Ajker Patrika

গণপিটুনিতে নিহত সেই রূপলালের মেয়ের বিয়ে আজ

রংপুর প্রতিনিধি
রূপলালের বাড়ির সামনে বিয়ের গেট সাজানো হয়েছে। ছবি: আজকের পত্রিকা
রূপলালের বাড়ির সামনে বিয়ের গেট সাজানো হয়েছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

তিন মাস আগে মেয়ের বিয়ের দিন ঠিক করার জন্য পথ ভুলে যাওয়া ভাগনি জামাইকে এগিয়ে আনতে গিয়ে মবের শিকার হয়ে গণপিটুনিতে প্রাণ হারান রূপলাল রবিদাস। সেই শোক মনে নিয়েই আজ রোববার তাঁর বড় মেয়ের বিয়ে হচ্ছে।

রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার কুর্শা ইউনিয়নের ঘনিরামপুর গ্রামে রূপলালের বাড়িতে আজ সকাল থেকে চলছে ব্যস্ততা। সড়কে রঙিন গেট, উঠানে বাঁশের মাচা, মণ্ডপ, রঙিন কাপড়ের প্যান্ডেল, ধোঁয়া উঠছে রান্নার হাঁড়ি থেকে। বাইরে থেকে দেখলে মনে হয়, আনন্দঘন উৎসব, কিন্তু একটু কাছে গেলে বোঝা যায়—এই উৎসবের ভেতর পরিবারের সদস্যদের মনে লুকিয়ে রয়েছে রূপলালকে হারানোর গভীর ব্যথা।

রূপলালের পরিবার ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানায়, গত ১০ আগস্ট রূপলালের বড় মেয়ে নুপুর রানীর বিয়ের দিন ঠিক করার কথা ছিল মিঠাপুকুর উপজেলার শ্যামপুর এলাকার এক তরুণের সঙ্গে। এ জন্য ৯ আগস্ট মিঠাপুকুর থেকে নিজের ভ্যান চালিয়ে আত্মীয় রূপলাল দাসের বাড়ির উদ্দেশে রওনা হন ভাগনি জামাই প্রদীপ দাস। কিন্তু গ্রামের ভেতর দিয়ে রাস্তা না চেনায় প্রদীপ দাস সয়ার ইউনিয়নের কাজীরহাট এলাকায় এসে রূপলালকে ফোন করেন। রূপলাল সেখানে যান। তাঁরা দুজনে ভ্যানে চড়ে রূপলালের বাড়ি ঘনিরামপুর গ্রামের দিকে রওনা হন। রাত ৯টার দিকে তারাগঞ্জ-কাজীরহাট সড়কের বটতলা এলাকায় পৌঁছালে ভ্যান চোর সন্দেহে তাঁদের দুজনকে থামান স্থানীয় কয়েকজন। এরপর সেখানে লোক জড়ো হতে থাকে। একপর্যায়ে মব তৈরি করে রূপলাল দাস ও প্রদীপ দাসকে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় রূপলালের স্ত্রী হত্যা মামলা করলে পুলিশ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠায়।

বাবার মৃত্যুর পর নুপুর রানীর বিয়ে বন্ধ হয়ে যায়। রূপলালকে হারিয়ে পুরো পরিবার দিশেহারা হয়ে পড়ে। তবে রূপলালের পরিবার জানিয়েছে, মেয়ের বিয়ের জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এক লাখ, তারাগঞ্জ হাটের ব্যবসায়ীরা ৭১ হাজার, উপজেলা বিএনপির পক্ষ থেকে ৭৫ হাজার, একটি সংগঠন থেকে এক লাখ টাকা টাকা পেয়েছে তারা। এ ছাড়া নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুজন ব্যক্তি রূপলালের ছেলে জয় রবিদাস ও ছোট মেয়ে রুপার পড়াশোনার দায়িত্ব নিয়েছেন। তাদের সমাজসেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমেও শিক্ষাবৃত্তি দেওয়া হচ্ছে। ওই টাকায় তারা পড়াশোনা করছে।

রূপলালের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ঘরের ভেতরে কনে নুপুর রবিদাস বসে আছেন বিয়ের শাড়িতে। মুখে বিয়ের সাজ, কিন্তু চোখ দুটো লাল। পাশে মা ভারতী রানী নীরবে অতিথি আপ্যায়নের প্রস্তুতি সামলাচ্ছেন।

রূপলালের স্ত্রী ভারতী রানী বলেন, ‘বেটির বিয়া ঠিক করার জন্য জামাইকে আনতে যাওয়া আমার নির্দোষ স্বামীক মিথ্যা অপবাদ দিয়া মারি ফেলছে। আজ বেটির বিয়া, ওর বাপ নাই চিন্তা করতেই বুকটা ফাটি যাওছে (যাচ্ছে)। ওমাক (রূপলাল) ছাড়া পুরা বাড়ি ফাঁকা ফাঁকা লাগেছে। কষ্টে ভেতরটা ভাঙি যাওছে।’

নুপুর বলেন, ‘বাবার খুব ইচ্ছে ছিল ধুমধাম আয়োজন করে আমার বিয়ে দেবে। এখন সব আয়োজন হচ্ছে, কিন্তু আমার মনে কেবল বাবার মুখটা ভাসে। বাবা নেই, কে আমাকে আশীর্বাদ দিবে। হত্যাকারীরা এখনো ধরা পড়েনি, হাটবাজারে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমার বাবাকে যারা মেরেছে, আমি তাদের বিচার চাই।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুবেল রানা বলেন, ‘রূপলালের মেয়ের বিয়ের জন্য এক লাখ টাকা দেওয়া হযেছে। ছেলে ও ছোট মেয়ের জন্য শিক্ষাবৃত্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে তারাগঞ্জ বাজারে রূপলালের ছেলের জন্য একটি দোকান দেওয়া হবে। আমরা সব সময় তাদের পাশে আছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...