Ajker Patrika

ছেলে খুনের ঘটনায় মামলা করলেন বিচারক

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
আপডেট : ১৪ নভেম্বর ২০২৫, ১৮: ২৫
ছেলের লাশ নিয়ে জামালপুরে গ্রামের বাড়ির উদ্দেশে বাবা। ছবি: আজকের পত্রিকা
ছেলের লাশ নিয়ে জামালপুরে গ্রামের বাড়ির উদ্দেশে বাবা। ছবি: আজকের পত্রিকা

রাজশাহী মহানগর দায়রা জজ আব্দুর রহমান তাঁর ছেলে তাওসিফ রহমান সুমনকে (১৬) খুনের ঘটনায় মামলা করেছেন। শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) দুপুরে তিনি মামলার এজাহারে সই দিয়ে ছেলের লাশ নিয়ে জামালপুরের গ্রামের বাড়ি রওনা হন। পরে রাজপাড়া থানা-পুলিশ মামলাটি রেকর্ড করে।

রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) মুখপাত্র গাজিউর রহমান বিকেলে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

আরএমপির মুখপাত্র বলেন, বিচারক নিজে বাদী হয়ে মামলা করেছেন। মামলার একমাত্র আসামি লিমন মিয়া (৩৪)। তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। পুলিশ হেফাজতে হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসা চলছে। চিকিৎসা শেষে তাঁকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হবে।

আসামি লিমন মিয়ার বাড়ি গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার মদনেরপাড়া ভবানীগঞ্জ গ্রামে। তাঁর বাবার নাম এস এম সোলায়মান শেখ। তিনি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক সদস্য ও ফুলছড়ি উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক। লিমন সেনাবাহিনীতে সৈনিক পদে চাকরি করতেন। ২০১৮ সালে তাঁর চাকরি চলে যায়। এরপর থেকে তিনি নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন।

কয়েক বছর আগে বিয়ে করেছিলেন লিমন। তবে সংসার টেকেনি। বিচারক আব্দুর রহমানের স্ত্রী তাসমিনা নাহার লুসীর (৪৪) সঙ্গে তাঁর পূর্বপরিচয় ছিল। তাঁর কাছ থেকে লিমন টাকা নিতেন।

পুলিশের ভাষ্য, টাকা দেওয়া বন্ধ করে দিলে নানাভাবে ব্ল্যাকমেইল করে আসছিলেন লিমন। দিয়েছিলেন প্রাণনাশের হুমকিও। এ নিয়ে ৬ নভেম্বর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছিলেন তাসমিনা।

বিচারক আব্দুর রহমান এক বছর আগে শ্রম আদালতের বিচারক হয়ে রাজশাহী আসেন। গত মাসে তাঁকে মহানগর দায়রা জজ হিসেবে পদায়ন করা হয়। রাজশাহী আসার পর নগরের ডাবতলা এলাকায় বাসাভাড়া নিয়েছিলেন। সেখানে স্ত্রী ও একমাত্র ছেলে তাওসিফকে নিয়ে থাকতেন তিনি।

বৃহস্পতিবার বেলা আড়াইটায় এই বাসায় যান লিমন। সেখানে তাওসিফকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়। জখম হয়ে হাসপাতালে ভর্তি চিকিৎসাধীন তাসমিনা নাহারও। এ ছাড়া ধস্তাধস্তিতে হামলাকারী নিজেও আহত হন। পরে তিনজনকেই ভবনের অন্য ফ্ল্যাটের বাসিন্দারা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে তাওসিফকে মৃত ঘোষণা করা হয়।

শুক্রবার সকালে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে তাওসিফের লাশের ময়নাতদন্ত হয়। ময়নাতদন্ত করেন ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক কফিল উদ্দিন ও একই বিভাগের প্রভাষক শারমিন সোবহান কাবেরী। ময়নাতদন্ত শেষে মর্গের ভেতরে ঢুকে ছেলের লাশ একনজর দেখতে যান বাবা বিচারক আবদুর রহমান। এ সময় তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন।

রামেকের ফরেনসিক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জানান, তাওসিফের ডান ঊরু, ডান পা ও বা বাহুতে ধারালো ও চোখে অস্ত্রের আঘাত পাওয়া গেছে। এই তিনটি জায়গায় রক্তনালি আছে। সেগুলো কেটে গিয়েছিল। এ কারণে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়। অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণও ছিল শরীরে। তাঁরা মনে করছেন, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে তার মৃত্যু হয়েছে।

পুলিশের সুরতহাল প্রতিবেদনে তাওসিফের গলায় কালশিরা দাগ রয়েছে বলে বলা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক বলেছেন, নরম কাপড় দিয়ে শ্বাসরোধের কারণে এই দাগটি হতে পারে। তবে এটি মৃত্যুর প্রধান কারণ নয়। ধারালো অস্ত্রের আঘাত ও শ্বাসরোধে হত্যার চেষ্টা একই সময়ে হয়েছে বলেও জানান ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক।

ময়নাতদন্তের পর কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের রাজশাহী সেন্টারের সদস্যরা রামেক হাসপাতালের নির্ধারিত কক্ষে লাশের গোসল করিয়ে দেন। পরে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের ফ্রিজিং অ্যাম্বুলেন্সেই লাশ নিয়ে যাওয়া হয়। নিহত তাওসিফ রাজশাহী গভ. ল্যাবরেটরি স্কুলের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল।

আরও পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ