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন। চিৎকার শুনে সুরুজ ঘুম থেকে উঠে পানি ঢেলে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। এরপর মুন্নিকে প্রথমে বাঘা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং পরে রামেকে ভর্তি করা হয়। মেশিনে ব্যবহারের জন্য বাড়িতে ডিজেল রাখা ছিল বলেও সাব্বির আলী দাবি করেন।

বাঘা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক অখিল পাল জানান, স্বজনেরা মুন্নিকে হাসপাতালে নিয়ে এলে তাঁকে রামেক হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।

রামেক হাসপাতালের মুখপাত্র শঙ্কর বিশ্বাস মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘রোগীকে সকালে হাসপাতালের ২৯ নম্বর ওয়ার্ডে (বার্ন ইউনিট) ভর্তি করা হয়। দুপুরের দিকে রোগীর স্বজনেরা উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে ঢাকায় নেওয়ার কথা বলে ছাড়পত্র নিয়ে হাসপাতাল থেকে চলে যান। তবে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে বিকেলে তাঁকে আবার হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসা হয়। জরুরি বিভাগের চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত অবস্থায় পান।’

শঙ্কর বিশ্বাস আরও জানান, আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মুন্নির মরদেহ রামেক হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের মর্গে রাখা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

১ হাজার টাকায় ৪ থ্রি-পিস দেওয়ার বিজ্ঞাপন দেখে নারীদের ভিড়, বেকায়দায় শোরুম কর্তৃপক্ষ

একাত্তরের হত্যাযজ্ঞে সম্পৃক্ততার অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন: জামায়াত

মার্কিন প্রেসিডেন্টের কাছে ক্ষমা চেয়েছি: কানাডার প্রধানমন্ত্রী

আ.লীগ-জাপাকে ভোটের বাইরে রাখলে গৃহযুদ্ধের সূত্রপাত হতে পারে: শামীম পাটোয়ারী

আ.লীগ নেতার মরদেহ উদ্ধার, ছেলেকে ৫ দিনের রিমান্ডে চায় পুলিশ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নিবু নিবু দশায় শিশু-কিশোরদের সংগঠন

  • শিশুদের নিয়ে ভাবার মানুষ ও প্রতিষ্ঠান—দুটোই কমেছে
  • অর্থের মোহ ও ডিজিটাল জীবনে ব্যস্ত অভিভাবক
  • সরকার ও প্রতিষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষকতা কমে গেছে
  • সাংস্কৃতিক কার্যক্রমবিরোধী পরিবেশও বাধা
শরীফ নাসরুল্লাহ, ঢাকা
আপডেট : ০২ নভেম্বর ২০২৫, ০৮: ১৮
‘কঁচি-কাঁচার মেলা’র চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় ব্যস্ত খুদে আঁকিয়েরা। ছবি: সংগৃহীত
‘কঁচি-কাঁচার মেলা’র চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় ব্যস্ত খুদে আঁকিয়েরা। ছবি: সংগৃহীত

খেলার মাঠ উধাও। কার্যত বিলুপ্ত পাড়াভিত্তিক পাঠাগার সংস্কৃতি। স্কুলের সীমিত পরিসর ছাড়া সাংস্কৃতিক আয়োজনও তেমন নেই। এই পরিবেশে মোবাইল ফোনের স্ক্রিনে চোখ রেখে বেড়ে উঠছে শহুরে নতুন প্রজন্ম। শহরতলি বা গ্রামের পরিবেশও সে পথের দিকেই ছুটছে।

কয়েক দশক ধরে শিশু-কিশোরদের মানস গঠনে বড় ভূমিকা রেখে এসেছিল বিভিন্ন সংগঠন। সংস্কৃতির পাশাপাশি খেলাধুলার চর্চার মধ্য দিয়ে সুস্থ শরীর ও মন তৈরির কার্যক্রম ছিল তাদের। এগুলোর বেশির ভাগ এখন চলছে ধুঁকে ধুঁকে। পর্যবেক্ষকেরা বলেন, সংগঠনগুলোর কার্যক্রমের কথা দূরে থাক, তাদের নামও এ প্রজন্মের কয়জন অভিভাবকের জানা আছে, তা গবেষণার বিষয় হতে পারে। পর্যবেক্ষকদের মতে, সমাজের ওপর এর নেতিবাচক প্রভাবও প্রতিনিয়ত প্রকাশ পাচ্ছে নানাভাবে।

শিশু-কিশোরদের নিয়ে কাজ করা সংগঠকেরা এই পরিস্থিতির নানা কারণ উল্লেখ করেছেন। তাঁদের মতে, শিশুদের নিয়ে ভাববার মানুষ ও প্রতিষ্ঠান—দুই-ই কমছে। পরিবার থেকে সন্তানের মানস গঠন ও সামাজিকীকরণের কাজ যথাযথভাবে হচ্ছে না। জীবনযাপনের চাপ, স্মার্টফোনসহ ডিজিটাল প্রযুক্তির প্রভাব এর জন্য অনেকটা দায়ী।

দেশের অন্যতম প্রধান শিশু-কিশোর সংগঠন কেন্দ্রীয় কচি-কাঁচার মেলার সভাপতি ও সাবেক সচিব খোন্দকার মো. আসাদুজ্জামানের সঙ্গে আলাপচারিতা হয় এ নিয়ে। আলাপে উঠে আসে শিশু সংগঠনগুলোর বর্তমান অবস্থা এবং সমাজজীবনের রূঢ় বাস্তবতা। আক্ষেপ করে তিনি বলেন, ‘প্রযুক্তি ছিল আশীর্বাদ। কিন্তু তার অপব্যবহার সমাজে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। কয়জন বাবা-মা আলাদা করে শিশুদের সময় দেন? বেশির ভাগ পেশা-সংসারের কাজের বাইরে যতটুকু সময় পান, তা মূলত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কাটান। সন্তানের মানস গঠনে সংগঠন চর্চা কিংবা পাঠ্যবইয়ের বাইরের কার্যক্রমের গুরুত্ব কতটা, তা অনেক বাবা-মা জানেন না।’

কেন্দ্রীয় কচি-কাঁচার মেলার যাত্রা শুরু হয় ১৯৫৬ সালে। উদ্যোক্তাদের মধ্যে ছিলেন কবি সুফিয়া কামাল, বিজ্ঞানী, লেখক আবদুল্লাহ আল-মুতী শরফুদ্দীনসহ তখনকার বিশিষ্টজনেরা। দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় এর বছর দেড়েক আগে চালু হয়েছিল ছোটদের বিভাগ ‘কচি-কাঁচার আসর’। এই শিশুদের পাতাকে কেন্দ্র করে সংগঠনটির জন্ম হয়। প্রতিষ্ঠাতা সভাপতির দায়িত্ব পান সাংবাদিক ছড়াকার রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই। ‘কচি-কাঁচার আসর’ পাতার সম্পাদক ছিলেন তিনিই। ধীরে ধীরে এই সংগঠন মহিরুহে পরিণত হয়। শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন, কবি জসীমউদ্‌দীন, অধ্যাপক অজিত কুমার গুহ, শিল্পী কামরুল হাসান, সওগাত সম্পাদক মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন, ড. কুদরাত-এ-খুদাসহ সমাজের নিজ নিজ ক্ষেত্রের খ্যাতিমান মানুষেরা যুক্ত হন এই সংগঠনের সঙ্গে। দাদাভাই নিজে একবার লিখেছিলেন, সংগঠনটি প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য ছিল, ‘এর সদস্যদের এই সংগঠনের মাধ্যমে প্রগতিশীল চিন্তা-চেতনা ও দেশাত্মবোধে উদ্ধুদ্ধ করা।’

এর কয়েক বছর আগে দৈনিক সংবাদের শিশুদের পাতা ‘খেলাঘর’ থেকে জন্ম হয়েছিল আরেকটি বড় ও সফল শিশু সংগঠনের। কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসর নামে সংগঠনটির যাত্রা শুরু ১৯৫২ সালে। এর পরিকল্পনাকারীরা ছিলেন শহীদুল্লা কায়সার, সত্যেন সেন, রণেশ দাসগুপ্ত, জহির রায়হানদের মতো স্বনামধন্য ব্যক্তিত্ব।

ক্রমে দেশজুড়ে শাখা ও কার্যক্রম ছড়িয়ে পড়ে শিশু সংগঠন দুটির। দেশের শিশু-কিশোরদের মেধা ও মনন গঠনে বিশাল অবদান রাখেন এদের সঙ্গে যুক্ত বিশিষ্টজনেরা। কিন্তু সাত দশকের পথচলার পর সংগঠনগুলোর সেই কার্যক্রম এখন অনেকটাই ম্রিয়মাণ। বদলে যাওয়া সামাজিক প্রেক্ষাপট, অর্থনৈতিক সক্ষমতার ঘাটতি এবং রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে কেন্দ্রীয় কঁচি-কাচার মেলা, খেলাঘরসহ সব সংগঠনই কমবেশি সংকটে। এসব সংগঠনে সবাই স্বেচ্ছাসেবী। কেউ কোনো আর্থিক সুবিধা নেন না। কিন্তু বিনা লাভে দেশজাতির সেবা করার মানুষ এ সমাজে কমে এসেছে। খোন্দকার মো. আসাদুজ্জামানের ভাষায়, ‘এখন কেউ যেকোনো কাজ করতে গেলে আগে ভাবে, এখান থেকে তার প্রাপ্তি কী? নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর মানুষ কই?’

কেন্দ্রীয় কঁচি-কাচার মেলার গৌরবের দিনে এর প্রায় ৪০০টি শাখা ছিল। সেখান থেকে বর্তমানে শ খানেকে নেমে এসেছে। তবু আশাবাদী কচি-কাঁচার মেলার সংগঠকেরা। সহসভাপতি আলপনা চৌধুরী বললেন, ‘অন্ধকারের মধ্যেও আমরা আশার আলো দেখি। এখনো অনেক অভিভাবক আছেন, যাঁরা চান, তাঁদের সন্তানেরা মনন, শিল্প-সংস্কৃতির মধ্যে থেকে বেড়ে উঠুক। তাই আশার আলো জ্বালিয়ে রাখতে চাই আমরা।’

ইস্কাটনের গাউসনগরে খেলাঘরের কার্যালয়ে কথা হলো সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক প্রণয় সাহার সঙ্গে। সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে তিনিও আঁকলেন নিরাশার ছবি। বললেন, ‘ধীরে ধীরে সংকুচিত হয়ে আসছে শিশুসংগঠনগুলোর কার্যক্রম। শিশুদের নিয়ে ভাবার যেন কেউ নেই। এখন পড়ালেখার বাইরে শিক্ষার্থীদের যেন আর কিছুই করার নেই! এ কেমন সমাজের দিকে এগোচ্ছে বাংলাদেশ?’

প্রণয় সাহা আক্ষেপ করে আরও বললেন, ‘তরুণদের সামনে এখন লক্ষ্য—কীভাবে অনেক অর্থসম্পদের মালিক হওয়া যায়। স্কুল-কলেজের কথা আর কী বলব। কোচিং, নিয়মিত ক্লাস—এগুলো করতেই সময় শেষ। বাচ্চারাই প্রাণ, তারা না এলে সংগঠন টিকবে কীভাবে!’

প্রসঙ্গক্রমে খেলাঘরের সাধারণ সম্পাদক বললেন সাম্প্রতিককালে দেশে সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের চর্চা সংকুচিত হওয়ার কথাও। চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের পরে অরাজনৈতিক কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের এমন কিছু সংগঠনের অনুষ্ঠানও ‘আওয়ামী লীগের দোসর’ ট্যাগ দিয়ে বন্ধ করে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে।

নৃত্য পরিচালক আতিকুর রহমান উজ্জ্বলের ঢাকায় তিনটি সংগঠন রয়েছে। পলাশীতে ভোরের পাখি নৃত্যকলা কেন্দ্র, কাটাবনে নৃত্যাঙ্গন এবং কল্যাণপুরে নৃত্যময়। তাঁর মতে, ‘শিশু সংগঠনগুলোর সেই সুদিন নেই। এখন সব বাবা-মা কোচিং সেন্টারে দৌড়াচ্ছেন। কোচিং ক্লাস শুক্র ও শনিবার বন্ধ থাকলেই কেবল খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রমগুলোতে বাচ্চারা আসতে পারবে।’

পঞ্চাশের দশকের আরেক নামী শিশু সংগঠন কেন্দ্রীয় মুকুল ফৌজ। রাজধানীর কেন্দ্রীয় মিরপুর শাখার বাইরে ময়মনসিংহ, সিরাজগঞ্জ, কুড়িগ্রাম, মুক্তাগাছা, বিরিশিরি, বরিশাল, গাজীপুর, টাঙ্গাইলসহ কয়েকটি শাখার কার্যক্রম এখনো চলছে। কেন্দ্রীয় মুকুল ফৌজের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মো. আশিকুর রহমান ভুলু বলেন, ‘শিশু সংগঠকেরা হারিয়ে যাচ্ছেন। রাষ্ট্র-সমাজ এসব সংগঠনকে গুরুত্ব দিচ্ছে না। পাগলামি ও ভালো লাগা আছে বলেই আমরা এখনো জড়িয়ে আছি।’

বর্তমান সময়ের সংকট নিয়ে আশিকুর রহমান ভুলু আরও বলেন, ‘এখন অভিভাবকেরা মনে করেন, পাঠ্যপুস্তকে সেরা নম্বর পেলেই তার সন্তান সেরা। কিন্তু একজন ভালো মানুষ হতে হলে পাঠ্যপুস্তক ছাড়াও সৃজনশীল বই পড়তে হয়, মানুষের সঙ্গে মিশতে হয়, দেশ ও জাতিকে জানতে হয়, সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে থাকতে হয়। অভিভাবকেরা বুঝতে পারছেন না, তাঁদের সন্তানেরা মানবিক হচ্ছে না, সামাজিক হচ্ছে না, দেশপ্রেমিক হচ্ছে না। এ কারণেই সমাজে এত অবক্ষয়।’

বাংলাদেশ শিশু কল্যাণ পরিষদের (বাশিকপ) আওতায় কাজ করে কেন্দ্রীয় মুকুল ফৌজ, কেন্দ্রীয় চাঁদের হাঁট, কিশোর মেলা, ফুলকুঁড়ি আসর, নবীন গোষ্ঠী, চাঁদের কণা, শিশু নিকেতন, বকুল ফুলের মেলাসহ ৪০টি শিশু সংগঠন। বাশিকপের সাধারণ সম্পাদক মো. মনিরুল আলম বলেন, ‘আমি ১৯৭৫-৭৬ সালে শিশু থাকা অবস্থায় সংগঠন করেছি। তখন শিশু সংগঠন নিয়ে সরকারের নীতিমালা ও পৃষ্ঠপোষকতা ছিল বেশ উৎসাহব্যঞ্জক। আশির দশকের শেষের দিকে যখন নেতৃত্ব দিতে আসি, তখনো সরকার বিশেষ নজর দিত। এখন তা বেশ কমে গেছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

১ হাজার টাকায় ৪ থ্রি-পিস দেওয়ার বিজ্ঞাপন দেখে নারীদের ভিড়, বেকায়দায় শোরুম কর্তৃপক্ষ

একাত্তরের হত্যাযজ্ঞে সম্পৃক্ততার অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন: জামায়াত

মার্কিন প্রেসিডেন্টের কাছে ক্ষমা চেয়েছি: কানাডার প্রধানমন্ত্রী

আ.লীগ-জাপাকে ভোটের বাইরে রাখলে গৃহযুদ্ধের সূত্রপাত হতে পারে: শামীম পাটোয়ারী

আ.লীগ নেতার মরদেহ উদ্ধার, ছেলেকে ৫ দিনের রিমান্ডে চায় পুলিশ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মাদারীপুরের শিবচর: রেলপথে জলাবদ্ধ বাড়িঘর

ইমতিয়াজ আহমেদ, শিবচর (মাদারীপুর) 
আপডেট : ০২ নভেম্বর ২০২৫, ০৮: ১৮
শিবচরের মাদবরেরচর ইউনিয়নে এভাবে বাঁশের সাঁকো পার হয়ে চলাচল করতে হয় পানিবন্দী পরিবারগুলোকে। ছবি: আজকের পত্রিকা
শিবচরের মাদবরেরচর ইউনিয়নে এভাবে বাঁশের সাঁকো পার হয়ে চলাচল করতে হয় পানিবন্দী পরিবারগুলোকে। ছবি: আজকের পত্রিকা

মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার মাদবরেরচর ইউনিয়ন। এক পাশে পদ্মা নদী, অন্য পাশে ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে। পদ্মা সেতু নির্মাণের সঙ্গে সঙ্গে এই এলাকার যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়ন হয়েছে। তবে রেল সড়ক নির্মাণের পর দুর্ভোগে পড়েছেন এই ইউনিয়নের তিনটি ওয়ার্ডের হাজার হাজার মানুষ।

স্থানীয়রা বলছেন, পদ্মা সেতু নির্মাণের পর যোগাযোগব্যবস্থাসহ নানা উন্নয়নের ছোঁয়া লাগে এই এলাকায়। তবে উন্নয়নের মুদ্রার অপর পিঠে আটকে পড়েছেন এই ইউনিয়নের তিনটি ওয়ার্ডের কয়েক হাজার মানুষ। এক্সপ্রেসওয়ের পর রেল সড়ক নির্মাণ করা হলে বন্ধ হয়ে যায় পানিপ্রবাহের পথ। মহাসড়কের সংযোগ সড়কের পাশে অনেকে আবার ভরাট করে ফেলেছে খালের অংশবিশেষ। ফলে বন্ধ হয়ে আছে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা। এ কারণে মহাসড়কের অপর পাশের গ্রামগুলো থেকে বৃষ্টির পানি বের হতে পারছে না।

পানিপ্রবাহের পথগুলো আটকে থাকায় এবং পানি নিষ্কাশন ব্যাহত হওয়ায় প্রায় সারা বছরই পানিবন্দী থাকছে এই এলাকার মানুষ। একটু বৃষ্টি হলেই মানুষের ঘরের দুয়ারে, এমনকি ঘরেও উঠে যাচ্ছে পানি। অনেককে বাঁশের সাঁকো দিয়ে আসা-যাওয়া করতে হয়। এ ছাড়াও প্রায় ১০০ হেক্টর জমি পানিতে নিমজ্জিত থাকায় হচ্ছে না ফসলও। শ্যাওলা, কচুরিপানা জমে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে ফসলি জমি।

মাদবরেরচর ইউনিয়নের ৫, ৬ ও ৭ নম্বর ওয়ার্ডে দেখা গেছে, বর্ষা মৌসুম শেষ হলেও এখানে তা রয়ে গেছে। বাড়ির আঙিনাসহ চারপাশ ডুবে আছে পানিতে। ঘর থেকে বের হতে হলে বাঁশের সাঁকোর ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে অনেককে। কোথাও পানি শুকিয়ে এলেও ভরপুর কাদা। বাড়ির আঙিনাজুড়ে স্যাঁতসেঁতে ভেজা মাটি। রাস্তা থেকে ঘরে যেতে অনেকে বাঁশ-কাঠ দিয়ে ছোট সেতু তৈরি করে নিয়েছে। এরপরও কোথাও কোথাও পানি মাড়িয়ে চলাচল করতে হচ্ছে।

রেললাইনের কালভার্টের উচ্চতা বেশি হওয়ায় পানি নামতে পারছে না। ছবি: আজকের পত্রিকা
রেললাইনের কালভার্টের উচ্চতা বেশি হওয়ায় পানি নামতে পারছে না। ছবি: আজকের পত্রিকা

স্থানীয়রা বলছেন, বছরের ৮-৯ মাস এখানে পানি থাকে। বৃষ্টি নামলেই পানিতে ভরে যায় চারপাশ। শীত মৌসুমে পানি কিছুটা শুকিয়ে যেতেই বৃষ্টির কারণে আবারও ডুবে যায়। পানি সরে যাওয়ার সব পথ বন্ধ থাকায় বিগত ৫-৭ বছরই এই ভোগান্তি নিত্যসঙ্গী এখানকার মানুষের। মাদবরেরচর ইউনিয়নের বাখরেরকান্দি থেকে শুরু করে মহাসড়কের একপাশজুড়ে তিনটি ওয়ার্ডের ফসলি জমি এখন অনেকটা হাওরে পরিণত হয়েছে। সারা বছরই পানিতে ডুবে থাকে এই এলাকার পথঘাট, ফসলি জমি, বাড়ির আঙিনা।

মাদবরেরচর ইউনিয়নের চরকান্দি এলাকার বাসিন্দা হাবিবুর রহমান বলেন, ‘এক্সপ্রেসওয়ের কয়েকটি স্থানে পানিপ্রবাহের ব্যবস্থা থাকলেও রেল সড়ক নির্মাণের পর আন্ডারপাসের ওপর প্রান্তে মাটি ভরাট করে রাখায় পানিপ্রবাহের পথ বন্ধ হয়ে আছে। শুধু বৃষ্টির পানিতেই মাদবরেরচর ইউনিয়নের ৫, ৬ ও ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাখরেরকান্দি, চরকান্দিসহ অসংখ্য গ্রামের মানুষ এখন জলাবদ্ধতার ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। একসময়ের ফসলি জমি যেন পরিণত হয়েছে বিল বা হাওরে। আমাদের দুর্ভোগের শেষ নেই।’

আরেক বাসিন্দা মো. মাসুদ বলেন, ‘এই দুর্ভোগ থেকে কবে পরিত্রাণ পাব? আদৌ পাব কি না, জানা নেই। আমাদের এখানে শীত মৌসুমে ফসলি খেতে শাক-সবজিসহ নানা জাতের ফসল হতো। এখন এসব খেতে সারা বছরই পানি থাকে। জমি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে বেশ কয়েকটি জায়গায় পানিপ্রবাহের ব্যবস্থা আছে। তবে রেল সড়ক করার পর পানি বের হওয়ার জন্য যে স্থানগুলো করা হয়েছিল, তার অপর পাশেই মাটির স্তূপ দিয়ে ভরাট করা। পানি বের হয়ে কোথাও যাওয়ার পথ নেই। এ ছাড়া আমাদের এখানকার বড় বড় খালের মুখ ভরাট করে আটকে ফেলা হয়েছে। ফলে আমরা কয়েক হাজার বাসিন্দা ৫-৭ বছর পানিবন্দী হয়ে রয়েছি। ফসল উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। জীবনযাত্রা খুবই দুর্বিষহ এখানে।’

শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এইচ এম ইবনে মিজান বলেন, ‘আমি ওই এলাকা পরিদর্শন করেছি। পানিপ্রবাহের পথ বন্ধ থাকায় বেশ দুর্ভোগ ওখানে। রেল সড়কের নিচ দিয়ে পানি সরে যাওয়ার কথা। ওই পথই বন্ধ রয়েছে। এ বিষয়টি নিয়ে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

১ হাজার টাকায় ৪ থ্রি-পিস দেওয়ার বিজ্ঞাপন দেখে নারীদের ভিড়, বেকায়দায় শোরুম কর্তৃপক্ষ

একাত্তরের হত্যাযজ্ঞে সম্পৃক্ততার অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন: জামায়াত

মার্কিন প্রেসিডেন্টের কাছে ক্ষমা চেয়েছি: কানাডার প্রধানমন্ত্রী

আ.লীগ-জাপাকে ভোটের বাইরে রাখলে গৃহযুদ্ধের সূত্রপাত হতে পারে: শামীম পাটোয়ারী

আ.লীগ নেতার মরদেহ উদ্ধার, ছেলেকে ৫ দিনের রিমান্ডে চায় পুলিশ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত