Ajker Patrika

পাবনায় বিএনপি-জামায়াত দফায় দফায় সংঘর্ষ, কার্যালয় ও ২৩ মোটরসাইকেল ভাঙচুর

পাবনা প্রতিনিধি
আপডেট : ১৫ মে ২০২৫, ২২: ৫৭
আটঘরিয়ায় বিএনপি ও জামায়াতের সংঘর্ষে আহত একজনকে হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে। ছবি: আজকের পত্রিকা
আটঘরিয়ায় বিএনপি ও জামায়াতের সংঘর্ষে আহত একজনকে হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

পাবনার আটঘরিয়ায় দেবোত্তর ডিগ্রি কলেজের অভিভাবক সদস্যপদের মনোনয়ন ফরম তোলা নিয়ে বিএনপি ও জামায়াতের নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে।

এ সময় উভয় সংগঠনের দলীয় কার্যালয় ও ২৩টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়। এ ঘটনায় উভয় পক্ষের আহত পাঁচজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দফায় দফায় এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, উপজেলার দেবোত্তর ডিগ্রি অনার্স কলেজের ম্যানেজিং কমিটির অভিভাবক সদস্য নির্বাচনের জন্য কলেজ থেকে তফসিল ঘোষণা করা হয়। অভিভাবক সদস্যপদে মনোনয়নপত্র উত্তোলনের শেষদিন ছিল আজ। এদিন দুপুরে উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আছিম উদ্দিন অভিভাবক সদস্যপদের মনোনয়নপত্র উত্তোলন করেন।

তাঁর সঙ্গে আরও দুজন বিএনপি-সমর্থিত অভিভাবকও মনোনয়নপত্র উত্তোলন করেন। এর কিছুক্ষণ পর জামায়াতে ইসলামীর উপজেলা আমির নকিবুল্লাহ, সাবেক আমির নাসির, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ওয়ালিউল্লাহসহ বেশ কয়েকজন গিয়ে তাঁদের মনোনীত একজনের মনোনয়নপত্র চান।

এ সময় বিএনপির পক্ষ থেকে বাধা দিলে নেতা-কর্মীদের মধ্যে কথা-কাটাকাটি ও ধস্তাধস্তি হয়। এ সময় জামায়াতের একজন মারধরের শিকার হন। খবর পেয়ে উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে জামায়াত, শিবির ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা দেবোত্তর বাজারে জড়ো হন। তাঁরা বিক্ষোভ-মিছিল নিয়ে দেবোত্তর বাজার ঘুরে উপজেলা বিএনপির কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেন।

আটঘরিয়ায় বিএনপি ও জামায়াতের সংঘর্ষ। ছবি: আজকের পত্রিকা
আটঘরিয়ায় বিএনপি ও জামায়াতের সংঘর্ষ। ছবি: আজকের পত্রিকা

পরে জামায়াতের নেতা-কর্মীরা জোহরের নামাজ পড়তে মসজিদে প্রবেশ করেন। ওই সময় বিএনপির নেতা-কর্মীরা বিক্ষোভ-মিছিল বের করে বাজার প্রদক্ষিণ করার পর উপজেলা জামায়াতের কার্যালয়ে পাল্টাহামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেন।

পরে সন্ধ্যায় লাঠিসোঁটা, লোহার পাইপ নিয়ে জামায়াত-শিবির মিছিল বের করলে বিএনপি নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ভাঙচুর করা হয় বিএনপি অফিস ও আশপাশের কমপক্ষে ২৩টি মোটরসাইকেল। এতে উভয় পক্ষের কয়েকজন আহত হন। অবস্থা বেগতিক ভেবে মুহূর্তের মধ্যে বাজারের সব দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। খবর পেয়ে পুলিশ এসে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা চালায়।

আটঘরিয়া দেবোত্তর বাজারে বিএনপি ও জামায়াতের সংঘর্ষে ভাঙচুর করা মোটরসাইকেল। ছবি: আজকের পত্রিকা
আটঘরিয়া দেবোত্তর বাজারে বিএনপি ও জামায়াতের সংঘর্ষে ভাঙচুর করা মোটরসাইকেল। ছবি: আজকের পত্রিকা

আহত ব্যক্তিরা হলেন বিএনপির মামুন (৪২), কামরুল ইসলাম (৩৮), আছিম উদ্দিন (৫৫), রতন মোল্লা (৩৮) ও জামায়াতের সাইদুল ইসলামের (৪২) নাম জানা গেছে। বাকিদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি। আহত ব্যক্তিরা বিভিন্ন ক্লিনিক হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

এ বিষয়ে উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব মনোয়ার হোসেন আলম বলেন, ‘জামায়াতের নেতা-কর্মীরা অতর্কিত আমাদের দলীয় অফিসে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করেছে। কলেজে তাদের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি বা জোর করে বের করে দেওয়ার ঘটনা ঘটেনি। জামায়াতের নেতারা বানিয়ে বানিয়ে বলছে।’

আটঘরিয়া দেবোত্তর বাজারে বিএনপি ও জামায়াতের সংঘর্ষে ভাঙচুর করা চেয়ার–টেবিল। ছবি: আজকের পত্রিকা
আটঘরিয়া দেবোত্তর বাজারে বিএনপি ও জামায়াতের সংঘর্ষে ভাঙচুর করা চেয়ার–টেবিল। ছবি: আজকের পত্রিকা

কী কারণে ভাঙচুর করেছে, জানতে চাইলে মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘এখানে পুলিশসহ সবাই বসছে। এখন ব্যস্ত আছি, পরে কথা বলব।’

উপজেলা জামায়াতের আমির মো. নকিবুল্লাহ বলেন, ‘দেবোত্তর ডিগ্রি অনার্স কলেজের ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচনে অভিভাবক সদস্যপদের মনোনয়নপত্র জামায়াতের পক্ষ থেকে তুলতে গেলে বিএনপির লোকজন বাধা দেয়। সেই সঙ্গে তারা আমাদের আটঘরিয়া পৌর জামাতের আমিরকে মারধর করে।

আটঘরিয়া দেবোত্তর বাজারে বিএনপি ও জামায়াতের সংঘর্ষে ভাঙচুর করা মোটরসাইকেল। ছবি: আজকের পত্রিকা
আটঘরিয়া দেবোত্তর বাজারে বিএনপি ও জামায়াতের সংঘর্ষে ভাঙচুর করা মোটরসাইকেল। ছবি: আজকের পত্রিকা

আসরের নামাজ আদায়কালে বিএনপির লোকজন মসজিদের সামনে গুলি ও বোমা ফাটালে আমরা নামাজ শেষে তাদের প্রতিহত করতে ধাওয়া দিয়েছি। পরে মিছিল থেকে অনেক মুসল্লি ছিল তাদের মধ্যে হয়তো কেউ বিএনপির অফিস ভাঙতে পারে। সন্ধ্যার পরে আবার বিএনপি নেতা-কর্মীরা আমাদের অফিস ভাঙচুর করেছে।’

এ বিষয়ে আটঘরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শফিকুজ্জামান বলেন, উভয় পক্ষ উভয় পক্ষের অফিস ভাঙচুর করেছে। কিছুটা সংঘর্ষ হয়েছে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি শান্ত করে। উত্তেজনা বিরাজ করায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত কোনো পক্ষ অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ দিলে তদন্তসাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জানতে চাইলে দেবোত্তর ডিগ্রি অনার্স কলেজের অধ্যক্ষ মো. সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘অভিভাবক সদস্য নির্বাচনে মনোনয়নপত্র সংগ্রহের আজ ছিল শেষ দিন। বিএনপির পক্ষ থেকে তিনজন উত্তোলন করলেও জামায়াতের লোকজন তুলতে এলে তাদের বাধা দেওয়া হয়েছে। কলেজ ক্যাম্পাসের বাইরে কী হয়েছে, সেটা আমার জানা নেই।’ তিনি বলেন, নিয়মতান্ত্রিকভাবেই কলেজের এই নির্বাচন সম্পন্ন করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত