Ajker Patrika

ইতালি যাওয়ার পথে তীব্র শীতে সাগরেই মৃত্যু দুই যুবকের, পরিবারে শোকের মাতম

মাদারীপুর, প্রতিনিধি
জাফর ব্যাপারী ও  সিরাজুল হাওলাদার  ছবি: সংগৃহীত
জাফর ব্যাপারী ও সিরাজুল হাওলাদার ছবি: সংগৃহীত

নৌকায় চড়ে অবৈধভাবে লিবিয়া থেকে ইতালি যাওয়ার পথে তীব্র শীতে কাবু হয়ে সাগরেই মারা গেছেন মাদারীপুরের দুই যুবক। গতকাল মঙ্গলবার রাতে তাঁদের মৃত্যুর খবর জানতে পেরেছে পরিবার। এর পর থেকে তাঁদের পরিবারে চলছে শোকের মাতম।

জাফর বেপারীর মৃত্যুর খবর শুনে পরিবারের আহাজারি। ছবি : আজকের পত্রিকা
জাফর বেপারীর মৃত্যুর খবর শুনে পরিবারের আহাজারি। ছবি : আজকের পত্রিকা

মৃত যুবকেরা হলেন মাদারীপুর সদর উপজেলার ধুরাইল ইউনিয়নের চর বাজিতপুর গ্রামের লাল মিয়া ব্যাপারীর ছেলে জাফর ব্যাপারী (৪৫) এবং একই গ্রামের হামেদ আলী হাওলাদারের ছেলে সিরাজুল হাওলাদার (২৫)।

স্থানীয় ও মৃত যুবকদের পরিবার সূত্রে গেছে, গত ১ সেপ্টেম্বর ইতালি যাওয়ার জন্য মাদারীপুর ছাড়েন জাফর ব্যাপারী ও সিরাজুল হাওলাদার। কয়েকটি দেশ ঘুরে লিবিয়ায় পৌঁছান তাঁরা। লিবিয়ার দালালদের মাধ্যমে গত ১৪ অক্টোবর ইঞ্জিনচালিত নৌকায় ওঠেন জাফর, সিরাজুলসহ অর্ধশত যুবক। একপর্যায়ে সাগরে নৌকার তেল ফুরিয়ে যায়। পরে নৌকাটি ভাসতে থাকে সাগরে। সপ্তাহখানেক নৌকায় ভাসতে থাকার পর তীব্র শীতে সাগরেই মৃত্যু হয় জাফর, সিরাজুলসহ কয়েকজন যুবকের। প্রথমে তাঁদের মৃত্যুর খবর দালালেরা গোপন রাখেন। গতকাল রাতে লিবিয়ার দালালদের মাধ্যমে দুই যুবকের মৃত্যুর খবর জানতে পারে তাঁদের পরিবার।

মৃত যুবকদের পরিবার বলছে, মানব পাচারকারী চক্রের সদস্য চর বাজিতপুর গ্রামের চান্দু সরদারের ছেলে লোকমান সরদার। কয়েক মাস আগে লোকমানের দুই ছেলে সুজন ও সুমন অবৈধভাবে ইতালি যান। এর পর থেকে তিনি এলাকার মানুষকে খুব সহজে ইতালি নেওয়ার প্রলোভন দেখাতে থাকেন। তাঁর কথায় বিশ্বাস করে জাফর ও সিরাজুলের পরিবার তাঁকে ৩০ লাখ টাকা দেয়। কথা ছিল, কোনো ধরনের ঝুঁকি ছাড়াই জাফর ও সিরাজুলকে সরাসরি ইতালি পাঠাবেন লোকমান। সাগরপথে ইতালি পাঠানোর জন্য জাফর, সিরাজুলসহ অন্যদের ছোট নৌকায় তুলে দেন দালালেরা। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাগর পাড়ি দিয়ে ইতালিতে যাওয়ার পথে জাফর, সিরাজুল প্রাণ হারিয়েছেন।

মৃত জাফরের বাবা লাল মিয়া ব্যাপারী বলেন, ‘জাফরের এই মৃত্যু কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না। দালাল লোকমান একসঙ্গে আমাদের কাছ থেকে ১৫ লাখ টাকা নিয়েছে। টাকা নেওয়ার সময় দালাল বলেছিল, কোনো ঝুঁকি ছাড়াই জাফরকে ইতালি পৌঁছে দিবেন। কিন্তু সাগরেই মৃত্যু হলো আমার ছেলে জাফর আর ওর সঙ্গে থাকা সিরাজুলের। এই ঘটনায় জড়িত লোকমান ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।’

এদিকে দুজনের মৃত্যুর খবর জানাজানি হওয়ার পর একই গ্রামের অভিযুক্ত দালাল লোকমান সরদার গা ঢাকা দিয়েছেন। তবে লোকমানের ছোট ভাইয়ের স্ত্রী ঝর্ণা আক্তার বলেন, ‘আমার ভাশুর কোনো দালাল নন, তাঁর দুই ছেলে ইতালি যাওয়ার পর এলাকার অনেকেই তাঁর কাছে আসেন। এতে তাঁর কোনো দোষ নেই। অন্য এক বড় দালাল আছেন, তিনিই সব জানেন। তাঁর পরিচয় আমরা জানি না। তবে লোকমান ভাই জানেন।’

মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে ইতালি যাওয়ার পথে লিবিয়ায় দুই যুবকের মৃত্যুর খবর জানতে পেরেছি। তবে এখনো তাঁদের পরিবার থেকে কেউ কিছু জানায়নি। এ ঘটনায় মৃত যুবকদের পরিবারের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ