Ajker Patrika

চাঁপাইনবাবগঞ্জে ডেঙ্গুর প্রকোপ এখন গ্রামেও

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি
আপডেট : ১৯ জুলাই ২০২৫, ১৮: ৫৪
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ডেঙ্গু রোগী। ছবি: আজকের পত্রিকা
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ডেঙ্গু রোগী। ছবি: আজকের পত্রিকা

দিন যত গড়াচ্ছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ডেঙ্গু পরিস্থিতি তত খারাপের দিকে যাচ্ছে। এক মাস আগে শুধু শহরকেন্দ্রিক আক্রান্তের সংখ্যা দেখা গেলেও এখন শহর থেকে গ্রামে অব্যাহত রয়েছে ডেঙ্গুর সংক্রমণ। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও ২০ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে জেলা হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছর ভর্তি রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ১৪৩ জন। আজ শনিবার (১৯ জুলাই) সকালে সিভিল সার্জন এ কে এম শাহাবউদ্দিন তথ্যগুলো নিশ্চিত করেছেন।

চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, জুনের চেয়ে জুলাই মাসে ডেঙ্গুর চোখরাঙানি বেড়েছে। গত মাসে দিনে গড়ে ১৫ থেকে ১৬ জন রোগী আক্রান্ত ছিল। সেখানে চলতি মাসের ১৭ দিনের হিসাবে, প্রতিদিন গড়ে আক্রান্ত ২৮ জন। অর্থাৎ জুন মাসের চেয়ে চলতি মাসে আক্রান্তের হার দ্বিগুণ। তবে আক্রান্তের বাস্তব চিত্র আরও বেশি; যেগুলো সরকারি পরিসংখ্যানে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে না।

এদিকে চলতি বছর এখন পর্যন্ত হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় কোনো রোগী মারা না গেলেও রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জেলা থেকে রেফার করা দুই এবং বাড়িতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও একজন রোগী মারা গেছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গত ২৪ ঘণ্টায় ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে ৪ জন রোগীকে। বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৬৩ জন রোগী।

পৌর এলাকার বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন বলেন, ডেঙ্গু প্রতিনিয়ত বাড়ছে। একটি পরিবারের একাধিক সদস্য আক্রান্ত হচ্ছে। কিন্তু উপজেলা, পৌর ও জেলা প্রশাসন কার্যকর কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় সংক্রমণ বেড়েই চলেছে। তাঁরা মাইকিংয়ে প্রচার ও জুমা মসজিদে সচেতনতামূলক প্রচারণায় সীমাবদ্ধ রেখেছে।

জেলা শহরের শিবতলা এলাকার বাসিন্দা মিঠুন নন্দী বলেন, ‘আমি এবং আমার স্ত্রী জেলা সদর হাসপাতালে তিন দিন ধরে ভর্তি রয়েছি। আজকে শনিবার বেলা ১টা পর্যন্ত ছাড়পত্র পাইনি। তবে চিকিৎসক বলছেন, ছাড়পত্র দেবেন।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক নারী রোগী বলেন, ‘চাঁপাইনবাবগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেলা সদর হাসপাতালে ডেঙ্গু পরীক্ষা করতে গেছিলাম। তাঁরা বলেছেন, বাইরে পরীক্ষা করিয়ে আসেন। বাইরে না করে সেখানে করার কথা বলতেই তাঁরা বিভিন্ন অজুহাত দেখাচ্ছেন।’

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক আব্দুস সামাদ বলছেন, ডেঙ্গু রোগীদের সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে চিকিৎসার জন্য সরকারি হাসপাতালগুলোতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা পাচ্ছেন রোগীরা। তবে ডেঙ্গু ম্যানেজমেন্টে সরকারের আলাদা করে বাড়তি লোকবল না থাকায় রোগীদের সেবা দিতে তাঁদের কিছুটা হিমশিম খেতে হচ্ছে।

এ ছাড়া জেলা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মো. মাসুদ পারভেজ বলেন, সাধারণত জুন থেকে জুলাই মাসে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ে। সে ধারাবাহিকতায় চলতি মাসে রোগী ভর্তির সংখ্যা বেড়েছে। তবে বেশির ভাগ রোগীই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরছে। এ ছাড়া ক্রিটিক্যাল রোগীদের রাজশাহীতে রেফার করা হচ্ছে।

সিভিল সার্জন এ কে এম শাহাবউদ্দিন বলেন, ‘ডেঙ্গু এখনো নিয়ন্ত্রণে আসেনি, বরং আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। জেলা তথ্য অফিসের সহায়তায় মাইকিংসহ কার্যক্রম চালু আছে। প্রতিটি মসজিদে জুমার দিন ইমামদের মাধ্যমে মুসল্লিদের মধ্যে সচেতনতামূলক প্রচারণাও চালানো হচ্ছে। নিজ নিজ অবস্থান থেকে সচেতনতা অবলম্বন করলে সংক্রমণ রোধ করা সম্ভব। এ জন্য এডিস মশার বংশবিস্তার রোধ করতে হবে। পানি জমিয়ে রাখা যাবে না, বাসাবাড়ি এবং বাড়ির আঙিনা, ড্রেনেজ ব্যবস্থা, জলাশয় পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।’

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নুরুল ইসলাম বলেন, ‘স্বাস্থ্য বিভাগ, উপজেলা প্রশাসন, পৌর প্রশাসন ও জেলা প্রশাসনসহ সমন্বিত একাধিক সভা করেছি। সেখানে ডেঙ্গু সংক্রামণ রোধে স্বাস্থ্য বিভাগ ও পৌরসভাকে প্রয়োজন পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে।’

চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা মামুন অর-রশীদ বলেন, পৌর এলাকায় মাইকিং প্রচার, সব মসজিদে প্রচারণা, ১০ হাজার ডেঙ্গু সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ, ছয়টি ফগার মেশিনে ধোঁয়া স্প্রে এবং ১৫টি মেশিন দিয়ে এডিস লার্ভা নষ্ট করা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভারতের সঙ্গে আফগানিস্তান-শ্রীলঙ্কাও ঢাকায় এসিসির সভা বর্জন করল

গাড়ি কেনার টাকা না দেওয়ায় স্ত্রীকে মারধর, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের বিরুদ্ধে মামলা

মুক্তি পেয়ে আ.লীগ নেতার ভিডিও বার্তা, বেআইনি বলল বিএনপি

সালাহউদ্দিনকে নিয়ে বিষোদ্‌গার: চকরিয়ায় এনসিপির পথসভার মঞ্চে বিএনপির হামলা–ভাঙচুর

শিবরাত্রিতে মাংস খাওয়ায় বাংলাদেশি শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করল দিল্লির সার্ক বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত