Ajker Patrika

সুবর্ণচরে শিশুকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ, সালিসে ৩ লাখ টাকায় রফা

সুবর্ণচর (নোয়াখালী) প্রতিনিধি 
আপডেট : ১৯ জুলাই ২০২৫, ১৬: ৪৫
প্রতীকী ছবি।
প্রতীকী ছবি।

নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলার চরবাটায় এক শিশুকে (৯) ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় এক প্রভাবশালী ব্যক্তির বিরুদ্ধে। এ ঘটনার পর থানায় অভিযোগ না করে এলাকার প্রভাবশালী বিএনপি নেতা ও তাঁর অনুসারীদের তত্ত্বাবধানে সালিসে বিষয়টি ১০ বেত্রাঘাত, চড়-থাপ্পড় ও তিন লাখ টাকার বিনিময়ে রফা করা হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।

গত মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) বিকেলে চরবাটা ইউনিয়নের খাসেরহাট বাজারে এ সালিস বৈঠক হয়। এদিকে ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর এলাকায় ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

অভিযুক্ত হেলাল উদ্দিন একই এলাকার বাসিন্দা।

স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, অভিযুক্ত হেলাল উদ্দিন তাঁর নাতনিকে স্থানীয় খুরশিদিয়া নূরানী ইসলামিয়া মাদ্রাসা থেকে আনতে গিয়ে ভুক্তভোগী শিশুকে একা পেয়ে ২০ টাকা দেন। তারপর ধর্ষণের চেষ্টা করলে মেয়েটি চিৎকার দিয়ে বাড়ি চলে আসে এবং তার মাকে বিষয়টি জানায়। ঘটনার পরপরই শিশুটির পরিবার আইনের আশ্রয় নিতে চাইলে খাসেরহাট বাজারের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ও ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সহসভাপতি মো. আব্দুর রহমান খোকন থানা-পুলিশকে না জানানোর পরামর্শ দেন। পরে স্থানীয় কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে সালিস বৈঠক বসিয়ে ১০ বেত্রাঘাত, চড়-থাপ্পড় ও তিন লাখ টাকার বিনিময়ে ঘটনাটি ধামাচাপা দেন।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত হেলাল উদ্দিন বলেন, `আমার ওপর জুলুম করা হয়েছে। একটা মিথ্যা ঘটনাকে আমার ওপর চাপিয়ে দিয়ে আমাকে সামাজিকভাবে হেয় করা হয়েছে, যা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। আমি মানসিকভাবে অসুস্থ, তাই চিকিৎসার জন্য নোয়াখালীর বাইরে এসেছি। বিএনপি নেতা খোকন কাউকে না জানিয়ে নিজে নিজে এমন সালিস করেছে। সে এটা করতে পারে না।’

হেলাল উদ্দিনের স্ত্রী জোবায়দা বেগম বলেন, `আমার স্বামী সিএমএইচে ভর্তি আছে। তাঁকে পরিকল্পিতভাবে এমন ন্যক্কারজনক ঘটনায় অভিযুক্ত করা হয়েছে। তিনি যদি অন্যায় করতেন, তাহলে আমাদের সমাজের লোকজন আছে, তাদের বলত, কিন্তু কেন আঘাত করা হলো? আঘাতের কারণে তিনি সেখানে বমি করে দিয়েছেন।’

এদিকে সালিসের বিষয়টি অস্বীকার করেন খাসেরহাট বাজারের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ও ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সহসভাপতি মো. আব্দুর রহমান খোকন। তিনি বলেন, `এমন সালিস আমাদের এলাকায় হয়নি এবং এমন ঘটনাই এলাকায় ঘটেনি।’

সালিসের সত্যতা নিশ্চিত করে চরবাটা ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান মো. গোলাম মাওলা বলেন, `শিশুটিকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে সবার সর্বসম্মতিক্রমে ৩ লাখ টাকা ও ১০ বেত্রাঘাত দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।’

এদিকে সালিসে উপস্থিত থাকার বিষয়টি স্বীকার করেছেন সুবর্ণচর উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা জামাল উদ্দিন। তিনি বলেন, `আমি আসরের নামাজ পড়তে যাওয়ার সময় খোকন ভাই আমাকে বসতে বলেছেন। আমি সালিসে ছিলাম। তবে বেশি কিছু আমি জানি না।’

চরজব্বর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহিন মিয়া বলেন, `ভুক্তভোগী পরিবারের কাছ থেকে এমন কোনো অভিযোগ এখনো পাইনি। অভিযোগ পেলে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত