Ajker Patrika

গোপালগঞ্জে সংঘর্ষ: পুলিশের করা ৪ হত্যা মামলায় আসামি ৫,৪০০

গোপালগঞ্জ সংবাদদাতা
গোপালগঞ্জের ঘটনার বিষয়ে গোয়েন্দা তথ্য ছিল কিন্তু ঘটনা এত বড় হবে, সে তথ্য ছিল না। ছবি: সংগৃহীত
গোপালগঞ্জের ঘটনার বিষয়ে গোয়েন্দা তথ্য ছিল কিন্তু ঘটনা এত বড় হবে, সে তথ্য ছিল না। ছবি: সংগৃহীত

গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পদযাত্রাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় এ পর্যন্ত পাঁচজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনার চার দিন পর সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত ছাড়াই পৃথক চারটি হত্যা মামলা করেছে পুলিশ। সবকটি মামলায় নিহত ব্যক্তিরা আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী ও দুষ্কৃতকারীদের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

অপরদিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে মারা যাওয়া গুলিবিদ্ধ রমজান মুন্সির বিষয়ে একটি হত্যা মামলা করা হবে বলে জানা গেছে।

গতকাল শনিবার গভীর রাতে সদর থানা-পুলিশের চারজন উপপরিদর্শক (এসআই) বাদী হয়ে গোপালগঞ্জ সদর থানায় পৃথক চারটি হত্যা মামলা করেন। তিনটি মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ জনকে ও একটি মামলায় আসামি করা হয়েছে ৮০০ থেকে ৯০০ জনকে।

গোপালগঞ্জ সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. আইয়ুব হোসেন বাদী হয়ে রমজান কাজী নিহতের ঘটনায় মামলা করেন। এ মামলায় আসামি করা হয়েছে ৮০০ থেকে ৯০০ জনকে।

মামলায় তিনি উল্লেখ করেছেন, গত বুধবার (১৬ জুলাই) এনসিপির শান্তিপূর্ণ সমাবেশ শেষে পৌর পার্ক থেকে দুপুরে মাদারীপুরের উদ্দেশে গাড়িবহর নিয়ে রওনা দিয়ে নেতারা গোপালগঞ্জ শহরের এসকে সালেহিয়া মাদ্রাসার কাছে পৌঁছালে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী এবং দুষ্কৃতকারীরা গাড়িবহরে দেশীয় অস্ত্র ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে হামলা করে। পুলিশ, সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এতে বাধা দেয়। হামলাকারীরা ক্ষিপ্ত হয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর গুলি চালায়। এ সময় রমজান কাজী (১৭) গুলিবিদ্ধ হয়ে মারাত্মক আহত হয়। স্থানীয় বাসিন্দারা তাকে উদ্ধার করে গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

দীপ্ত সাহা (২৭) নিহতের ঘটনায় সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. শামীম হোসেন বাদী হয়ে ১৯ জুলাই গভীর রাতে অজ্ঞাতনামা ১ হাজার ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে আসামি করে ওই থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন।

মামলায় তিনি উল্লেখ করেছেন, গত বুধবার এনসিপির গাড়িবহরে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী এবং দুষ্কৃতকারীদের হামলার ঘটনা শহরে ছড়িয়ে পড়ে। কলেজ মসজিদের পাশে মিলন ফার্মেসির সামনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এটি প্রতিরোধ করতে গেলে হামলাকারীরা গুলি করে। সেখানে দীপ্ত সাহা গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে গোপালগঞ্জ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

মোবাইল ব্যবসায়ী সোহেল রানা মোল্লা নিহতের ঘটনায় বাদী হয়ে মামলা করেছেন একই থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবুল কালাম আজাদ। আসামি করা হয়েছে ১ হাজার ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে। মামলায় তিনি উল্লেখ করেছেন, লঞ্চঘাট এলাকায় হোটেল রাজের সামনে আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী ও দুষ্কৃতকারীরা এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতাদের ওপর হামলা চালায়। পুলিশ ও সেনাবাহিনী এগিয়ে এলে তাদের লক্ষ্য করে গুলি চালায় তারা। এ সময় সোহেল রানা মোল্লা (৩০) মারাত্মক আহত হন। তাঁকে উদ্ধার করে গোপালগঞ্জ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

অপরদিকে সদর থানা-পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) শেখ মিজানুর রহমান বাদী হয়ে ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে ইমন তালুকদার হত্যায় মামলা করেছেন।

মামলায় তিনি উল্লেখ করেছেন, ঘটনার দিন ১৬ জুলাই আসামিরা শহরের পুরোনো সোনালী ব্যাংকের সামনে এনসিপির গাড়িবহরে হামলা করে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এতে বাধা দিলে দুষ্কৃতকারী আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা গুলি করেন। গুলিবিদ্ধ হয়ে ইমন তালুকদার আহত হন। পরে হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করে গোপালগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মির মো. সাজেদুর রহমান বলেন, ‘পাঁচজন নিহতের ঘটনায় চারটি মামলা করা হয়েছে। আরও একটি মামলা রাতে হবে। তিনটি মামলায় আসামি করা হয়েছে ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ জন করে। এর একটি মামলায় আসামি করা হয়েছে ৮০০ থেকে ৯০০ জনকে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত